মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

ষোড়শ অধ্যায়

                         ষোড়শ অধ্যায়
                =দৈবাসুর=সম্পদ=বিভাগ=যোগ=
                        =ভগবান=উবাচ=
        অভয়ম্‌ সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ জ্ঞান যোগ ব্যবস্তিতিঃ ॥
        দানম্‌ দমঃ চ যজ্ঞঃ চ সাধ্যায় তপ আর্জবম্‌ ॥১॥

        অহিংসা সত্যম্‌ অক্রোধঃ ত্যাগঃ শান্তি অপৈশুনম্‌ ॥
        দয়া ভূতেষু অলোলুপ্তম্‌ মার্দবম্‌ হ্রীঃ অচাপলম্‌ ॥২॥

        তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ সৌচম্‌ অদ্রোহঃ ন অতিমানিতা ॥
        ভবন্তি সম্পদম দৈবীম্‌ অভিজাতস্য ভারত ॥৩॥
অর্থ-ভগবান বললেন হে ভারত, ভয়শুন্যতা, সত্তার, পবিত্রতা পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশিলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান,বৈদিক শাস্ত্র অধ্যায়ন,তপশ্চর্যা, সরলতা,অহিংসা,সত্যবাদিতা,ক্রোধশুন্যতা,বৈরাগ্য, শান্তি ,অন্যের দোশদর্শন না করা,দয়া,লোভহীনতা,মৃদুতা,অসত্ চিন্তা ও অসত্ কর্ম লজ্জা, অচপলতা,তেজ,ক্ষমা, ধৈর্য,শৌচ,মত্সর্য শুন্যতা, অনভিমান এই সমসত গুনগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

        দম্ভঃ দর্পঃ অভিমান চ ক্রোধঃ পারুষ্যম্‌ এব চ ॥
        অজ্ঞানাম্‌ চ অভিজাতস্য পার্থ সম্পাদম্‌ আসুরীম্‌ ॥৪॥
অর্থ-হে পার্থ যারা আসুরি ভাব নিয়া জন্মগ্রহন করেছেন, দম্ভ, দর্প,অহংঙ্কার, ক্রোধ, বাক্য এবং ব্যবহরে কর্কশভাব্‌ এবং অবিবেক এই সমস্ত অসত্ ভাব তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয়।

        দৈবী সম্পত্ বিমোক্ষায় নিবন্ধায় আসুরী মতা ॥
        মা শুচঃ সম্পাদম্‌ দৈবীম্‌ অভিজাত অসি পান্ডব ॥৫॥
অর্থ-দৈবী গুনাবলী মূক্তির অনুকুল আর আসুরীক গুনাবলী সংসার বন্ধনের কারন। হে পান্ডুপুত্র তুমি শোক করোনা কারন তুমি দৈবী গুনাবলীতে বিভূষিত হয়ে জন্ম গ্রহন করেছ।

        দৌঃ ভূতসর্গৌ লোকে অস্মিন দৈব আসুর এব চ ॥
        দৈব বিস্তরশঃ প্রোক্তঃ আসুরম্‌ পার্থ মে শৃনু ॥৬॥
অর্থ-হে পার্থ এজগতে দেব স্বভাব প্রাণীদের কথা বিস্তারিত ভাবে বর্ননা করেছি। এখন আসুরীক স্বভাব বিশিষ্ট প্রাণীদের কথা শ্রবন কর।

        প্রবৃত্তিম্‌ চ নিবৃত্তিম্‌ চ জনাঃ ন বিদুঃ অসুরাঃ ॥
        নশৌচম্‌ ন অপি চ আচারঃ ন সত্যম্‌ তেষু বিদ্যতে ॥৭॥
অর্থ-অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয় প্রবৃত্ত হতে জানে না এবং অধর্ম বিষয়ে থেকেও নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের শৌচ নেই সদাচার নেই এবং সত্যও নেই।
        অসত্যম অপ্রতিষ্ঠম তে জগত্ আহুঃ অনীশ্বরম্‌ ॥
        অপস্পর সম্ভুতম্‌ কিমন্যত্ কাম হৈতুকম্‌ ॥৮॥
অর্থ-অসুর স্বভাক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে এই জগত্ মিথ্যা অবলম্বন হীন এবং অবিনশ্বর কাম বশত স্ত্রীপুরুষের সংযোগেই এই জগত্ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছারা অন্য কেন কারন নাই।


এতাম্‌ দৃষ্টিম্‌ অবষ্টভ্য নষ্ট আত্মনঃ অল্পবুদ্ধয় ॥
প্রভবন্তি উগ্রকর্মাণ ক্ষয়ায় জগতঃ অহিত্বাঃ ॥৯॥
অর্থ-এই প্রকার সিন্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্তহীন অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন উগ্রকর্মা অসুরস্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জগত্ ধংসকারি কার্যে নিয়োজিত থাকে।

        কামম্‌ আশ্রিত্য দুঃস্পুরম্‌ দম্ভ মান মদান্বিতাঃ ॥
         মোহাত্ গৃহীত্বা অসত্ গ্রাহান প্রবর্তন্ত অশুচি ব্রতাঃ ॥১০॥
অর্থ-তাদের হৃদয় দুঃস্পুরনীয় বাসনায় পুর্ন। দম্ভ মান ও মদযুক্ত হয়ে তারা অশুচি  কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহ বশতঃ অসৎ বিষয় প্রবৃত্ত হয়।

        চিন্তাম্‌ অপরিমেয়াম্‌ চ প্রলয়ান্তাম্‌ উপাশ্রিতাঃ
        কামোপভোগ পরমাঃ এতাবত্ ইতি নিশ্চিতাঃ ॥১১॥

        আশাপাশ শতৈঃ বদ্ধাঃ কাম ক্রোধ পরায়ণাঃ ॥
        ঈহনতে কাম ভোগ অর্থম্‌ অন্যায়েন অর্থ সঞ্চয়ন ॥১২॥
অর্থ-মৃত্যুকাল পর্যনত ইন্দ্রিয় সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের উদ্বেশ্য বলে মনে করে। অপরিমেয় দুঃখ দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহন অসংখ্য আশাপাপে আবদ্ধ হয় এবং কাম ক্রোধের অদীন হয়ে তারা বিষয় ভোগের জন্য নানা রকম অসৎ উপাত্ অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে।

        ইদম্‌ অদ্য ময়া লব্ধম্‌ ইমম্‌ প্রাপস্যে মনোরথম্‌ ॥
        ইদম্‌ অস্তি ইদম্‌ অপি মে ভবিষ্যতি  পুনঃ ধনম্‌ ॥১৩॥

        অসৌ ময়া হতঃ শত্রুঃ হনিষ্যে চ অপরান অপি ॥
        ঈশ্বর অহম্‌  অহম্‌ ভোগী সিদ্ধঃ অহম্‌ বলবান সুখী ॥১৪॥

        আঢ্যঃ অভিজনবান অস্মি কঃ অন্য অস্তি সদৃশ্যঃ ময়া ॥
        যক্ষ্যে দাস্যামি মোদিস্যে ইতি অজ্ঞান বিমেহিতাঃ ॥১৫॥

        অনেক চিত্তবিভ্রান্তঃ মোহ জাল সমাবৃতাঃ ॥
        প্রসক্তাঃ কাম ভোগেষু পতন্ত নরকে অশুচৌ ॥১৬॥
অর্থ-অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা মনেকরে আজ আমার এত লাভ হল এবং ভবিষ্যতে আমার পরি কল্পনা অনুসারে আরো লাভ হবে।এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আর ধন হবে এবং সে আমার শত্রু এবং আমি তাকে নাশ করেছি এবং অন্যান্য শত্রুদের আমি নাশ করব। আমিই ঈশ্বর আমি ভোক্তা আমি সিদ্ধ, বলবান এবং সুখী। আমি সব চেয়ে ধনবান, এবং অভিজাত আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত। আমার মত বলবান এবং সুখী আর কেউ নাই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব। আমি দান করব, এবং আনন্দ করব। এই ভাবে অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়। নানা প্রকার দুঃশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজরিত হয়ে কামভোগে আসক্ত চিত্ত অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়।
        আত্মসম্ভাবিতাঃ স্তব্ধাঃ ধনমান মদান্বিতা ॥
        যজন্তে নাম যজ্ঞৈঃ তে দম্ভেন অবিধিপুর্বকম্‌ ॥১৭
অর্থ-সেই আত্মাভিমানী অনম্র ও ধনবান ও মদান্বিতা ব্যক্তিরা অবিধিপুর্বক দম্ভ সহকারে নাম মাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।

    অহংঙ্কারম বলম্‌ দর্পম্‌ কামম্‌ ক্রোধম্‌ চ সংশ্রিতা ॥   
    মাম আত্মা পরদেহেষু প্রদ্বিষ্যন্তে অভ্যসুয়কা ॥১৮॥
অর্থ-অহংঙ্কার, বল, দপর্, কাম ও ক্রোধের দ্বারা বিমোহিত হয়ে অসুর স্বভাব ব্যক্তিরা স্বীয় দেহে এবং পরদেহে অবস্তিত পরমেশ্বর স্বরুপ আমাকে দ্বেষ করে এবং প্রকৃত ধর্মের নিন্দা করে।

        তান অহম দ্বিষতঃ ক্রুরান সংসারেষু নরাধমান্‌ ॥
        ক্ষিপামি অজস্রম্‌ অশুভান  আসুরীষু এব যোনিষু ॥১৯।।
অর্থ-সেই বিদ্বেষী ক্রুর নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে পুনঃ পুনঃ নিক্ষেপ করি।

        আসুরীম্‌ যোনিম্‌ আপন্নাঃ মুঢ়া জন্মানি জন্মানি ॥
        মাম্‌ অপ্রাপ্য এব কৌন্তেয় ততঃ যান্তি অধমাম্‌ গতিম্‌ ॥২০॥
অর্থ-হে অর্জুন অসুর যোনি প্রাপ্ত হয়ে সেই মুঢ় ব্যক্তিরা জন্মে জন্মে আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।

        ত্রিবিধম্‌ নরকস্য ইদম্‌ দ্বারম্‌ নাশনম্‌ আত্মনঃ ॥
        কামক্রোধঃ ততঅ লোভঃ তস্মাত্ এতত্ ত্রয়ম্‌ ত্যাজেত্ ২১॥
অর্থ-কাম ক্রোধ এবং লোভ এই তিনটি নরকের দ্বারস্বরুপ। অতএব উত্তম ব্যক্তিরা এই তিনটি পরিত্যাগ করেন কারন এগুলি আত্মাকে অধঃগামী করে।

        এতৈঃ বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমোদ্বারৈঃ ত্রিভিঃ নরঃ ॥
        আচরিত আত্মনঃ শ্রেয় ততঃ যাতি পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২২॥
অর্থ-হে কৌন্তেয় এই তিন প্রকার তমদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরন করবে,তা হলেই পরাগতি লাভ করতে পারবে।
        যঃ শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য বর্ততে কামকারত ॥
        ন সঃ সিদ্ধিম্‌ অবাপেনাতি ন সুখেন ন পরাম্‌ গতিম্‌ ॥২৩॥
অর্থ-কিন্তু শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে যে কামাচারে বর্তমান থাকে সে সিদ্ধি বা সুখ বা পরা গতীলাভ করতে পারে না।

        তস্মাত্ শাস্ত্রম্‌ প্রমানম্‌ তে কার্য অকার্য ব্যবস্থিতৌ ॥
        জ্ঞাতা শাস্ত্র বিধান উত্তম্‌ কর্ম কর্তুম্‌ ইহ অর্হসি ॥২৪॥
অর্থ-অতএব কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রিয় বিধি নিষেধের স্বরুপ জেনে কর্ম করা উচিত যাতে পারমার্থিক উন্নতি লাভ করা যায়।

   

সপ্তদশ অধ্যায়


                    সপ্তদশ অধ্যায় 
                শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ           
                   অর্জুন উবাচ
        যে শাস্ত্রবিধিম্‌ উত্সৃজ্য যজন্তে শ্রদ্ধয়া অন্বিতা ।
        তেষাম্‌ নিষ্ট তু কা কৃষ্ণ সপ্তম্‌ অহো রজঃ তমঃ ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন-হে ভগবান যারা শাস্ত্রিয় বিধান পরিত্যাগ করে শ্রদ্ধা সহকারে দেব দেবীর পূজা করে তাদের সেই নিষ্ঠা কি সাত্তিক,রাজসিক না তামসিক।
                     ভগবান উবাচ
        ত্রিবিধা ভবতী শ্রদ্ধা দেহীনাম সা স্বভাবজা ।
        স্বাত্ত্বিকী রাজসী চ এব তামসী চ ইতি তাম শৃণু ।।২
অর্থ-দেহীদের স্বভাবজনিত শ্রদ্ধা তিন প্রকার,সাত্ত্বিক,রাজসীক ও তামসীক।

        সত্ত্বানুরুপা সর্বস্য শ্রদ্ধা ভবতী ভারত ।
        শ্রদ্ধাময়ঃ অময় পুরুষঃ যঃ যত্ শ্রদ্ধা সঃ এব সঃ ।।৩
অর্থ-হে ভারত সকলেই প্রকৃতির মাত্রা অনুযায়ী বিশেষ রকম শ্রদ্ধা যুক্ত হয় যে যেরকম গুনের প্রতি শ্রদ্ধাযুক্ত সে সেইরকম শ্রদ্ধাবান।

        যজন্তে সাত্ত্বিকাঃ দেবান যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ ।
        প্রেতান ভূতাগনান চ অন্যে যজন্তে তামসাঃ জনাঃ ।।৪
অর্থ-সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা দেবতাদের পূজা করে রাজসীক ব্যক্তিরা যক্ষ্য ও রাক্ষসদের পূজা করে এবং তমসিক ব্যক্তিরা ভূত প্রেতদের পূজা করে।

        অশাস্ত্র বিহিতম্‌ ঘোরম্‌ তপন্তে যে তপঃ জনাঃ ।
        দম্ভ অহংঙ্কার সংযুক্তঃ কামরাগ বল অন্বিতাঃ ।।৫
        কর্ষয়ন্ত শরিরস্থম্‌ ভূতগ্রামম্‌ অচেতসঃ ।
        মাম্‌ চ এব অন্ত শরিরস্থম্‌ তান বিদ্ধি আসুর নিশ্চয়ান ।।৬
অর্থ-দম্ভ ও অহংঙ্কার যুক্ত এবং কামনা ও আশক্তির প্রভাবে বলান্বিত হয়ে যে সমস্ত অবিবেকী ব্যক্তিরা তাদের দেহস' ইন্দ্রিয় সমুহকে এবং অন্তরস্থ পরমাত্মাকে কষ্টদিয়ে শাস্ত্র বিরুদ্ধ ঘোর তপস্যার অনুষ্ঠান করে তাদের আসুরিক বুদ্ধিবিশিষ্ট বলে জানবে।
        আহারঃ তু অপি সর্বস্য ত্রিবিধ ভবতী প্রিয়ঃ ।
        যজ্ঞ তপঃ তথা দানম্‌ তেষাম্‌ ভেদম্‌ ইমম্‌ শৃনু ।।৭
অর্থ-প্রকৃতির তিনটি গুন অনুসারে সেই তিন প্রকার মানুষের আহর ও ত্রিবিধ।তেমনই তাদের যজ্ঞ তপস্যা এবং দান ও ত্রিবিধ বলে জানবে।

        অয়ু সত্ত্ব বল আরগ্য সুখ প্রীতি বিবর্ধনা ।
        রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যাঃ আহারাঃ সাত্ত্বিক প্রিয়াঃ ।।৮

        কটু অম্ল লবন অত্যুষ্ণ তীক্ষ্ণ রুক্ষ্য বিদাহীনঃ ।
        আহারাঃ রাজসস্য ইষ্টাঃ দুঃখ শোক আময়প্রদাঃ ।।৯
        যাতষামম ্‌গতরসম পুতি পর্যুষিতম্‌ চ যত্ ।
        উচ্ছিষ্টম্‌ অপি চ অমেধ্যম্‌ ভোজনম্‌  তামস প্রিয়ম্‌ ।।১০
অর্থ-যে সমস্ত আহার আয়ু উদ্যম বল আরগ্য সুখ ও প্রিতি বৃদ্ধি করে এবং সরল স্নিগ্ধ পুষ্টিকর ও মনোরম সেগুলি সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের প্রিয় হয়। যে সমস্ত আহার দুঃখ্য শোক ও রোগ সৃষ্টি করে এবং অতি তিক্ত অতি অম্ল অতি লবন যুক্ত অতি উষ্ণ অতি তিক্ষ্ণ অতি শুস্ক অতি প্রদাহকর সে গুলি রাজসিকদের প্রিয় হয়। এক প্রহরের অধিক পুর্বে রান্না হওয়ার ফলে যে সমস্ত খাদ্য বাসী হয়ে গেছে যা নিরস অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত পুর্বদিনে রান্না হয়ে পর্যুষিত এবং অপরের উচ্ছিষ্ট দ্রব্য ও অমেধা দ্রব্যসকল তামসিক লোকের প্রিয়।

        অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ যজ্ঞঃ বিধি দিষ্টঃ যত্ ইজ্যতে ।
        যষ্টব্যম্‌ এবম্‌ ইতি মনঃ সমাধায় সঃ সাত্ত্বিকঃ ।।১১
অর্থ-কোন রকম ফলের আশা না করে , শাস্ত্রের বিধি অনুসারে কর্তব্য বোধে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত তা সাত্ত্বিক যজ্ঞ।

        অভিসন্ধায় তু ফলম্‌ দম্ভ অর্থম্‌ অপি চ এব যত্ ।
        ইজ্যতে ভরতশ্রেষ্ঠ তম্‌ যজ্ঞম্‌ বিদ্ধি রাজসম্‌ ।।১২
অর্থ-হে ভরতশ্রেষ্ঠ জাগতিক লাভের আশায় ফল কামনা করে দম্ভ প্রকাশের জন্য যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় তাকে রাজসিক বলে জানবে।

                          বিধিহীনম্‌ অসৃষ্টন্নম্‌ মন্ত্রহীনম্‌ অদক্ষিনম্‌ ।
        শ্রদ্ধাবিরহিতম্‌ যজ্ঞম্‌ তামসম্‌ পরিচক্ষতে ।।১৩
অর্থ-শাস্ত্রবিধি বর্জিত প্রসাদান্ন বিতরণহীন শন্ত্রহীন শ্রদ্ধারহিত যজ্ঞকে তামসিক যজ্ঞ বলা হয়।

                দেব দ্বিজ গুরু প্রাজ্ঞ পূজনম্‌ শৌচম্‌ আর্জবম ।
                         ম্ব্র্রহ্মচর্যম্‌ অহিংসা চ শরিরম তপঃ উচ্চতে ।।১৪
অর্থ-পরমেশ্বর ভগবান ব্রাহ্মন গুরুজন ও প্রাজ্ঞগনের পূজা এবং শৌচ সরলতা ব্রহ্ম চর্য্যা ও অহিংসা এইগুলিকে কায়িক তপস্যা বলে।

        অনুদ্বেগ করম্‌ বাক্যম্‌ সত্যম্‌ প্রিয় হিতম্‌ চ যত্ ।
        স্বাধ্যায় অভ্যসনম্‌ চ এব বাঙ্ময়ম্‌  তপঃ উচ্যতে ।।১৫
অর্থ-অনুদ্বেগকর সত্য প্রিয় অথচ হিতকর বাক্য এবং বেদাদি শাস্ত্র পাঠ করাকে বাচিক তপস্যা বলে।

        মনঃপ্রসাদঃ সৌম্যত্বম্‌ মৌনম্‌ আত্মবিনিগ্রহঃ ।
        ভাবসংশুদ্ধিঃ ইতিএতত্ তপঃ মানসম্‌ উচ্যতে ।।১৬
অর্থ-চিত্তের প্রসন্নতা সরলতা মৌন আত্মনিগ্রহ ব্যবহারে ছলনা রাহিত্য এইগুলিকে মানুষিক তপস্যা বলে।

        শ্রদ্ধায় পরয়া তপ্তম্‌ তপঃ তত্ ত্রিবিধম্‌ নরৈঃ ।
        অফলা কাঙ্খিভিঃ যুক্তৈঃ সাত্ত্বিকম্‌ পরিচক্ষতে ।১৭
অর্থ-নিস্কাম ব্যক্তির দ্বারা পরমেশ্বর ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে যখন এই ত্রিবিধ তপস্যা অনুষ্ঠিত হয়, তাকে সাত্ত্বিক তপস্যা বলা হয়।

         সত্কার মান পূজার্থম তপঃ দম্ভেন চ এব যত্ ।
        ক্রিয়তে তত্ ইহ প্রোক্তম্‌ রাজসম্‌ চলম্‌ অধ্রুবম্‌ ।।১৮
অর্থ-প্রসাংসা সন্মান পুজা পাওয়ার আশায় দম্ভ সহকারে যে তপস্যা করা হয় তা অনিত্য ও অনিশ্চিত রাজসিক তপস্যা।

        মুঢ় গ্রাহেন আত্মনঃ যত্ পীড়য়া ক্রিয়তে তপঃ ।
        পরস্য উত্সাদনার্থম্‌ বা তত্ তামসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।১৯
অর্থ-মুঢ় ব্যক্তির প্রভাবে নিজেকে কষ্টদিয়ে বা অপরের বিনাশের জন্য যে তপস্যা করা হয় তাকে তামসিক তপস্যা বলে।

        দাতব্যম্‌ ইতি যত্ দানম্‌ দীয়তে অনুপকারিণে ।
        দেশে কালে চ পাত্রে চ তত্ দানম্‌ সাত্ত্বিকম্‌ স্মৃতম্‌ ।।২০
অর্থ-দানকরা কর্তব্য বলে মনে করে প্রত্যুপকারের আশা না করে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত সময় উপযুক্ত পাত্রে যে দান করা হয় তাকে সাত্ত্বিক  দান বলে।

        যত্ তু প্রত্যুপকারার্থ ফলম্‌ উদ্দিশ্য বা পুন ।
        দীয়তে চ পরিক্লিষ্টম্‌ তত্ দানম্‌ রাজসম্‌ স্মৃতম্‌ ।।২১

        অদেশ কালে যত্ দানম্‌ অপাত্রেভ্যঃ চ দীয়তে ।
        অসত্কৃতম্‌ অবজ্ঞাতম্‌ তত্ তামসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।২২
অর্থ-যে দান প্রত্যুপকারের আশা করে বা সর্গাদির লাভের উদ্দেশে এবং অনিচ্ছা সত্ত্বে করা হয়,তাকে রাজসিক দান বলে। অশুচি স্থানে অশুভ সময় অযোগ্য পাত্রে অবজ্ঞা সহকারে,এবং অনাদরে যে দান করা হয় তাকে তামসিক দান বলে।

        ওঁং তত্ সত্ ইতি নির্দশঃ ব্রাহ্মণঃ ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ ।
           ব্রাহ্মণাঃ তেন বেদাঃ চ যজ্ঞাঃ চ বিহিতাঃ পুরা ।।২৩
অর্থ-সৃষ্টির আদিতে ওঁ তত্ সত্ এই শব্দ দ্বারা পরমেশ্বর ভগবানের ত্রিবিধ নাম নিদৃষ্ট হয়েছে। যজ্ঞকর্তা ব্রাহ্মনেরা যজ্ঞ অনুষ্ঠান  সময় ভগবানের সন'ষ্টির জন্য তা উচ্চারন করতেন।

        তস্মাত্ ওঁ ইতি উদাহৃত্য যজ্ঞ্য দান তপঃ ক্রিয়াঃ ।
        প্রবর্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততম্‌ ব্রহ্মবাদিনাম্‌ ।।২৪
অর্থ-সেই হেতু পরমার্থিবাদিরা পরমেশ্বর ভগবানকে লাভ করার জন্য ওঁ শব্দ ব্যবহার পুর্বক যজ্ঞ দান তপস্যা এবং ক্রিয়া অনুষ্ঠান করেন।

        অদিতি অনভিসন্ধায় ফলম্‌ যজ্ঞ তপঃ ক্রিয়াঃ ।
        দান ক্রিয়া চ বিবিধাঃ ক্রিয়ন্তে মোক্ষকাঙ্ক্ষিভিঃ ।।২৫
অর্থ-তত্ এই শব্দ উচ্চারন করে মূমূক্ষু ব্যক্তিরা ফলের আকাঙ্ক্ষা না করে নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা, দান আদি কর্মের অনুষ্ঠান করেন।


        সদ্ভাবে সাধুভাবে চ সত্ ইতি এতত্ প্রজুয্যতে ।
        প্রশস্তে কর্মণি তথা সচ্ছব্দঃ পার্থ যুজ্যতে ।।২৬

        যজ্ঞে তপসি দানে চ স্থিতিঃ সত্ ইতি চ উচ্যতে ।
        কর্ম চ এব তত্ অর্থিয়ম্‌ সত্ ইতি এব অভিধিয়তে ।।২৭
অর্থ-হে পার্থ সত্ভাবে ও সাধুভাবে সম্পাদন করার জন্য সত্ এই তৃতীয় ব্রহ্ম বাচক শব্দটি প্রযুক্ত হয়। যজ্ঞ ,তপস্যা, ও দানেও পরমেশ্বর ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের জন্য যে তা অনুষ্ঠিত হয়েছে তা নির্দেশ করার জন্য সত্ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
        অশ্রদ্ধয়া হুতম্‌ দত্তম্‌ তপঃ তপ্তম্‌ চ উচ্যতে ।
        অসত্ ইতি উচ্যতে পার্থ ন চ তত্ প্রেত্য ন ইহ ।।২৮
অর্থ-হে পার্থ পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধাপরায়ন না হয়ে যেদান বা তপস্যা অনুষ্ঠিত হয় তা অসত্।সেইসস্ত ক্রিয়া ইহকাল ও পরকাল কোন কালেই উপকারে আসেনা বা উপকার করে না।
                   

অষ্টাদশ অধ্যায়

             অষ্টাদশ অধ্যায়
                                   মোক্ষ যোগ
                                   অর্জুন উবাচ
        সন্নাসস্য মহাবাহো তত্তুম্‌ ইচ্ছামি বেদিতুম্‌ ।
        ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক কেশিনিসুদন ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন- হে মহাবাহো, হৃষিকেশ হে কেশিনিসুদন আমি সন্নাস ও ত্যাগ শব্দের তত্ত্ব পৃথক পৃথক ভাবে জানতে ইচ্ছা করি।


                                   ভগবান উবাচ
        কাম্যানাম্‌ কর্মনাম্‌ ন্যাসম্‌ সন্নাসম্‌ কবয়ঃ বিদুঃ ।
        সর্ব কর্ম ফল ত্যাগম্‌ প্রাহুঃ ত্যাগম বিচক্ষনাঃ ।।২
অর্থ-ভগবান বললেন সম কর্মের ফল ত্যাগকে বিচক্ষন ব্যক্তিগন ত্যাগবলেন এবং কাম্য কর্মের পরিত্যাগকেই পন্ডিতগন সন্নাস বলে।

        ত্যাজ্যম্‌ দোশবত্ ইতি একে কর্ম প্রাহুঃ মনিষিণঃ ।
        যজ্ঞ দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজ্যম্‌ ইতি চ অপরে ।।৩
অর্থ-ত্যাগ সম্বন্ধে একশ্রেনীর পন্ডিতেরা এরুপ স্থির করেছেন যে,কর্মকে দোষ বলে একেবারে ত্যাগ করবে, অপর এক শ্রেণীর পন্ডিত যজ্ঞ,দান,তপস্যা প্রভৃতি কর্মকে অত্যাজ্য বলে সিদ্ধান্ত করেছে।

        নিশ্চয়ম্‌ শৃনু মে অত্র ত্যাগে ভরতম্‌ ।
        ত্যাগ হি পুরুষব্যাগ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্তিতঃ ।।৪
অর্থ-হে ভরত সত্তম্‌ ত্যাগ সম্বন্ধে আমার সিদ্ধান্ত শ্রবন কর, হে পুরুষ ব্যাগ্র শাস্ত্রে ত্যাগও তিন প্রকার বলে কীর্তিত হয়েছে।

        যজ্ঞ দান তপঃ কর্ম ন ত্যাজম্‌ কার্যম্‌ এব তত্ ।
        যজ্ঞ দানম্‌ তপঃ চ এব পাবনানি মনীষিণাম্‌ ।।৫
অর্থ-যজ্ঞ, দান, তপস্যা কখনো ত্যাগ করা ইচিত নয় যজ্ঞ দান এবং তপস্যা মনীষীদের পর্য্যন্ত পবিত্র করে।


        এতানি অপি তু কর্মানি সঙ্গম্‌ ত্যক্তা ফলানি চ ।
        কর্তব্যানি ইতি মে পার্থ নিশ্চিতম্‌ মতম্‌ উত্তমম্‌ ।।৬
অর্থ-আশক্তি ও ফেেলর আশা ত্যাগ করে কর্তব্য বোধে এই সমস্ত কর্ম অনুষ্ঠান করা উচিত্। ইহাই আমার সিদ্ধান্ত।

        নিয়তস্য তু সন্নাসঃ কর্মনঃ ন উপপদ্যতে ।
        মোহাত্ তস্য পরিত্যাগঃ তমসঃ পরিকীর্তিত ।।৭
অর্থ-নিত্ত কর্ম অবশ্য কর্তব্য, কখনোই ত্যাগ করা উচিত্ নয়, মোহ বশত কেউ যদি নিত্ত কর্ম ত্যাগ করে, তা হলে তাকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়।

        দঃখম্‌ ইতি এব যত্ কর্ম কায় ক্লেশ ভয়াত্ ত্যজেত্ ।
        স কৃত্বা রাজসম্‌ ত্যাগম্‌ ন এব ত্যাগ ফলম্‌ লভেত্ ।।৮
অর্থ-যিনি নিত্ত কর্মকে ক্লেশকর বলে মনে করেন, সেই ত্যাগ রাজস ত্যাগ, তার ফল কখনো ত্যাগের ফল লাভ হয় না।

        কার্যম্‌ ইতি এব চ যত্ কর্ম নিয়তম্‌ ক্রিয়তে অর্জুন ।
        সঙ্গম্‌ ত্যাক্তা ফল চ এব সঃ ত্যাগৈঃ সাত্ত্বিক মতঃ ।।৯
অর্থ-হে অর্জুন যিনি কর্তব্য বোধে নিত্ত কর্ম অনুষ্ঠান করেন এবং সেই কর্মের আশক্তি ও ফল পরিত্যাগ করেন, তার ত্যাগ সাত্ত্বিক।

        ন দ্বেষ্টি অকুশলম্‌ কর্ম কুশলেন অনুষজ্জতে ।
        ত্যাগী সত্ত্ব সমাবিষ্টঃ মেধাবী ছিন্ন সংশয় ।।১০
অর্থ-যারা সত্ত্বগুনে অবস্থিত যারা অশুভ কর্মে বিদ্দেশ করেন না এবং শুভ কর্মে অনাশক্ত হয় না সেই প্রকার মেধাবী ব্যাক্তির কর্ম সম্বন্ধে কোন সংশয় নাই।

        ন হি দেহভূতা শক্যম্‌ ত্যক্তুম্‌ কর্মানি অশেষতঃ ।
        যঃ তু কর্ম ফল ত্যাগী সঃ ত্যাগী ইতি অভিধিয়তে ।।১১
অর্থ-দেহধারী জীবের সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়, তাই যিনি সমস্ত কর্মের ফল পরিত্যাগ করেন তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী।

        অনিষ্টম ইষ্টম মিশ্রম্‌ চ ত্রিবিধম্‌ কর্মনঃ ফলম্‌ ।
        ভবতী অত্যাগীনাম্‌ প্রেত্য ন তু সন্নাসি নাম্‌ কচিত্ ।১২
অর্থ-যারা কর্মফল ত্যাগ করেনি তাদের অনিষ্ট ইষ্ট ও মিশ্র এই তিন প্রকার কর্ম ফল ভোগ হয়। কিন্তু সন্নাসিদের উক্ত ত্রিবিধ ফল ভোগ করতে হয় না।

        পঞ্চ এতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে ।
        সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্ব কর্মনম্‌ ।।১৩
অর্থ-হে মহাবাহো বেদান্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে কর্ম সমুহের সিদ্ধির উদ্দেশ্যে পাচটি কারন নির্দিষ্ট হয়েছে তা আমি বলছি শ্রবন কর।

        অধিষ্ঠানম্‌ তথা কর্তা করনম্‌ চ পৃথগবিধম্‌ ।
        বিবিধঃ চ পৃথক চেষ্টাঃ দৈবম্‌ চ এব অত্র পঞ্চমম্‌ ।।১৪
 অর্থ-অধিষ্ঠান, কর্তা, ইন্দ্রিয়সমুহ,প্রচেষ্টা এবং চরমে পরমাত্মা এই পাচটি হল কর্মের হেতু।

        শরির বাক্‌ মনোভিঃ যত্ কর্ম প্রারাভতে নরঃ ।
        ন্যয্যম্‌ বা বিপরীতম্‌ বা পঞ্চ এতে তস্য হেতবঃ ।।১৫
অর্থ-শরির বাক্য মন দ্বারা মানুষ কার্য করে,তা ন্যায্যই হোক আর অন্যায্যই হোক উক্ত পঞ্চবিধ কারণ দ্বারাই সাধিত হয়।

        তত্র এবম্‌ সতি কর্তারম্‌ আত্মনম্‌ কেবলম্‌ তু যঃ ।
        ঈশ্যতি অকৃতবুদ্ধিত্বাত্ ন সঃ পশ্যতি দুর্মতি ।।১৬
অর্থ-যে কর্মের পাচটি কারনের কথা বিবেচনা না করে নিজকে কর্তা বলে মনে করে সে অবশ্যই নির্বোধ এবং দুর্মতি, সে যথাযথভাবে দর্শন করতে পারে না।

        যস্য ন অহংকৃত ভাবঃ বুদ্ধি যস্য ন লিপ্যতে ।
        হত্বাপি সঃ ইমান লোকান ন হন্তি ন নিবধ্যতে ।।১৭
অর্থ-আমি কর্তা এই অভিমান যার নাই যার বুদ্ধি কর্মফলে লিপ্ত হয়না, তিনি জগতের সমসত প্রাণী হত্যা করলেও হত্যাকারি হয়না বা হত্যার ক্রিয়া ফলে আবদ্ধ হয়না।
        জ্ঞানম্‌ জ্ঞেয়ম্‌ পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্ম চোদনা ।
        কারনম্‌ কর্ম কর্তা ইতি ত্রিবিধা কর্ম সংগ্রহ ।।১৮
অর্থ-জ্ঞান, জ্ঞেয়, পরিজ্ঞাতা এই তিনটি কর্মের প্রেরনা,তারণ কর্ম ও কর্তা তিনটিই কর্মের আশ্রয়।

        জ্ঞানম্‌ কর্ম চ কর্তা চ ত্রিধা এব গুনভেদতঃ ।
        প্রোচ্যতে গুন সংখ্যানে যথাবত্ শৃনু তানি অপি ।।১৯
অর্থ-প্রকৃতির তিনটি গুন অনুসারে জ্ঞান কর্ম ও কর্তা তিন প্রকার। সেই ভেদসমুহ আমি বলছি, যথযথভাবে শ্রবন কর।
        

        সর্বভুতেষু যেন একম্‌ ভাবম্‌ অব্যয়ম্‌ ঈক্ষ্যতে ।
        অবিভক্তম বিভক্তেষু তত্ জ্ঞানম্‌ বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্‌ ।।২০
অর্থ-যে জ্ঞানের দ্বারা সমস- প্রণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়,অনেক জীব পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, এই জ্ঞানকে সাত্ত্বিক জ্ঞান বলে।
        পৃথক্তেন তু যজজ্ঞানম্‌ নানাভাবান পৃথগ বিধান ।
        বেত্তি সর্বেষু ভূতেষু তজজ্ঞানম্‌ বিদ্ধি রাজসম্‌ ।।২১
অর্থ-সেই জ্ঞানের দ্বারা বিভিন্ন প্রাণীতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আত্মা অবস্থিত বলে দর্শন হয়। সেই জ্ঞান রাজসিক বলে জানবে।

        যত্ তু কৃত্স্নবত্ একস্মি কার্যে সক্তম্‌ অহৈতুকম্‌ ।
         অতত্ত্বার্থবত্ অল্পম্‌ চ তত্ তামসম উদহৃতম্‌ ।।২২
অর্থ-এবং সেই জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে কোন একটি বিশেষ কাজে তীর্ব আশক্তির উদয় হয়, সেই তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।

        নিয়তম্‌ সঙ্গরহিতম্‌ অরাগদ্বেষতঃ কৃতম্‌ ।
        অফলপ্রেপ্সুনা কর্ম যত্ তত্ সাত্ত্বিকম্‌ উচ্যতে ।।২৩
অর্থ-ফলের আকাঙ্ক্ষা না কাে রাগ ও দ্বেষ বর্জন পুর্বক আশক্তি শুন্য হয়ে যে নিত্ত কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাকে সাত্তিক কর্ম বলে।


        এতত্ তু কামেপ্সুনা কর্ম সাহঙ্কারেন বা পুনঃ ।
        ক্রিয়তে বহুলায়াসম্‌ তত্ রাজসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।২৪
অর্থ-কিন্তু ফলাকাঙ্ক্ষা যুক্ত এবং অহংঙ্কার যুক্ত হয়ে বহু কষ্ট সাধ্যকরে যে কর্মের অনুষ্ঠান হয় সে কর্ম রাজসিক বলে অভিহিত হয়।

        অনুবন্ধন ক্ষয়ম্‌ হিংসাম্‌ অনপেক্ষ চ পৌরুষম ।
        মোহাত্ আরভ্যতে কর্ম যত্ তত্ তামসম্‌ উচ্যতে ।।২৫
অর্থ-ভাবি ক্লেশ ধর্ম জ্ঞানাদির অপচয় হিংসা এই সমস্ত পরিনতির কথা বিবেচনা না করে মোহ বসত যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাকে তমসিক কর্ম বলা হয়।

        মুক্তসঙ্গঃ অনহংবাদী ধৃত্যুত্সাহ সমন্বিতাঃ ।
        সিদ্ধি অসিদ্ধোঃ নির্বিকারঃ কর্তা সাত্ত্বিকঃ উচ্যতে ।২৬
অর্থ-মুক্তসঙ্গ, অহংঙ্কারশুন্য, ধৃতি উত্সাহসমন্বিত এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্বিকার, এই রুপ কর্তাই সাত্ত্বিক।

        রাগী কর্মফল প্রেপ্সু লুব্ধাঃ হিংসত্মকঃ অশুচি ।
        হর্ষ শোকান্বিতাঃ কর্তা রাজসঃ পরিকির্তিতঃ ।।২৭
অর্থ-অত্যন্ত বিষয়াসক্ত কর্মফল লুব্ধ হিংসা প্রিয় অশুচি হর্ষ শোকাদির বশিভূত যে কর্তা সে রাজস কর্তা।

        অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধাঃ শঠঃ নৈস্কৃতিকঃ অলসঃ ।
        বিষাদী দীর্ঘসুত্রী চ কর্তা তামসঃ উচ্যতে ।।২৮
অর্থ-অনুচিত্ কার্যপ্রিয়, জড় চেষ্টাযুক্ত,অনম্র শঠ অপমান কার্যে রত,অলস,সর্বদা বিষাদযুক্ত, দীর্ঘসুত্রী যে কর্তা, সেই তামস কর্তা।

        বুদ্ধেঃ ভেদম্‌ ধৃতে চ এব গুনতঃ ত্রিবিধম্‌ শৃনু ।
        প্রোচ্যমানম্‌ অশেষেন পৃথক্তেন ধনঞ্জয় ।।২৯
অর্থ-হে ধনঞ্জয়, বুদ্ধির ও ধৃতির সত্ত্ব,রজ ও তমোগুন দ্বারা যে ত্রিবিধ ভেদ আছে তা আমি তোমাকে বিস-ারিত বলছি তুমি শ্রবন কর।

        প্রবির্ত্তিম চ নিবৃর্ত্তিম চ কার্য অকার্য ভয় অভয় ।
        বন্ধম্‌ মোক্ষ্যম চ যা বেত্তি বুদ্ধি সা পার্থ সাত্ত্বিকী ।।৩০
অর্থ-যে বুদ্ধির দ্বারা প্রবৃত্তি,নিবৃত্তি কার্য ও অকার্য ভয় ও অভয় বন্ধন ও মুক্তি এই সকলের পার্থক্য নিশ্চিত হয় সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিকী।

        যয়া ধর্মম্‌ অধর্মম্‌ চ কার্যম্‌ অকার্যম্‌ এব চ ।
        অযথাবত্ প্রজানাতি বুদ্ধি সা পার্থ রাজসী ।।৩১
অর্থ-যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম কার্য ও অকার্য প্রভৃতির পার্থক্য অসম্যক রুপে স্থিরীকৃত হয়, সে বুদ্ধি রাজস।
        অধর্মম্‌ ধর্মম ইতি যা মন্যতে তমসা আবৃতা ।
        সর্বার্থান বিপরিতান চ বুদ্ধি সা পার্থ তামসী ।।৩২
অর্থ-হে পার্থ যে বুদ্ধি অজ্ঞান এবং মোহাচ্ছন্ন হয় অধর্মকে ধর্ম বলে মনে করে এবং ধর্মকে অধর্ম বলে মনে করে এবং সব কিছুই বিপরিত ভাবে বোঝেন, তা তামসী বুদ্ধি বলে জানবে।

        ধৃত্যা যয়া ধারয়েতে মনঃ প্রান ইন্দ্রিয় ক্রিয়া ।
        যোগেন অব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ।।৩৩
অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি অব্যভিচারি যোগ দ্বারা মন, প্রান,ইন্দ্রিয় ও ক্রিয়া সকলকে ধারন করে সেই ধৃতিই সাত্ত্বিকী।

        যয়া তু ধর্ম-কামার্থান ধৃত্যা ধারয়তে অর্জুন ।
        প্রসঙ্গেন ফলাকাঙ্ক্ষী ধৃতিঃ সা পার্থ রাজসী ।।৩৪
অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি ফলাকাঙ্ক্ষার সহিত ধর্ম অর্থ ও কামকে ধারন করে তাই রাজসি।
        যয়া স্বপ্নম ভয়ম্‌ শোকম্‌ বিষাদম্‌  মদম্‌ এব চ ।
        ন বিমুঞ্চতি দুর্মেধা ধৃতিঃ সা পার্থ তামসী ।।৩৫
অর্থ-হে পার্থ যে ধৃতি স্বপ্ন ভয় শোক বিষাদ মদ ইত্যাদিকে ত্যাগ করে না সেই বুদ্ধিহীনা ধৃতিই তামসী।
        সুখম্‌ তু ইদানীম ত্রিবিধম্‌ শৃনু মে ভরতর্ষভ ।
        অভ্যাসাত্ রমতে যত্র দুঃখ অন্তম্‌ চ নিগচ্ছতি ।।৩৬
অর্থ-হে ভরতর্ষভ, এখন তুমি ত্রিবিধ সুখের বিষয় শ্রবন কর বদ্ধজীব পুনঃ পুনঃ অনুশিলন দ্বারা সেই সুখে রমন করে, এবং কোন কোন স্থলে সমস্ত দুঃখ থেকে সম্যক রুপে মুক্ত হয়।

যত্ তত্ অগ্রে বিষমিব পরিণামে অমৃত উপমম্‌ ।
        তত্ সুখম্‌ সাত্ত্বিকম্‌ প্রোক্তম্‌ আত্মা বুদ্ধি প্রসাদজম্‌ ।।৩৭
      
অর্থ-যে সুখ প্রথম বিষের মত কিন্তু পরি নামে অমৃততুল্য, আত্মনিষ্ট বুদ্ধির নির্মলতা থেকে উত্পন্ন, সেই সুখ সাত্ত্বিক সুখ বলে কথিত হয়।

        বিষয় ইন্দ্রিয় সংযোগাত্ যত্ তত্ অগ্রে অমৃতপমম্‌ ।
        পরিনামে বিষমিব তত্ সুখম্‌ রাজসম্‌ স্মৃতম্‌ ।।৩৮
অর্থ-বিষয় ইন্দ্রিয়ের সংযোগের ফলে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মত এবং পরিনামে বিষের মত অনুভব হয় তাকে রাজস সুখ বলা হয়।

        যত্ অগ্রে চ অনুবন্ধে চ সুখম্‌ মোহনম্‌ আত্মনঃ ।
        নিদ্রা আলস্য প্রমাদ উত্থম্‌ তত্ তমসম্‌ উদাহৃতম্‌ ।।৩৯
অর্থ-যে সুখ প্রথমে ও পরিনামে আত্মতত্ত্ব জ্ঞানরহিত, এবং যা নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ থেকে উত্পন্ন হয়, তা তামসিক সুখ বলে কথিত হয়।
        ন তত্ অস্তি পৃথিব্যাম্‌ বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ ।
                 সত্ত্বম্‌ প্রকৃতিজৈঃ মুক্তম্‌ যত্ এভিঃ স্যাত্ এিভিঃ গুনৈঃ ।৪০
অর্থ-এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে অথবা স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে এমন কোন জীব নেই যে প্রকৃতির গুন থেকে মুক্ত।                                                    
      
        বাহ্মন ক্ষত্রিয় বিষাম্‌ শুদ্রানাম্‌ চ পরন্তপ ।
        কর্মানি প্রবিভক্তানি স্বভাব প্রভাব প্রভবেঃ গুনৈঃ ।।৪১
অর্থ-হে পরন-প স্বভাবজাত গুন অনুসারে ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এবং শুদ্রেরও কর্ম সমুহ পৃথক ভাবে বিভক্ত আছে।


         শমঃ,দমঃ,তপঃ শৌচম্‌ ক্ষান্তি আর্জবম্‌ এব চ ।
                  জ্ঞানম্‌ বিজ্ঞানম্‌ অস্তিকম্‌ ব্রহ্ম কর্ম সভাবজম্‌ ।।৪২
অর্থ-শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি সরলতা, জ্ঞান,বিজ্ঞান ও আস্তিক্য এই কয়টি ব্রাহ্মনদের স্বভাবজ কর্ম।

        শৌর্যম্‌ তেজঃ ধৃতিঃ দাক্ষ্যম্‌ যুদ্ধে চ অপি অপলায়নম্‌ ।
        আনম্‌ ঈশ্বরম্‌ ভাবঃ চ ক্ষাত্রম্‌ কর্ম স্বভবজম্‌ ।।৪৩
অর্থ-শৌর্য,তেজ,ধৃতি, দক্ষ্যতা,যুদ্ধে অপরাম্মুখতা দানশীলতা ও শাসন ক্ষমতা এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাব জাত কর্ম  ।

        কৃষি গোরক্ষা বানিজ্যম্‌ বৈশ্য কর্ম স্বভাবজম ।
        পরিচর্যা আত্মকম্‌ কর্মঃ শুদ্রস্য অপি স্বভাবজম্‌ ।।৪৪
অর্থ-কৃষি, গোরক্ষা ও বানিজ্য এই কয়টি বৈশ্যের স্বাভাবিক কর্ম। পরিচার্যা শুদ্রের স্বভাবজাত কর্ম।
        স্বে স্বে কর্মানি অভিরত সংসিদ্ধিম্‌ লভতে নরঃ ।
        স্বকর্ম নিরতঃ সিদ্ধিম্‌ যথা বিন্দতি তত্ শৃনু ।।৪৫
অর্থ-স্বকর্মে নিয়ত ব্যক্তি স্বকর্মে অভিরত হয়ে যেভাবে সংসিদ্ধি লাভ করে, তা শ্রবন কর।
        যতঃ প্রবৃত্তিঃ ভূতানাম্‌ যেন সর্বম্‌ ইদম্‌ ততম্‌ ।
        স্বকর্মনা তম্‌ অভ্যর্চ্য সিদ্ধিম্‌ বিন্দতি মানবঃ ।।৪৬
অর্থ-যে পরমেশ্বর ভগবান থেকে সমস্ত জীবের উত্পত্তি, যিনি এই সমগ্র বিশ্ব ব্যপ্ত আছেন, তাকে মানুষ তার কর্মের দ্বারা অর্চনা করে সিদ্ধি লাভ করে।

        শ্রেয়ান স্বধর্ম বিগুনঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্ঠিতাত্ ।
        স্বভাব নিয়তম্‌ কর্ম কুর্বন ন আপ্নোতি কিল্বিষম্‌ ।।৪৭
অর্থ-উত্তম্‌ রুপে অনষ্ঠিত পরধর্ম থেকে অসম্যক রুপে অননিষ্ঠিত স্বধর্ম শ্রেয়। কারন স্বভাব অনুসারে কর্ম করলে মানুষ পাপের ভাগী হয়না।

        সহজম্‌ কর্ম কৌন্তেয় স্বদোষম্‌ অপি ন ত্যজ্যম ।
        সর্বরম্ভা হি দোষেন ধুমেন অগ্নি ইব আবৃতাঃ ।।৪৮
অর্থ-প্রতিটি কর্ম প্রচেষ্টাতেই-কিছুনা কিছু দোষ থাকে, ঠিক যেমন অগ্নি ধুমের দ্বারা আবৃত থাকে। তাই হে কৌন্তেয় দোষযুক্ত হলেও স্বধর্ম কখন ত্যাগ করা উচিত্ না।

                         অসক্তবুদ্ধিঃ সর্বত্র জিতাত্মা বিগতস্পৃহঃ ।
                         নৈস্কর্ম্য সিদ্ধিম্‌ পরমাম্‌ সন্নাসেন অধিগচ্ছতি ।।৪৯
অর্থ-জড় বিষয় অনাসক্ত  সংযতচিত্ত এবং ভোগস্পৃহাশুন্য আত্মজ্ঞ ব্যক্তি       
    স্বরুপত কর্ম ত্যগপুর্বক নৈস্কর্ম রুপ পরম সিদ্ধি লাভ করবে।

        সিদ্ধিম্‌ প্রাপ্ত যথা ব্রহ্ম তথা আপ্নোতি নিবোধ মে ।
        সমাসেন এব কৌন্তেয় নিষ্ঠা জ্ঞানস্য যা পরা ।।৫০
অর্থ-হে কৌন্তে নৈস্কর্ম সিদ্ধি লাভ করে জীব যেমন জ্ঞানের পরানিষ্ঠারুপ ব্রহ্মকে লাভ করেন তা আমি সংক্ষেপে বলছি, শ্রবন কর।

        বুদ্ধ্যা বিশুদ্ধয়া যুক্তঃ ধৃত্যা আত্মা নিয়ম্য চ ।
        শব্দাদীন বিষয়ান ত্যাক্তা রাগ দ্বেষৌ ব্যুদস্য চ ।।৫১

        বিবিক্তসেবী লঘ্যাশী যতবাক কায় মানসঃ ।
        ধ্যানযোগপরঃ নিত্যম্‌ বৈরাগ্যম্‌ সমুপাশ্রিতঃ ।।৫২

        অহংকারম্‌ বলম্‌ দর্পম্‌ কাম ক্রোধম্‌ পরিগ্রহম্‌ ।
        বিমুচ্য নির্মমঃ শান্ত ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ।।৫৩
অর্থ-বিশুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত হয়ে মনকে ধৃতির দ্বারা নিয়ত্রিত করে শব্দ আদি ইন্দ্রিয় বিষয় পরি ত্যাগ করে, রাগ, দ্বেষ বর্জন করে, নির্জন স্থানে বাস করে, অল্প আহার করে, দেহ, মন এবং বাক সংযত করে, ধ্যান যোগে যুক্ত হয়ে বৈরাগ্য আশ্রয় কওে, অহংঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ, পরিগ্রহ থেকে সম্পুর্নরুপে মুক্ত, মমত্ব বোধশুন্য শান্ত পুরুষ আত্মজ্ঞান লাভে সমর্থ হন।



        ব্‌্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।
        সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিম্‌ লভতে পরাম্‌ ।।৫৪
অর্থ-যিনি এই ভাবে চিন্ময় ভাব লাভ করেছেন, তিনি পরম ব্রহ্মকে উপলব্ধি করেছেন। তিনি কখনো কোন কিছুর জন্য শোক করেন না বা কোন কিছুর আকঙ্খা করেন না, তিনি সমস্ত জীবের প্রতি সমদৃষ্টি সম্পন্ন। সেই অবস্থায় তিনি আমার শুদ্ধ ভক্তি লাভ করে।

        ভক্তা মাম অভিজানাতি যাবান যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ ।
        ততঃ মাম তত্ত্বত জ্ঞাত্বা বিশতে তত্ অন্তরম্‌ ।।৫৫
অর্থ-ভক্তির দ্বারা কেবল পরমেশ্বর ভগবানকে পাওয়া যায়। এই প্রকার ভক্তিদ্বারা ভগবানকে যথাযথ ভাবে জানার ফলে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করা যায়।


        সর্ব কর্মানি অপি সদা কুর্বাণঃ মত্ ব্যপাশ্রয়ঃ ।
        মত্ প্রসাদাত্ অবাপ্নোতি শাশ্বতম্‌ পদম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।৫৬
অর্থ-আমার ভক্ত সকল রকম কার্য কলাপে লিপ্ত হওয়া সত্তেও আমার প্রসাদে অব্যয় ও শাশ্বত আমার নিত্য ধাম লাভ করে।

        চেতসা সর্বকর্মানি ময়ি সংনস্য মত্পর ।
        বুদ্ধিযোগম উপাশ্রিত্য মচ্চিত্তঃ সততম্‌ ভব ।।৫৭
অর্থ-তোমার সম্স্ত কর্মে তুমি কেবল আমার উপর নির্ভর কর এবং সর্বদা আমার আশ্রয় অবলম্বন কর। এইভাবে ভক্তি যোগে যুক্ত হয়ে মদ্গত চিত্ত হও।

        মত্ চিত্তঃ  সর্বদুর্গানি মত্ প্রসাদাত্ তরিষ্যসি ।
        অথ চেত্ ত্বম্‌ অহঙ্কারান ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি ।।৫৮
অর্থ-এইভাবে মদ্গত চিত্ত হলে আমার কৃপায়  জড়জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধক থেকে উত্তীর্ন হবে। কিন্তু তুমি যদি তা নাকরে আমার কথা না শুনে, অহংকারের বশীভূত হয়ে কর্ম কর,  তাহলে তুমি বিনষ্ট হবে।
        যত্ অহঙ্কারম্‌ আশ্রিত্য ন যোত্স্য ইতি মন্যসে ।
        মিথ্যা এষঃ ব্যবসায়ঃ তে প্রকৃতি তাম্‌ নিযোক্ষতি ।।৫৯
অর্থ-তুমি যদি আমার নির্দ্দেশ অনুসারে যুদ্ধ না কর,  তাহলে তুমি ভ্রান্ত ভাবে পরিচালিত হবে। কারন তোমার প্রকৃতি তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে।

        স্বভাবজেন কৌন্তেয় নিবদ্বঃ স্বেন কর্মনা ।
    কর্তুম ন ইচ্ছসি যত্ মোহাত্ করিষ্যসি অবশঃ অপি তত্ ।।৬০
অর্থ-হে কৌন্তেয় তুমি মোহ বশত আমার নির্দ্দেশ অনুসারে আচরন করতে চাইছনা। তোমার নিজ স্বভাবে বশবর্ত্তি হয়ে তোমাকে সেই কর্মে প্রবৃত্তি হতে হবে।
        ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদ্দেশে অর্জুন তিষ্ঠতি ।
        ভ্রাময়ন সর্বভূতানি যন্ত্র আরুঢ়ানি মায়য়া ।।৬১
অর্থ-হে অর্জুন, পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবকে দেহরুপ যন্ত্রেআহরন করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমন করান।

        তম এব শরনম্‌ গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।
        তত্ প্রসাদাত্ পরাম্‌ শান্তিম্‌ স্থানম্‌ প্রপ্সসি শাশ্বতম্‌ ।।৬২
অর্থ-হে ভারত সর্বত ভাবে তার শরনাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।

        ইতি তে জ্ঞানম্‌ আখ্যাতম্‌ গুহ্যাত্ গুহ্যতরম্‌ ময়া ।
        বিমৃশ্য এতত্ অশেষেন যথা ইচ্ছসি তথা কুরু ।।৬৩
অর্থ-এইভাবে আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান দান করলাম। তুমি তা বিশেষ ভাবে বিচার করে যাহা ইচ্ছা তাই কর।

        সর্ব গুহ্যতমম্‌ ভূয় শৃনু মে পরমম্‌ বচঃ ।
        ইষ্টঃ অসি মে দৃঢ়ম্‌ ইতি ততঃ বক্ষ্যামি তে হিতম্‌ ।।৬৪
অর্থ-তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয় তাই তোমার হিতের জন্য আমি সব চেয়ে গোপনিয় জ্ঞান উপদেশ করছি তুমি তা শ্রবন কর।

        মন্মনা ভব মদ্ভক্তঃ মদযাজি মাম্‌ নমস্কুরু ।
        মাম এষ্যসি সত্যম্‌ তে প্রতিজানে প্রিয় অসি মে ।।৬৫
অর্থ-তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর  এবং আমার ভক্ত হও। আমার পুজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এই জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই ভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে।

        সর্বাধর্মান পরিত্যজ্য মাম একম্‌ শরনম্‌ ব্রজ ।
        অহম্‌ ত্বাম সর্বপাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ।।৬৬
অর্থ-সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শ্বরনাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। সে বিষয়ে তুমি কোন দুশ্চিন্তা করো না।

        ইদম তে ন অতপস্কায় ন অভক্তায় কদাচন ।
        ন চ অশুশ্রুষবে বাচ্যম ন চ মাম্‌ য়ঃ অভ্যসুয়তি ।।৬৭
অর্থ-যারা সংযম হীন, ভক্তি হীন, পরিচর্য্যা হীন এবং আমার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন তাদের কখন এই গোপনীয় জ্ঞান প্রদান করবে না।
                                                                  
          যঃ ইদম্‌ পরমম্‌ গুহ্যম্‌ মত্ ভক্তেষু অভিধাস্যতি     ।
        ভক্তিম্‌ ময়ি পরাম্‌ কৃত্বা মাম্‌ এব এষ্যতি অসংশয়ঃ ।।৬৮
অর্থ-যিনি আমার ভক্তদের পরম জ্ঞান দান করেন তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করেন এবং অবশেষে আমার কাছে ফিরে আসবেন।

        ন চ তস্মাত্ মনুষ্যেসু কশ্চিত্ মে প্রিয় কৃত্তম্‌ ।
        ভবিতা ন চ মে তস্মাত্ অন্যঃ প্রিয়তর ভূবি ।৬৯
অর্থ-এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তার থেকে অধিক প্রিয়কারি এবং আমার প্রিয় আর কেউ নেই এবং কখনও হবে না।

        অধ্যেষ্যতে চ য ইমম্‌ ধর্মম্‌ সংবাদম্‌ আবয়োঃ ।
        জ্ঞান যজ্ঞেন তেন অহম্‌ ইষ্টঃ স্যাম ইতি মে মতিঃ ।।৭০
অর্থ-এবং আমি ঘোষনা করছি যে, যে ব্যক্তি আমাদের এই পবিত্র কথপকথন অধ্যায়ন করবেন, তার সেই জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা আমি পুজিত হব।

        শ্রদ্ধাবান অনসুয়শ্চ শৃনুয়াত্ অপি যঃ নরঃ ।
        সোহপি মুক্তঃ শুভান লোকান পাপ্নুয়াত্ পুন্যকর্মনাম্‌ ।।৭১
অর্থ-অসুয়া শুন্য যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা সহকারে এই জ্ঞান শ্রবন করেন, তিনিও পাপ মূক্ত হয়ে পুন্য কর্মকারীদের লোক প্রাপ্ত হয়।

        কচ্চিত্ এতত্ শ্রুতম্‌ পার্থ তয়া একাগ্রেন চেতসা ।
        কচ্চিত্ অজ্ঞান সম্মোহঃ প্রনষ্টঃ তে ধনঞ্জয় ।।৭২
অর্থ-হে ধনঞ্জয় অর্জুন তুমি কি একাগ্র চিত্তে এই উপদেশ শ্রবন করেছ,তোমার অজ্ঞান জনিত মোহ কি এখন বিদুরিত হয়েছে।
             
                                     অর্জুন উবাচ
        নষ্টঃ মোহ স্মৃতি লব্ধা তত্ প্রসাদাত্ ময়া অচ্যুত ।
        স্মিতঃ অস্মি গত সন্দেহঃ করিষ্যে বচনম তব ।।৭৩
      
অর্থ-অর্জুন বললেন, হে কৃষ্ণ, হে অচ্যুত তোমার কৃপায় এখন আমার মোহ দুর হয়েছে। আমার স্মৃতি ফিরে এসছে এবং আমার সমস্ত সন্দেহ দুর হয়েছে। আমি এখন তোমার নির্দ্দেশ অনুসারে আচরন করব।                                                              সঞ্জয় উবাচ
        ইতি অহম্‌ বাসুদেবস্য পার্থস্য চ মহাত্মনঃ ।
        সংবাদম্‌ ইমম্‌ অশ্রৌষম্‌ অদ্ভূতম্‌ রোমহর্ষণম ।।৭৪
অর্থ-সঞ্জয় বললেন, এইভাবে আমি কৃষ্ণ ও অর্জুন দুই মহাত্মার  কথপকথন শ্রবন করে ছিলাম এবং সেই অদ্ভুদ বাণী শ্রবন করে রোমাঞ্চিত হয়ে ছিলাম।


        ব্যাসপ্রসাদ্যাত্ শ্রুতবান এতত্ গুহ্যম্‌ অহম্‌ পরম্‌ ।
        যোগম্‌ যোগেশ্বরাত্ কৃষ্ণাত্ সাক্ষাত্ কথয়তঃ সয়ম্‌ ।।৭৫
অর্থ-ব্যাসদেবের কৃপায় এই পরম গোপণীয় যোগের উপদেশ আমি সয়ং যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণর কাছ থেকে শ্রবন করে ছিলাম।

        রাজন সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য সংবাদম্‌ ইমম্‌ অদ্ভুতম্‌ ।
        কেশব অর্জুনয়ো পুন্যম্‌ হৃষ্যামি চ মূহু মূহু ।।৭৬
অর্থ-হে রাজন শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই অমৃত সংবাদ স্বরন করতে করতে আমি বারংবার রোমাঞ্চিত হচ্ছি।

তত্ চ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য রূপম্‌ অতি অদ্ভুতম হরেঃ ।
বিস্ময়া মে মহান রাজন হৃষ্যামি চ পুনঃ পুনঃ ।।৭৭
অর্থ-হে রাজন শ্রীকৃষ্ণের সে অদ্ভুত্ রুপ স্বরন করতে করতে বিস্ময়া বিভূত হচ্ছি এবং বারংবার হরষিত হচ্ছি।
যত্র যোগেশ্বর কৃষ্ণ যত্রপার্থ ধনুধর ।
তত্র শ্রীঃ বিজয়ঃ ভূতিঃ ধ্রূবা নীতিঃ মতির্মম্‌ ।।৭৮
অর্থ-যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং যেখানে ধনুধর পার্থ সেখানে শ্রী,বিজয়,ভূতি,ও ন্যায় বর্ত্তমান এই দুইটিই আমার অভিমত।

মাহাত্ম


             ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়
              শ্রীশ্রীগীতা মাহাত্মম
                            ঋষিরুবাচ
        গীতায়াশ্চৈব মাহাত্ম্যং যথাবত্ সুত মে বদ ।
        পুরা নারায়নক্ষেত্রে ব্যাসেন মুনিনোদিতম্‌ ।১।
                    সুত উবাচ
        ভদ্রং ভগবতা পৃষ্টং যদ্ধি গুপ্ততমং পরম্‌ ।
        শক্যতে কেন তদ্‌বক্তুং গীতামাহাত্ম্যমুত্তমম্‌ ।২।

        কৃষ্ণো জানাতি বৈ সম্যক্‌ কিঞ্চিত্ কুন্তিসুতঃ ফলম্‌ ।
        ব্যাসো বা ব্যাসপুত্রো বা যাজ্ঞবল্ক্যোহথ মৈথিল ।৩।

অনুবাদ ঋষি বলিলেন-হে সুত! পুরাকালে নারায়ণক্ষেত্রে বসিয়া মহামুনি ব্যাস আপনার নিকট গীতা মাহাত্ম্য যেরুপ বলিয়াছিলেন, তাহাই আপনি কৃপা করিয়া আমার কাছে বলুন ।১।

অনুবাদ সুত বলিলেন-আপনি যে মঙ্গলময় পরম গুহ্যতম উত্তম বিষয় জিজ্ঞাসা করিলেন সেই অত্যুত্তম গীতা মাহাত্ম্য বলিতে কাহার সামর্থ্য আছে? ।২।

অনুবাদ=ইহা একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই জানেন, ইহা অর্জুন, ব্যাসদেব, যাজ্ঞবল্ক্য ও মিথিলারাজ জনক ঋষিও কিছু কিছু জানেন ।৩।
      
                         অন্যে শ্রবণতঃ শ্রুত্বা লেশং সংকীর্ত্তয়ন্তি চ ।
        তস্মাত্ কিঞ্চিদ্‌ বদাম্যত্র ব্যাসস্যাস্যান্ময়া শ্রুতম্‌ ।৪।

        সর্ব্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ ।
                         পার্থো বত্সঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহত্ ।৫।


        সারথ্যমর্জ্জুনস্যাদৌ কুর্ব্বন গীতামৃতং দদৌ ।
        লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ কৃষ্ণাত্মনে নমঃ ।৬।

        সংসার-সাগরং ঘোরং তর্ত্তুমিচ্ছতি যো নরঃ ।
        গীতানাবং সমাসাদ্য পারং যাতি সুখেন সঃ ।৭।
  
                           
অনুবাদ =আর অন্য কানে শুনিয়া লেশমাত্র কির্ত্তন করেন; আমি ব্যাসদেবের মুখে যাহা শুনিয়াছি, তেমনি তাহার কিছু এইস্থানে কীর্ত্তন করিতেছি, তাহা শ্রবণ করেন।৪

অনুবাদ=সমস্ত উপনিষদ ধেনুস্বরুপ, শ্রীকৃষ্ণ হইলেন দোহন কর্তা, অর্জুর উহার বত্স আর দুগ্ধ হইল শ্রেষ্ঠ গীতাশাস্ত্র স্বরুপ অমৃত।৫
অনুবাদ=শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের সারথী পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া জগতের উপকারার্থে গীতারুপ অমৃত দান করিয়াছিলেন, সেই শ্রীকৃষ্ণরুপ পরম ব্রহ্মকে প্রণাম করি।্‌

অনুবাদ=সংসাররুপ সাগর উর্ত্তীর্ণ হওয়া বড় শক্ত। যেই নর ইচ্ছা করেন, তিনি গীতারূপ নৌকা লইয়া অনায়াসে পার হইতে সমর্থ হন।

                         গীতাজ্ঞানঃ শ্রুতং নৈব সদৈবাভ্যাসযোগতঃ ।
        মোক্ষমিচ্ছতি মূঢ়াত্মা যাতি বালকহাস্যতাম্‌ ।৮।

        যে শৃন্বন্তি  পঠন্তেযব গীতাশাস্ত্রমহর্নিশম্‌ ।
        ন তে বৈ মানুষা জ্ঞেয়া দেবরূপা ন সংশয়ঃ ।৯।

        গীতাজ্ঞানেন সম্বোধং কৃষ্ণঃ প্রাহার্জ্জুনায় বৈ ।
        ভক্তিতত্ত্বং পরং তত্র সগুনং বার্থ নির্গুণম্‌ ।১০।

        সোপানাষ্টাদশৈরেবং ভক্তি মুক্তি সমুচ্ছ্রিতৈঃ ।
        ক্রমশশ্চিত্তশুদ্ধিঃ স্যাত্ প্রেমভক্তাদি কর্ম্মনি ।১১।

অনুবাদ=যে মুঢ়ব্যাক্তি পুনঃ পুনঃঅভ্যাসযোগে গীতাজ্ঞান প্রাপ্ত না হইয়া মোক্ষলাভের ইচ্ছা করিবে, সে বালকের ন্যায় হাস্যাস্পদ হয়।৮

অনুবাদ=যাহারা দিবানিশী গীতাপাঠ বা শ্রবণ করেন  তাহারা মানুষ নহেন নিশ্চই দেবতা, ইহা জানিবে।৯

অনুবাদ=গীতাজ্ঞানকে অবলম্বন করিয়া ম্রীকৃষ্ণ অর্জুনের নিকট জ্ঞান শাস্ত্রেও স্বগুন ও নির্গুন ব্রহ্মের তত্ত্বজ্ঞান বলিয়াছিলেন।১০

অনুবাদ=গীতার অষ্টাদশ অধ্যায়রুপ সোপান ভক্তি ও অভক্তির দ্বারা কিশিত; এইরুপ ক্রমে ক্রমে প্রেম ভক্তি আদি কর্ম সকল উঠিয়া চিত্তশুদ্ধি হইয়া থাকে।১১
      
        সাধোর্গীতাম্ভসি স্নানং সংসারমলনাশনম্‌্‌ ।
        শ্রদ্ধাহীনস্য তত্ কার্য্যং হস্তিস্নাং বৃথৈব তত্ ।১২।

        গীতায়াশ্চ ন জানাতি পঠনং নৈব পাঠনম্‌ ।
    স এব মানুষে লোকে মোঘকর্ম্মকরো ভবেত্ ।১৩।

    তস্মাদ্‌ গীতাং ন জানাতি নাধমস্তত্পরো জনঃ ।
    ধিক্‌ তস্য মানুষং দেহং বিজ্ঞানং কুলশীলতাম্‌ ।১৪।

    গীতার্থং ন বিজানাতি নাধমস্তত্পরো জনঃ ।
    ধিক্‌ শরীরং শুভং শীলং বিভবং তদ্‌ গৃহাশ্রমম্‌ ।১৫।

অনুবাদ=সাধু ব্যক্তির গীতারূপ পবিত্র জলাশয়ে স্মান করিলে সংসারের সর্বপাপ দূর হয়। আর যাহারা শ্রদ্ধাহীন, তাদের পক্ষে হস্তি স্মানের ন্যায় সে গীতাপাঠ বৃথা হইয়া থাকে ।১২।

অনুবাদ=যে ব্যক্তি গীতার পঠন ও পাঠন জানে না, সে ব্যক্তি নরলোকে যে কর্ম করে, তাহার সবই বৃথা হয় ।১৩।

অনুবাদ=সুতরাং যে গীতামাহাত্ম্যে জানে না, তাহা অপেক্ষা অধম আর কেহই নাই; তাহার মানবদেহে, বিজ্ঞানে ও উচ্চবংশে জন্ম ও সচ্চরিত্রে ধিক্‌ ।১৪।

অনুবাদ=যে গীতার অর্থ জানে না, তাহা অপেক্ষা অধম আর কেহই নাই, তাহার সচ্চরিত্রে-ধনসম্পদে-গৃহাশ্রমে ধিক্‌ ।১৫।

    গীতাশাস্ত্রং ন জানাতি নাধমস্তাত্পরো জনঃ ।
    ধিক্‌ প্রারব্ধং প্রতিষ্ঠাঞ্চ পূজাং মানং মহত্তমম্‌ ।১৬।

    গীতাশাস্ত্রে মতির্নাস্তি সর্ব্বং তন্নিষ্ফলং জগুঃ ।
    ধিক্‌ তস্য জ্ঞানদাতারং ব্রতং নিষ্ঠাং তপো যশঃ ।১৭।

    গীতার্থ পঠনং নাস্তি নাধমস্তত্পরো জনঃ ।
    গীতাগীতং ন যজ্‌ জ্ঞানং তদ্‌ বিদ্ধ্যাসুরসম্মতম্‌ ।১৮।

    তন্মোঘং ধর্ম্মরহিতং বেদবেদান-গর্হিতম্‌ ।
    তস্মাদ্ধর্ম্মময়ী গীতা সর্ব্বজ্ঞান-প্রযোজিকা ।
    সর্ব্বশাস্ত্রসারভূতা বিশুদ্ধা সা বিশিষ্যতে ।১৯।

অনুবাদ=যে গীতাশাস্ত্র জানে না, তাহার অপেক্ষা  অধম আর কেহ নাই; তাহার প্রারব্ধে ধিক্‌, কর্ম প্রতিষ্ঠা,পূজা, দান,মান ও মহত্ত্বে ধিক্‌।১৬
অনুবাদ=যাহার গীতাশাস্ত্রে মন নাই, তাহার সবই নিষ্ফল, পন্ডিতেরা এই কথা বলিয়া থাকেন। তাহার জ্ঞানদাতা গুরুকে ধিক্‌, তাহার ব্রত নিষ্ঠা-তপস্যা-সুনামকেও ধিক।১৭

অনুবাদ=যে গীতার অর্থ বোঝেনা, তাহা অপেক্ষ আর অধম কেহই নাই; যে জ্ঞান গীতা সম্মত নহে, সে জ্ঞান অসুর জ্ঞান বলিযা জানিবে। তাহা বৃথা তাহা ধর্মশুন্য, তাহা বেদ বেদান্ত নিন্দিত হইয়াছে।১৮

অনুবাদ=সুতরাং ধর্মময়ী গীতা হয় সর্বজ্ঞানের কারন, এই গীতা শাস্ত্রে সারভূতা ও পবিত্র তাই ইহা সর্বশ্রেষ্ঠ।১৯

    যোহধীতে বিষ্ণু পর্ব্বাহে গীতং শ্রীহরিবাসরে ।
    স্বপন্‌ জাগ্রন চলনং স্তিষ্ঠন্‌ শত্রুভির্ন সহ্রীয়তে ।২০।

    শালগ্রামশিলায়াং বা দেবাগারে শিবালয়ে ।
    তীর্থে নদ্যাং পঠেদ্‌ গীতাং সৌভাগং লভতে ধ্রূবম্‌ ।২১।

    দেবকীনন্দনঃ কৃষ্ণো গীতাপাঠেন তুষ্যতি ।
    যথা ন বেদৈর্দানেন যজ্ঞতীর্থব্রতাদিভিঃ ।২২।

    গীতাধীতা চ যেনাপি ভক্তিভাবেন চেতসা ।
    বেদশাস্ত্র পুরাণানি তেনাধীতানি সর্ব্বশঃ ।২৩।

অনুবাদ=যিনি হরিবাসরে ও শ্রীবিষ্ণু পর্বদিনে গীতা পাঠ করেন, কিম্বা নিদ্রায় জাগরনে চলিতে    দাড়াইতে অথবা যে কোন অবস্থাতেই গীতা পাঠ করেন, শত্রুগণ তাহার কোন ক্ষতি করতে পারে না ।২০

অনুবাদ=যিনি শালগ্রাম-শিলায়, দেবালয়ে শিবালয়ে, তীর্থে বা নদীতীরে গীতাপাঠ করেন, নিশ্চই তাহার সৌভাগ্য লাভ হইয়া থাকে।২১

অনুবাদ=গীতাপাঠ করিলে দেবকী নন্দন শ্রীকৃষ্ণ যেমন তুষ্ট হন, সেইরুপ বেদপাঠ দান যজ্ঞ তীর্থ ও ব্রতাদির দ্বারা তিনি তুষ্ট হন না।২২

অনুবাদ=যিনি ভক্তিভাবযুক্ত চিত্তে গীতাপাঠ করেন, তাহার বেদ পুরাণ সকল শাস্ত্রই পাঠ করা হইয়া থাকে।২৩

    যোগস্থানে সিদ্ধপীঠে শিলাগ্রে সত্সভাসু চ ।
    যজ্ঞে চ বিষ্ণুভক্তাগ্রে পঠন সিদ্ধিং পরং লভেত্ ।২৪।


    গীতাপাঠঞ্চ শ্রবনং যঃ করোতি দিনে দিনে ।
    ক্রতবো বাজিমেধাদ্যাঃ কৃতাস্তেন সদক্ষিণাঃ ।২৫।

    যঃ শৃনোতি চ গীতার্থং কীর্ত্তয়েত্যেব যঃ পরম্‌ ।
    শ্রাবয়েচ্চ পরার্থং বৈ স প্রয়াতি পরং পদম্‌ ।২৬।

    গীতায়াঃ পুস্তকং শুদ্ধং যোহর্পয়ত্যেব সাদরাত্ ।
    বিধিনা ভক্তিভাবেন তস্য ভার্য্যা প্রিয়া ভবেত্ ।২৭।

অনুবাদ=যিনি যোগস্থানে সিদ্ধপীঠে শালগ্রামশিলা ও অন্য শিলাময় দেবতাস্থানে সত্সভায় যজ্ঞকালে হরিভক্তের নিকটে গীতাপাঠ করেন,তিনি সিদ্ধি লাভ করিয়া থাকেন।২৪

অনুবাদ=যিনি প্রতিদিন গীতাপাঠ বা গীতাপাঠ শ্রবণ করেন, দক্ষিনার সহিত অশ্বমেধাদি যজ্ঞ তাহার হইয়া যায়।২৫

অনুবাদ=যিনি পরম গীতার্থ শ্রবণ করেন বা অপরকে শ্রবন করান, তিনি পরম পদ লাভ করিয়া থাকেন।২৬

অনুবাদ=যিনি ভক্তি ও যত্ন করিয়া শাস্ত্রবিধি অনুসারে গীতাপুস্তক অপরকে দান করেন তাহার ভার্য্যা প্রিয়তমা হয়।২৭
  
    যশঃ সৌভাগ্যমারোগ্যং লভতে নাত্র সংশয় ।
    দয়িতানাং প্রিয়ো ভূত্বা পরমং সুখমশ্নুতে ।২৮।

    অধিচারোদ্ভবং দুঃখং বরশাপাগতঞ্চ যত্ ।
    নোপসর্পতি তত্রৈব যত্র গীতার্চ্চনং গৃহে ।২৯।

    তাপত্রয়োদ্ভবা পীড়া নৈব ব্যাধির্ভবেত্ ক্বচিত্ ।
    ন শাপো নৈব পাপঞ্চ দুর্গতির্নরকং ন চ ।৩০।

    বিস্ফোটকাদয়ো দেহে না বাধন্তে কদাচনঃ ।
    লভেত্ কৃষ্ণপদে দাস্যং ভক্তিঞ্চাব্যভিচারিণীম্‌ ।৩১।

অনুবাদ=তিনি যশ, সৌভাগ্য ও অটুট স্বাস্থয লাভ করেন, এবং স্ত্রীর প্রিয় হইয়া পরম সুখ লাভ করেন।২৮

অনুবাদ=যে গৃহে গীতার অর্চনা হয়, সেই সথানে অবিচারজনিত দুঃখ বা অভিশাপজনিত কষ্টভোগ তাহার নিকট আসিতে পারে না।২৯

অনুবাদ=যে স্থানে ত্রিতাপজনিত দুঃখ হয় না, অথবা ব্যাধি হয় না, সে স্থলে শাপ পাপ দুর্গতি, নরক-ভয় কিছুই হয় না।৩০

অনুবাদ=যিনি প্রতিদিন গীতা অর্চনা করেন,তাহার শরীরে কখনও ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ হয় না; তিনি কৃষ্ণপদে দাস্য লাভ এবং একনিষ্ঠ ভক্তি লাভ করেন।৩১

    জায়তে সততং সখং সর্ব্বজীবগণৈঃ সহ ।
    প্রারব্ধং ভূঞ্জতো বাপি গীতাভ্যাসরতস্য চ ।
    স মুক্ত স সুখী লোকে কর্ম্মণা নোপলিপ্যতে ।৩২।

    মহাপাপাতিপাপনি গীতাধ্যায়ি করোতি চেত্ ।
    ন কিঞ্চিত্ স্পৃশ্যতে তস্য নলিনীদলম্ভসা ।৩৩।

    অনাচারোদ্ভবং পাপমবাচ্যাদি কৃতঞ্চ যত্।
    অভক্ষ্যভক্ষজং দোশমস্পর্শস্পর্শজং তথা ।৩৪।

    জ্ঞানাজ্ঞানকৃতং নিত্যমিন্দ্রিয়ৈর্জনিতঞ্চ যত্ ।
    তত্ সর্ব্বং নাশমায়াতি গীতাপাঠেন তত্ক্ষণাত্ ।৩৫।

অনুবাদ=যিনি সতত গীতা পাঠ করেন, তিনি প্রারব্ধ ভোগকরিতে থাকিলেও সর্ব্ব জীবগণের সহিত তাহার সখ্যভাব হয়।৩২

অনুবাদ=যিনি গীতাপাঠ করেন, তিনি মুক্ত এবং সুখী হন এবং সকল প্রকার মহাপাপ করিয়া থাকিলেও পদ্মপত্রগত জল যেমন পদ্মে লাগে না তাঁহাকেও সেইরুপ পাপ স্পর্শ করতে পারে না।৩৩।

অনুবাদ=অনাচার (যে সব কাজ করিতে শাস্ত্রে নিষেধ আছে সেইরুপ কাজ) করিলে নিত্য ভক্ষ্য-অভক্ষ্যজাত, স্পর্শ-অস্পর্শজাত এবং ইন্দ্রিয় দ্বারা জ্ঞানাজ্ঞানকৃত পাপ যাহা তাহাও নিত্য গীতাপাঠ করিলে বিনষ্ট হয়।৩৪,৩৫।
  
    সর্ব্বত্র প্রতিভূক্তা চ প্রতিগৃহ্য চ সব্বশঃ ।
    গীতাপাঠং প্রকুর্ব্বণো ন লিপ্যতে কদাচন ।৩৬।

    রত্নপুর্ণাং মহীং সর্ব্বাং প্রতিগৃহ্যবিধানতঃ ।
    গীতাপাঠেন চৈকেন শুদ্ধস্ফটিকবত্ সদা ।৩৭।

    যস্যান্তঃকরণং নিত্যং গীতায়াং রমতে সদা ।
    য সাগ্নিকঃ সদা জাপী ক্রিয়াবান স চ পন্ডিতঃ ।৩৮।

    দর্শনীয় স ধনবান স যোগী জ্ঞানবানপি ।
    স এব যাজ্ঞিকো যাজী সর্ব্ববেদার্থদর্শকঃ ।৩৯।

অনুবাদ=সকল স্থানে ভোজনকারী এবং সর্ব্বত্র দান গ্রহনকারী সেই ব্যাক্তি নিত্যগীতা পাঠ করিলে কোন পাপে লিপ্ত হন না।৩৬

অনুবাদ=তিনি যদি অবিধি-সহিত রত্নপুর্ন পৃথিবীকে গ্রহন করিয়াও একবার শুধু গীতা পাঠ করেন, তবে তিনি স্ফটিকের ন্যায় স্থিতিলাভ করেন।৩৭

অনুবাদ=যাহার অন্তকরণ সর্ব্বদই গীতাতে অনুরক্ত থাকে, তিনি সাত্ত্বিক উপকারী ক্রিয়াবান, এবং পন্ডিত।৩৮

অনুবাদ=তিনি দর্শনিয়,ধনবান,যোগী,জ্ঞানবান,যাজ্ঞিক,যাজক এবং সকল বেদের অর্থ বোঝেন।৩৯
      
        গীতায়াঃ পুস্তকং যত্র নিত্যপাঠশ্চ বর্ত্ততে ।
        তত্র সর্ব্বাণি তীর্থানি প্রয়াগাদীনি ভূতলে ।৪০।

        নিবসন্তি সদা দেহে দেহশেষেহপি সর্ব্বদা ।
        সর্ব্বে দেবাশ্চ ঋষয়ো যোগিনো দেহরক্ষকাঃ ।৪১।

        গোপালো বালকৃষ্ণোহপি নারদ-ধ্রুবপার্ষদৈঃ ।
        সহায়ো জায়তে শীঘ্রং যত্র গীতা প্রবর্ত্ততে ।৪২।

        যত্র গীতা বিচারশ্চ পঠনং তথা ।
        মেদতে তত্র শ্রীকৃষ্ণো রাধয়া সহ ।৪৩।

অনুবাদ=যেখানে গীতা পুস-ক থাকে ও নিত্য পাঠ হয়, সেখানে প্রয়াগাদি সর্ব্ব তীর্থই বিরাজ করে।৪০

অনুবাদ=যেখানে গীতা পাঠাদি চলিতে থাকে, সেখানে মানব দেহ এবং মৃত্যুর পরেও সর্ব্ব দেবতা, ঋষি ও যোগীরা বাস করিয়া তাহাকে রক্ষা করিয়া থাকেন।৪১

অনুবাদ=যেখানে গীতা পাঠকরা হয়, নারদ ধ্রুব প্রভৃতি ভক্তদের সহিত বালক কৃষ্ণবেশী গোপাল সেখানে শীগ্রই সহায় হইয়া থাকেন।৪২

অনুবাদ=যে স্থানে গীতার বিষয় অলোচনা পঠন ও পাঠন হয়, সে স্থানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে শ্রীমতী রাধার সহিত আনন্দে ক্রীড়া করিয়া থাকেন।৪৩

                              শ্রী ভগবানুবাচ
        গীতা মে হৃদয়ং পার্থ গীতা মে সারমুত্তমম্‌ ।
        গীতা মে জ্ঞানমত্যুগ্রং গীতা মে জ্ঞানমব্যয়ম্‌ ।৪৪।

        গীতা মে চোত্তমং স্থানং গীতা মে পরমং পদম্‌ ।
        গীতা মে পরমং গুহ্যং গীতা মে পরমো গুরুঃ ।৪৫।

        গীতাশ্রয়েহং তিষ্ঠামি গীতা মে পরমং গৃহম্‌ ।
        গীতাজ্ঞানং সমাশ্রিত্য ত্রিলোকীং পালয়াম্যহম্‌ ।৪৬।

        গীতা মে পরমা বিদ্যা ব্রহ্মরূপা ন সংশয়ঃ ।
        অর্দ্ধমাত্রাহরা নিত্যমনির্ব্বাচ্যপদাত্মিকা ।৪৭।

অনুবাদ=ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণ বলিয়াছেন- হে অর্জুন! গীতা আমার হৃদয় স্বরূপ, গীতা আমার সার পদার্থ, গীতা আমার শ্রেষ্ট জ্ঞান, গীতা আমার অব্যয় জ্ঞান ।৪৪

অনুবাদ=গীতা আমার উত্তম স্থান, গীতা আমার পরম পদ, গীতা আমার পরম গুহ্য, গীতা আমার পরম গুরু ।৪৫

অনুবাদ=গীতার আশ্রয়ে আমি থাকি, গীতা আমার পরম গৃহ, গীতাজ্ঞান আশ্রয় করিয়া আমি ত্রিলোক পালন করি ।৪৬

অনুবাদ=গীতা আমার পরম ব্রহ্মরূপিণী শ্রেষ্ঠ বিদ্যা এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই, ইহা অর্ধমাত্রা অনির্বাচ্য পদাত্মিকা ।৪৭

        গীতা নামানি বক্ষ্যামি গুহ্যানি শৃণু পান্ডব ।
        কীর্ত্তনাত্ সর্ব্বপাপানি বিলয়ং যান্তি তত্ক্ষণাত্ ।৪৮।

        গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা ।
        ব্রহ্মাবলির্ব্রহ্মবিদ্যা ত্রিসন্ধ্যা মুক্তিগেহিনী ।৪৯।

        অর্দ্ধমাত্রা চিতা নন্দা ভবঘ্নী ভ্রানি-নাশিনী ।
        বেদত্রয়ী পরানন্দা তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী ।৫০।

        ইত্যেতানি জপেন্নিত্যং নরো নিশ্চলমানসঃ ।
        জ্ঞানসিদ্ধিং লভেন্নিত্যং তথানে- পরমং পদম্‌ ।৫১।
অনুবাদ=হে অর্জুন! গুহ্য গীতা নামসমূহ শ্রবণ কর, এই নামগুলি কীর্তনে তত্ক্ষণাত্ সর্বপাপ দূরে যায় ।৪৮

অনুবাদ=গীতা, গঙ্গা, সাবিত্রী, সীতা, সত্যা, পতিব্রতা, ব্রহ্মাবলি, ব্রহ্মবিদ্যা, ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তি-গেহিনী ।৪৯

অনুবাদ=অর্ধমাত্রা, চিতানন্দা, ভবঘ্নী, ভ্রানি-নাশিনী, বেদত্রয়ী, পরনন্দা, তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী ।৫০।

অনুবাদ=গীতার এই সকল নাম কয়টি যিনি স্থির করিয়া একাগ্রচিত্তে জপ করিবেন, তিনি নিত্যজ্ঞান সিদ্ধিলাভ করেন এবং সেইভাবে অন্তে পরমপদ লাভ করিয়া থাকেন ।৫১।

        পাঠেহসমর্থঃ সম্পূর্ণং তদর্দ্ধপাঠমাচরেত্ ।
        তদা গোদানজং পুর্ণ্যং লভতে মাত্র সংশয়ঃ ।৫২।

        ত্রিভাগং পঠমানস্তু সোমযাগফলং লভেত্ ।
        ষড়ংশং জপমানস্তু গঙ্গাস্নানফলং লভেত্ ।৫৩।

        তথাধ্যায়দ্বয়ং নিত্যং পঠমানো নিরন্তরম্‌ ।
        ইন্দ্রলোকমবাপ্নোতি কল্পমেকং বসেদ্‌ধ্রুবম্‌ ।৫৪।

        একমধ্যায়কং নিত্যং পঠতে ভক্তিসংযুতঃ ।
        রুদ্রলোকমবাপ্নোতি গনো ভূত্বা বসেচ্চিরম্‌ ।৫৫।

অনুবাদ=সম্পূর্ন গীতা পাঠ করিতে না পারিলে যদি ইহার অর্ধাংশ মাত্র পাঠ করা হয়, তাহা হইলে গোদানজনিত পুণ্য লাভ হয়, ইহাতে কোন সংশয় নাই ।৫২

অনুবাদ=গীতার তিন ভাগের এক ভাগ পাঠ করিলে সেই ব্যক্তির সোমযাগের ফল লাভ হয় এবং ছয় ভাগের এক ভাগ পাঠ করিলে তাহার গঙ্গাস্নানের ফল লাভ হয় ।৫৩।

অনুবাদ=যিনি নিত্য গীতার দুই অধ্যায় পাঠ করেন, তিনি ইন্দ্রলোকে গমন করিয়া এককল্পকাল নিশ্চয়ই তথায় মহানন্দে বাস করিয়া থাকেন ।৫৪।

অনুবাদ=যিনি প্রত্যহ এক অধ্যায় করিয়া ভক্তিযুক্ত মনে গীতা পাঠ করেন, তিনি রুদ্রলোকে যাইয়া ভগবান শিবের অনুচর হইয়া বহুকাল তথায় বাস করেন ।৫৫।


        অধ্যায়ার্দ্ধম্‌ চ পাদং বা নিতং যঃ পঠতে জনঃ ।
        প্রাপ্নেতি রবিলোকং স মন্বন্তরসমাঃ শতম্‌ ।৫৬।

        গীতায়াঃ শ্লোকদশকং সপ্তপঞ্চতুষ্টয়ম্‌ ।
        ত্রিদ্ব্যেকমেকমর্দ্ধং বা শ্লোকানাং যঃ পঠেন্নরঃ ।
        চন্দ্রলোকমবাপ্নোতি বর্ষাণামযুতং তথা ।৫৭।

        গীতার্থমেকপাদঞ্চ শ্লোকমধ্যায়মেব চ ।
        স্মরংস্ত্যক্তা জনো দেহং প্রয়াতি পরমং পদম্‌ ।৫৮।

        গীআর্থমপি পাঠং বা শৃনুয়াদন্তকালতঃ ।
        মহাপাতকযুক্তহপি মুক্তিভাগী ভকেজ্জনঃ ।৫৯।

অনুবাদ=যিনি প্রতিদিন গীতার অর্ধ অধ্যায় বা চারিভাগের এক ভাগ পাঠ করেন, তিনি সুর্যলোকে যাইয়া শত মন্বন-র কাল অবস'ান করেন ।৫৬।

অনুবাদ=যিনি প্রতিদিন গীতার দশ-সাত। পাঁচ- চার। তিন-দুই। দুই-এক বা অর্ধেক শ্লোকও পাঠ করেন, তিনি চন্দ্র লোকে যাইয়া অযুত বত্সর তথায় বাস করিয়া থাকেন ।৫৭।

অনুবাদ=যিনি গীতার অর্ধেক এক চতুর্থাংশ বা একটি শ্লোকও স্মরন করিতে করিতে দেহ ত্যাগ করেন, তিনি পরম পদলাভ করিয়া থাকেন ।৫৮।

অনুবাদ=যিনি মৃত্যুকালে গীতার অর্থ পাঠ বা শ্রবন করেন, তিনি মহা পাপী হইলেও মুক্তির অধিকারী হন ।৫৯।


        গীতাপুস্তকসংযুক্তঃ প্রাণাংস্ত্যযক্তা প্রয়াতি যঃ ।
        গ বৈকুন্ঠংসমবাপ্নোতি বিষ্ণুণা সহ মোদতে ।৬০।

        গীতাধ্যায়সমাযুক্তো মৃতো মানুষতাং ব্রজেত্ ।
        গীতাভ্যাসং পুনঃ কৃত্বা লভতে মুক্তিমুত্তমাম্‌ ।৬১।

        গীতেত্যুচ্চার সংযুক্তো মিৃয়মাণো গতিং লভেত্ ।
        যদ্‌ যত্ কর্ম্ম চ সর্ব্বত্র গীতাপাঠ প্রকীর্ত্তিমত্ ।
        তত্তত্ কর্ম্ম চ নির্দ্দোষং ভূত্বা পুর্নত্বমাপ্নুয়াত্ ।৬২।

অনুবাদ=যিনি গীতা পুস্তক সঙ্গে করিয়া প্রানত্যাগ করেন, তিনি বৈকুন্ঠে যান এবং বিষ্ণুর সহিত বাস করিয়া কল্পকাল পরমানন্দে থাকেন।৬০

অনুবাদ=একটি গীতার অধ্যায় সংযুক্ত হইয়া কেহ দেহত্যাগ করিলে  আবার তিনি মনুষ্য হইয়া জন্মগ্রহন করেন এবং পুনরায় গীতাভ্যাস করিয়া মুক্তিলাভ করেন।৬১

অনুবাদ=“গীতা” “গীতা” এই শব্দ উচ্চারন করতে করতে য়ঁহার মৃত্যু হয়, তাঁহর সদগতি লাভ হয়। সর্ব্বত্র গীতা পাঠ করত যে কার্য করা যায় সেই কার্য নির্দ্দোষ হইয়া পূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়া থাকে।৬২

        পিতৃনুদ্দিশ্য যঃ শ্রাদ্ধে গতিাপাঠং করোতি হি ।
        সন্তুষ্টাঃ পিতরস্তস্য নিরয়াদ্‌ যান্তি স্বর্গতিম ।৬৩।

        গীতাপাঠেন সন্তুষ্টাঃ পিতরঃ শ্রাদ্ধতর্পিতাঃ ।
        পিতৃলোকং প্রয়ান্তেব পুত্রাশীর্ব্বাদ তত্পরাঃ ।৬৪।


        গীতা পুস্তকদানঞ্চ ধেনু পুচ্ছ সমন্বিতম্‌ ।
        কৃত্বা চ তদ্দিনে সম্যক কৃতার্থো জায়তে জনঃ ।৬৫।

        পুস্তকং হেমসংযুক্তং গীতায়াঃ প্রকরোতি যঃ ।
        দত্ত্বা বিপ্রায় বিদুসে জায়তে ন পুনর্ভবম্‌ ।৬৬।

অনুবাদ=পুর্ব্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধে কেহ গীতা পাঠ করিলে তাহার পুর্ব্ব পুরুষগন অতীব সন্তুষ্ট হইয়া নরক হইতে উদ্ধার পাইয়া স্বর্গে গমন করেন।৬৩

অনুবাদ=গীতা পাঠের ফলে পুর্ব্ব পুরুষগন সন্তুষ্ট হন, এবং শ্রাদ্ধবাসরে পুত্রগনকে আশির্ব্বাদ করিতে করিতে পিতৃলোকে চলিয়া যান।৬৪

অনুবাদ=যিনি গীতার সহিত ধেনুপুচ্ছ (চামর)দান করেন, তাহার সেইদিনের মনের বাসনা একেবারে পুর্নত্ব লাভ করে।৬৫

অনুবাদ=যিনি স্বর্ণের সহিত ব্রাহ্মনকে গীতা দান করেন, তাহার আর পুনর্বার জন্ম গ্রহন করিতে হয় না।৬৬

        শতপুস্তকদানঞ্চ গীতায়ঃ প্রকরোতি যঃ ।
        স যাতি ব্রহ্মসদনং পুনরাবৃত্তিদুর্লভম্‌ ।৬৭।

        গীতাদানপ্রভাবেন সপ্তকল্পমিতাঃ সমাঃ ।
        বিষ্ণুলোকমবাপ্যান্তে বিষ্ণুণা সহ মোদতে ।৬৮।

        সম্যক্‌ শ্রুত্বা চ গীতার্থং পুস্তকং যঃ প্রদাপয়েত্ ।
        তস্মৈ প্রীতঃ শ্রীভগবান্‌ দদাতি মানসেপ্সিতম্‌ ।৬৯।

        দেহং মানুষমাশ্রিত্য চাতুর্ব্বর্ণ্যেষু ভারত ।
        ন শৃনোতি ন পঠতি গীতামমৃতরূপিনীম্‌ ।
        হস্তাত্ত্যক্ত্রামৃতং প্রাপ্তং স নরো বিষমশ্লুতে ।৭০।

অনুবাদ=যিনি একশত গীতা দান করেন, তিনি ব্রহ্মলোকে যান, তাহার আর জন্মগ্রহন করিতে হয় না ।৬৭

অনুবাদ=গীতা দানের প্রভাবে দাতা সপ্ত কল্পকাল অবধি বিষ্ণুলোকে বিষ্ণুর সহিত আনন্দে বাস করেন ।৬৮

অনুবাদ=যিনি গীতার ব্যাখ্যা সম্যকরূপে শ্রবন করতঃ ঐপুসতক দান করেন, তাঁহার প্রতি ভগবান সন্তুষ্ট হইয়া মনের সকল বাসনা পূর্ন করিয়া থাকেন ।৬৯

অনুবাদ=হে ভারত, চাতুর্বর্ণ মধ্যে মানুষ্য দেহ ধারন করিয়া যিনি অমৃতরূপিনী গীতা গ্রন্থ শ্রবন বা পাঠ করেন না, তিনি হস্ত হইতে অমৃত ত্যাগ করিয়া বিষ ভক্ষন করেন ।৭০  
        জনঃ সংসারদুঃখার্ত্তো গীতাজ্ঞানং সমালভেত্ ।
        পীত্বা গীতামৃতং লোকে লব্ধা ভক্তিং সুখী ভবেত্ ।৭১।

        গীতামাশ্রিত্য বহবো ভুভুজো জনকাদায়ঃ ।
        নির্ধুতকল্মসা লোকে গতাস্তে পরমং পদম্‌ ।৭২।

        গীতাসৃ ন বিশেষোহস্তি জনেষুচ্চারকেষু চ ।
        জ্ঞানেস্বেব সমগ্রেষু সমা ব্রহ্মস্বরুপিনী ।৭৩।

        যোহভিমানেন গর্বেন গীতানিন্দাং করোতি চ ।
        সমেতি নরকং ঘোরং যাবদাহূতসংপ্লবম্‌ ।৭৪।

অনুবাদ=সংসার দুঃখে পীড়িত ব্যক্তি গীতারুপ জ্ঞান লাভ করিলে, তবে সে গীতার অমৃত পান করিয়া ভক্তি লাভ করিয়া সুখী হয়।৭১

অনুবাদ=গীতাকে আশ্রয় করিয়া জনকাদি বহু রাজা নিস্পাপ হইয়া অন্তে পরমপদ পাইয়াছেন।৭২

অনুবাদ=গীতার জ্ঞান বিষয় উচ্চ-নীচ কোন প্রভেদ নাই, ইহা সমস্ত জ্ঞানের পক্ষে সমান, ইহা ব্রহ্মজ্ঞানেরই সমান।৭৩

অনুবাদ=যিনি অভিমান বা গর্বভরে গীতার নিন্দা করেন, তিনি প্রলয়কাল পর্যন্ত ঘোর নরকে বাস করেন।৭৪

        অহংঙ্কারেন মূঢ়ত্মা গীতার্থং নৈব মন্যতে ।
        কুম্ভীপাকেষু পচ্যেত যাবত্ কল্পক্ষয়ো ভবেত্ ।৭৫।

        গীতার্থং বাচ্যমানং যো ন শৃণোতি সমীপতঃ ।
        স শূকরভবং যোনিমনেকামধিগচ্ছতি ।৭৬।

        চৌর্য্যং কৃত্বা চ গীতায়াঃ পুস্তকং যঃ সমানয়েত্ ।
        ন তস্য সফলং কিঞ্চিত্ পঠনঞ্চ বৃথা ভবেত্ ।৭৭।

        যঃ শ্রুত্বা নৈব গীতার্থং মোদতে পরমার্থতঃ ।
        নৈব তৈস্য ফলং লোকে প্রমত্তস্য যথা শ্রমঃ ।৭৮।

অনুবাদ=অজ্ঞানতা বশতঃ যে মূঢ়াত্মা গীতা না মানে সে যে পর্য্যন্ত না কল্প শেষ হয়, সেই পর্যন্ত কুম্ভীপাক নরকে পচিয়া মরে।৭৫

অনুবাদ=যে সময় গীতার ব্যাখ্যা করা হয়, সেই সময় সেস্থানে থাকিয়া যদি কেহ শ্রবন না করে, তবে সে বহুজন্ম শূকরযোনী প্রাপ্ত হইয়া থাকে।৭৬

অনুবাদ=চুরি করিয়া যে ব্যাক্তি গীতা গ্রন' আপন গৃহে আনে, তাহার সব ফল বৃথা হয় এবং গীতাপাঠেও কোন ফল হয় না।৭৭
অনুবাদ=যে ব্যক্তি গীতার ব্যাখ্যা শ্রবন করিয়া সত্যই পারমার্থিক ভাবে বিভের হন না প্রমত্ত ব্যক্তির পরিশ্রমের ন্যায় তাহার এই পৃথিবীতে কোন কর্মেরই ফল লাভহয়না।৭৮

                  গীতাং শ্রুত্বা হিরণ্যঞ্চ ভোজং পট্টাম্বরং তথা ।
                    নিবেদয়েত্ প্রদানার্থং প্রীতয়ে পরমাত্মনঃ ।৭৯।

                    বাচকং পূজয়েদ্ভক্ত্যা দ্রব্যবস্ত্রাদ্যুপস্করৈঃ ।
                    অনেকৈর্বহুধা প্রীত্যা তষাতাং ভগবান হরিঃ ।৮০
      
অনুবাদ=গীতাপাঠ শ্রবন করতঃ পরমাত্মার প্রীতির জন্য, স্বর্ন, ভোজ্য, পট্রবস্ত্র ও গীতা গ্রন্থ দান করিবে ।৭৯

অনুবাদ=যিনি গীতা পাঠ করেন তাঁহাকে বস্ত্রাদি সহ বহুবিধ ভোজ্য দ্রব্য দিয়া পূজা করিলে ভগবান তাহাতেই সন্তুষ্ট হন ।৮০
                          সূত উবাচ
        মাহাত্ম্যমেতদ্‌ গীতায়ঃ কৃষ্ণপ্রোক্তং পরাতনম্‌ ।
        গীতান্তে পঠতে যস্তু যথোক্তফলভাগ্‌ ভবেত্ ।৮১।

        গীতায়াঃ পঠনং কৃত্বা মাহাত্ম্যং নৈব যঃ পঠত্ ।
        বৃথা পাঠফলং তস্য শ্রম এব উদাহৃততঃ ।৮২।

        এতন্মঅহাত্ম্যসংযুক্তং গীতা পাঠং করোতি যঃ ।
        শ্রদ্ধয়া যঃ শৃণোত্যেব পরমাং গতিমাপ্লুয়াত্ ।৮৩।

        শ্রুত্বা গীতামর্থযুক্তাং মাহাত্ম্যং যঃ শৃনোতি চ ।
        তস্য পুণ্যফলং লোকে ভবেত্ সর্ব্বসুখাবহম্‌ ।৮৪।

অনুবাদ=এই সকল কথা বলিয়া সূত মুনি পূনঃ বলিলেন-এই গীতামাহাত্ম্য পুরাতন, ইহা ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণ নিজ মুখে বলিয়াছেন। গীতা পাঠ অন্তে যিনি এই মাহাত্ম্য পরেন, তিনি যথোক্ত ফল লাভ করিয়া থাকেন ।৮১

অনুবাদ=গীতা পাঠ করিয়া যিনি মাহাত্ম্য পাঠ করেন না, তাঁহার গীতা পাঠফল বৃথাশ্রম মাত্রই সার হয় ।৮২

অনুবাদ=যিনি গীতা পাঠ করিয়া মাহাত্ম্যও পাঠ করেন এবং শ্রদ্ধাপূর্বক শ্রবন করেন, তিনি পরমাগতি লাভ করিয়া থাকেন ।৮৩

অনুবাদ=যিনি গীতার ব্যাখ্যা শ্রবন করিয়া গীতার মাহাত্ম্য শ্রবন করেন, তাঁহার পুন্যফল ত্রিলোকে সর্বসুখের কারন হইয়া থাকে ।৮৪
------