সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

দ্বিতীয় অধ্যায়


প্রথম্ অধ্যায়


ভুমিকা

            
                        --ভুমিকা--
গীতা-
গীতা হইয়াছে যাহা"যাহা চিরন্তন শাশ্বত সনাতন,বিশ্বশান্তির অসাধারন প্রজ্ঞাময় নির্দ্দেশক
পার্থিব জগতে জাতি সংঘের সমান্তরাল । 
-অপার্থিব জগতের পরম পাথেয় বহু হাজার বছর অতীত হয়েছে। এর বিশ্লেষন ব্যাখ্যায়
এর গৌরব আরো উজ্জল হয়ে উঠেছে। ব্যাক্তি রচনা বলে কেউ স্বীকার করেন নি,শ্লোক
সংখ্যারও কোন পরিবর্তন ঘটেনি যে হেতু অপৌরুষেয় সমগ্র উপনিষদের বাণীর সার সত্বা
যা ভগবান শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত।
এই অপোরুষের গ্রন্থ খানির ব্যপক প্রচারের উদ্যোগে আমি ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যাখ্যা করালাম,
যদি বিন্দুমাত্র প্রচারে সার্থক হয় নিজকে কৃতার্থ মনে করবো।
                               বিনীত-শ্রীশ্রীভগবান কৃষ্ণ কৃপার্থী।





গীতার ধ্যান-।
শান্তকারং ভূজগ শয়নং পদ্মনাভং সুবেশং ।।
বিশ্বধারং গগন সদৃশং মেঘবর্নং শুভাঙ্গম্‌ ।।১।
লক্ষ্মীকান্তং কমল নয়ন যোগীভি ধ্যান গম্যং ।।
বন্দে বিষ্ণু ভবভয়হরং সর্বলোকৈক নাথম্‌ ।।২।
যং ব্রহ্মা বরুনেন্দ্র রুদ্র মরু তস্তুনস্তু দিবৈ স্তবৈ ।।
বেদৈঃ সাঙ্গপদ ক্রমা পনিষাদৈ গায়ন্তি যং সমগা ।।৩।
ধ্যনবস্থিত তদগতেন মনসা পশ্যন্তি যঃ যোগিন ।।
যস্যান্তং ন বিদুঃ সুরাসুরগনা দেবায় তস্মৈ নমঃ ।।৪।


-গীতার প্রনাম মন্ত্র-।
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকায় ।।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ ।।১।
শ্রীচৈতন্য মনোহভিষ্টং স্থাপিতং যেন ভূতলে ।।
সয়ং রূপঃ কদা মহ্যং দদাতি সপদান্তিকম্‌ ।।২।
বন্দেহহং শ্রীগুরুঃ শ্রীযুত পদকমলমংশ্রীগুরূন বৈষ্ণবাশ্চঃ ।।
শ্রীরূপং সাগ্রজাতং সহগণরঘুনাথানিত্যং তং সজীবম্‌ ।৩।
স্বাদ্বৈতং সাবধুতং পরিজনসহিতং কৃষ্ণচৈতন্যদেবং ।।
শ্রীরাধাকৃষ্ণপদান সহগন ললীতা-শ্রীবিশাখান্বিতাংশ্চ ।।৪।
হে কৃষ্ণ করুনাসিন্ধো দীনবন্ধো জগত্পতে ।।
গোপেশ গোপিকাকা রাধাকান্ত নমস্তু তে ।।৫।
তপ্ত কাঞ্চনগৌরাঙ্গি রাধে বৃন্দবনেশ্বরি ।।
বৃষভানুসুতে দেবী প্রণমামী হরিপ্রিয়ে ।।৬।
বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ ।।
পতিতানাং পাবেনেভ্যো বৈষ্ণবেভ্যো নমো নমঃ ।।৭।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ ।।
শ্রী অদ্বৈত গদাধর শ্রীবসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ ।।৮।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।
-----------------------
                         বিনীত-শ্রীশ্রীভগবান কৃষ্ণ কৃপার্থী।


-

গীতার ধ্যান-।
শান্তকারং ভূজগ শয়নং পদ্মনাভং সুবেশং ।।
বিশ্বধারং গগন সদৃশং মেঘবর্নং শুভাঙ্গম্‌ ।।১।
লক্ষ্মীকান্তং কমল নয়ন যোগীভি ধ্যান গম্যং ।।
বন্দে বিষ্ণু ভবভয়হরং সর্বলোকৈক নাথম্‌ ।।২।
যং ব্রহ্মা বরুনেন্দ্র রুদ্র মরু তস্তুনস্তু দিবৈ স্তবৈ ।।
বেদৈঃ সাঙ্গপদ ক্রমা পনিষাদৈ গায়ন্তি যং সমগা ।।৩।
ধ্যনবস্থিত তদগতেন মনসা পশ্যন্তি যঃ যোগিন ।।
যস্যান্তং ন বিদুঃ সুরাসুরগনা দেবায় তস্মৈ নমঃ ।।৪।

মঙ্গলাচরণম্-

 ওঁ পার্থায় প্রতিবোধিতাং ভগবতা নারায়ণেন স্বয়ম্।।
ব্যাসেন গ্রথিতাং পুরাণমুনিনা মধ্যে মহাভারতম্‌ ।।১।
অদৈতামৃতবর্ষিণীং ভগবতীমষ্টাদশাধ্যায়িনীম ।।
ত্বামনুসন্দধামি ভগবদ্গীতে ভবদ্বেষিনীম্‌ ।।২।
নমোহস্তু তে ব্যাস বিশাল বুদ্ধে ফুল্লারবিন্দায়তপত্রনেত্র ।।
যেন ত্বয়া ভারততৈলপুর্ণঃ প্রজ্বালিতো জ্ঞানময়ঃ প্রদীপঃ ।।৩।
প্রপান্নপারিজাতায় তোত্রবেত্রৈকপাণয়ে। ।
জ্ঞানমুদ্রায় কৃষ্ণায় গীতামৃতদুহে নমঃ ।।৪।
সর্ব্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ। ।
পার্থো বত্সঃ সুধীভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহত্ ।।৫।
বসুদেবসুতং দেব কংসচানুরমর্দ্দনম্‌। ।
দেবকীপরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদগুরুম্‌ ।।৬।
ভীস্মদ্রোনতটা জয়দ্রথজলা গান্ধার নীলোত্পলা । ।
শল্যগ্রাহবতী কৃপেন বহুনী কর্নেন বেলাকুলা ।।৭ ।
অশ্বথামা বিকর্ণ ঘোরমকরা দুর্য্যোধনা বর্ত্তিনী। ।
সোত্তীর্ণা খলু পান্ডবৈ রণনদী কৈবর্ত্তকে কেশব ।।৮।
পরাশর্য্যবচঃ সরোজম্ মলং গীতার্থ গন্ধোত্কটং। ।
নানাখ্যানককেশরং হরিকথা সম্বোধনাবোধিতম্‌ ।।৯।
লোকে সজ্জনষট্‌পদৈরহরহঃ পেপীয়মানং মুদা ।।
ভূয়াদ্ভারতপঙ্কজং কলিমলপ্রধ্বংসি নঃ শ্রেয়সে ।।১০।
মুকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্‌ ।।
যত্কৃপাতমহং বন্দে পরমানন্দমাধবম্‌ ।।১১।
যং ব্রহ্মা বরূণেন্দ্র রুদ্র মরু তস্তুনস্তি দিব্যৈঃ স্তবৈ। ।
র্ব্বেদৈঃ সাঙ্গ পদক্রমো পনিষদৈর্গায়ন্তি যং সামগাঃ ।।১২।
ধ্যানাবস্থিত তদ্গতেন মনসা পশন্তি যং যোগিনো। ।         
যস্যান্তং ন বিদুঃ সুরাসুরগণা দেবায় তস্মৈ নমঃ ।।১৩।





০১/০১
ধৃতরাষ্ট উবাচ
ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুত্সবঃ ।
মামকাঃ পান্ডবাঃ চ এব কিম অকুর্বত সঞ্জয় ।।১
অর্থ-ধৃতরাষ্ট জিজ্ঞাসা করলেন হে সঞ্জয় ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্ররা তারপর কি করলেন।
০১/০২
সঞ্জয় উবাচ
দৃষ্টা তু পান্ডব আনীকম্‌ ব্যুঢ়ম দুর্য্যধনঃ তদা ।
আচার্য্যম উপসঙ্গম্য রাজা বচনম্‌ অব্রবীত্ ।।২
অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে রাজন পান্ডবদের সৈন্য সজ্জা দর্শন করে রাজা দুর্য্যধন দ্রোনাচার্য্যের কাছে বললেন।
০১/০৩
পশ্য এতাম্‌ পান্ডুপুত্রানাম্‌ আচার্য্য মহিতীম্‌ চমুম্‌ ।
বুঢ়াম্‌ দ্রুপদ পুত্রেন তব শিষ্যেন ধীমতা ।।৩
অর্থ-হে আচার্য্য পান্ডবদের মহান সৈন্য দল দর্শন করুন যা আপনার অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিষ্য দ্রুপদের পুত্র অত্যনত দক্ষতার সংঙ্গে ব্যুহের আকার রচনা করেন।
০১/০৪
অত্র সুরাঃ মহা-ইষু আসাঃ ভীম অর্জুন সমাঃ যুধী ।
যুযুধানঃ বিরাটঃ চ দ্রুপদ মহারথাঃ ।।৪
অর্থ-সে সমস্থ সেনাদের মধ্যে অনেকে ভীম এবং অর্জুনের মত বীর ধনুর্ধারী রয়েছেন এবং যুযুধান বিরাট ও দ্রুপদের মত মহাযোদ্ধা রয়েছেন।
০১/০৫
ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশিরাজঃ চ বীর্য্যবান ।
পুরুজিত্ কুন্তিভোজঃ চ শৈব্যঃ চ নরপুঙ্গবঃ ।।৫
অর্থ-সেখানে ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশিরাজ পুরুজিত্ কুন্তিভোজ এবং শৈব্যের মত অত্যন্ত বলবান যোদ্ধারাও রয়েছেন।
০১/০৬
যুধামন্যু চ বিক্রান্ত উত্তমৌজাঃ চ বির্য্যবান ।
সৌভদ্রঃ দ্রৌপদেয়াঃ চ সর্বে এব মহারথা ।।৬
অর্থ-সেখানে রয়েছেন অত্যন্ত বলবান যুধামন্যু প্রবল পরাক্রামশালী উত্তমৌজ,শুভদ্রার পুত্র এবং দ্রৌপদীর পুত্রগন এই সব যোদ্ধারা সকলেই এক একজন মহারথী।
০১/০৭
অস্মাকম্‌ তু বিশিষ্টা যে তান নিবোধ দ্বিজ-উত্তম্‌ ।
নায়কাঃ মম্‌ সৈন্যস্য সংজ্ঞা অর্থম্‌ তান ব্রবীমী তে ।।৭
অর্থ-হে দ্বিজত্তম আমাদের পক্ষে যে সমস্ত বিশিষ্ট সেনাপতি সামরিক শক্তি পরি চালনার জন্য রয়েছেন আপনার অবগতীর জন্য আমি তাদের সম্বন্ধে বলছি।
০১/০৮
ভবান ভিষ্মঃ চ কর্ণঃ চ কৃপ চ সমিতিঞ্জয়ঃ ।
অশ্বত্থামা বিকর্ণঃ চ সৌমদত্তিঃ তথা এব চ ।৮।
অর্থ-সেখানে রয়েছেন আপনার মতোই ব্যক্তিসম্পন্ন-ভীষ্ম কর্ন কৃপ অশ্বত্থমা বিকর্ন এবং সোমদত্তের পুত্র ভূরিশ্রবা যারা সর্বক্ষেত্রে সর্বদা সংগ্রামে বিজয়ী থাকেন।
০১/০৯
অন্যে চ বহবঃ শুরাঃ মত্ অর্থে ত্যক্ত জীবিতাঃ ।
নানা শস্ত্র প্রহরণাঃ সর্বে যুদ্ধ বিশারদাঃ ।৯।
অর্থ-এছারা আর বহু নায়ক রয়েছেন আমাদের জন্য তাদের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত । তারা সকলেই নানা প্রকার অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত এবং তারা সামরিক বিজ্ঞান বিশারদ।
০১/১০
অপর্যাপ্তম্‌ তত্ অস্মাকম্‌ বলম্‌ ভীষ্ম অভিরক্ষিতম্ ।
পর্য্যাপ্তম্‌ তু ইদম্‌ এতেষাম্‌ বলম্‌ ভীম অভিরক্ষিতম্‌ ।১০।
অর্থ-আমাদের সৈন্যদল অপরিমিত এবং আমরা পিতামহ ভীষ্মের দ্বারা পুর্নরুপে সুরক্ষিত কিন্তু ভীমের দ্বারা সতর্ক ভাবে সুরক্ষিত পান্ডবের শক্তি সিমিত।
০১/১১
অয়নেষু চ সর্বেষু যথাভাগম্‌ অবসথিতাঃ ।
ভীষ্মম এব অভীরক্ষন্তু ভবন্তঃ সর্বে এব হি ।১১।
অর্থ-এখন আপনারা সকলে নিজ নিজ গুরুত্তপুর্ন স্থানে সমর সেনাসজ্জায় স্থিত হয়ে পিতামহ ভীষ্মকে পুর্ন সাহয্য করুন।
০১/১২
তস্য সঞ্জনয়ন্‌ হর্ষ্‌ম্ কুরু-বৃদ্ধঃ পিতামহঃ ।
সিংহ নাদম্‌ বিনদ্য উচ্চৈঃ শঙ্খম্‌ দধ্‌মৌ প্রতাপবান ।১২।
অর্থ-তখন কুরু বংশের বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্য্যধনের হর্ষ উত্পাদনের জন্য সিংহের গর্জ্জনের মত অতি উচ্চনাদে তার শঙ্খ বাজালেন।
০১/১৩
ততঃ শঙ্খাঃ চ ভের্যঃ চ পনবআনক গোমুখাঃ ।
সহসা এব অভ্যহন্যন্ত সঃ শব্দঃ তুমুলঃ অভবত্ ।১৩।
অর্থ-তারপর শঙ্খ ভেরী পনক আনক ঢাক এবং গোমুখ সিংঙ্গা সমুহ হঠাত্ একত্রে ধনিত হয়ে এক তুমুল শব্দের সৃষ্টি হল।
০১/১৪
ততঃ শ্বেতৈঃ হয়ৈঃ যুক্তে মহতি স্যন্দনে স্থিতৌ ।
মাধবঃ পান্ডবঃ চ এব দিব্যৌ শঙ্খৌ প্রদধ্‌মতুঃ ।১৪।
অর্থ-অন্যদিকে শ্বেত অশ্বসমুহ যুক্ত একদিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন উভয়ে তাদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন।
০১/১৫
পাঞ্চজন্যম্‌ হৃষীক-ঈশঃ দেবদত্তম্‌ ধনঞ্জয়ঃ ।।
পৌন্ড্রম্‌ দধ্‌মৌ মহাশঙ্খম্‌ ভীমকর্মা বৃক-উদর ।১৫।
অর্থ-তখন শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য নামক তার শঙ্খ বাজালেন।এবং অর্জুন বাজালেন তার দেবদত্তক নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজন পৃয় ভীমকর্মা সেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তার ভয়ঙ্কর শঙ্খ।
০১/১৬.১৭.১৮
অনন্ত বিজয়ম্‌ রাজা কুন্তীপুত্রঃ যুধিষ্ঠিরঃ ।
নকুলঃ সহদেবঃ চ সুঘোষ-মনিপুস্পকৌ ।১৬।
কাশ্যঃ চ পরম-ইষু-আসঃ শিখন্ডী চ মহারথঃ ।
ধৃষ্টদ্যুম্নঃ বিরাটঃ চ সাত্যকি চ অপরাজিতঃ ।১৭।
দ্রুপদঃ দ্রৌপদেয়াঃ চ সর্বশঃ পৃথিবী পতে ।
সৌভদ্রঃ চ মহা বাহু শঙ্খান দধ্‌মুঃ পৃথক্‌ পৃথ্‌ক ।১৮।
অর্থ-কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্ত বিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন, এবং নকুল এবং সহদেব বাজালেন সুঘোষ এবং মনিপুস্পক নামক শঙ্খ। হে মহারাজ তখন মহান ধনুর্ধর কাশিরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডি,ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট এবং অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ দ্রৌপদীর পুত্রগন, সুভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন।
০১/১৯
সঃ ঘোষঃ ধার্তরাষ্ট্রাণাম্‌ হৃদয়ানি ব্যদারয়াত্ ।
নভঃ চ পৃথিবীম্‌ চ এব তুমুলঃ অভ্যনুনাদয়ন ।১৯।
অর্থ-শঙ্খ নিনাদের সেই শব্দে আকাশ বিদীর্ন হল। পৃথিবী কম্পিত হল এবং তার ফলে ধৃতরাষ্টের হৃদয় প্রবল ভয়ে বিধ্বস্ত হল।
০১/২০
অথ ব্যবস্তিতান্‌ দৃষ্টা ধার্তরাষ্ট্রান কপিধ্বজঃ ।
প্রবৃত্তে শস্ত্র সম্পাতে ধনুঃ উদ্যম্য পান্ডবঃ ।
হৃষীকেশম্‌ তদা বাক্যম্‌ ইদম আহ মহীপতে ।২০।
অর্থ-সেই সময় পান্ডু পুত্র অরজুন হনুমান চিহ্নিত পতকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে তার ধনুক তুলেনিয়ে শ্বরনিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সমর সজ্জায় বিন্স্ত দেখে হৃষীকেশকে অর্জুন তখন এই কথাগুলি বললেন
০১/২১.২২
অর্জুন উবাচ
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে রথম্‌ স্থাপয় মে অচ্যুত ।
যাবত্ এতান নিরীক্ষে অহম্‌ যোদ্ধুকামান অবস্থিতান ।২১।
কৈঃ ময়া সহ যোদ্ধব্যম্‌ অস্মিন রন সমুদ্যমে ।২২।
অর্থ-অর্জুন বললেন হে অচ্যুত্ অভ্রান্ত বন্ধু, তুমি উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে আমার রথ স্থাপন কর, যাতে আমি দেখতে পারি যুদ্ধ করার অভিলাষি হয়ে কারা এখানে এসেছে এবং আমাকে অস্ত্রধারন করে কাদের সঙ্গে এই মহা সংগ্রাম করতে হবে।
০১/২৩
যোত্স্যমানান অবেক্ষে অহম্‌ যে এতে অত্র সমাগতাঃ ।
ধার্তরাষ্টস্য দুর্বুদ্ধেঃ যুদ্ধে প্রিয় চিকীর্ষবঃ ।২৩।
অর্থ-অমি দেখতে চাই ধৃতরাষ্টের দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন পুত্রদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কারা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে।
০১/২৪
সঞ্জয় উবাচ
এবম্‌ উক্তঃ হৃষীকেশঃ গুড়াকেশেন ভারত ।
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে স্থাপয়িত্বা রথউত্তমম্‌ ।২৪।
অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে ভারত বংশধর অর্জুন কতৃক এইভাবে আদিষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণ সেই উত্তম রথটি চালিয়ে নিয়ে উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাখলেন।
০১/২৫
ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখতঃ সর্বেষাম্‌ চ মহীক্ষিতাম্‌ ।
উবাচ পার্থ পশ্য এতান্‌ সমবেতান কুরূন্ ইতি ।২৫।
অর্থ-ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখ পৃথিবীর অন্য সমস্থ নেতাদের সামনে ভগবান হৃষীকেশ বললেন হে পর্থ এখন সমস্ত কৌরবদের দেখ।
০১/২৬
তত্র অপশ্যত্ স্থিতান পার্থ পিতৃন্ অথ পিতামহান্ ।
আচার্যান্ মাতুলান ভ্রাতৃন পুত্রান্ পৌত্রান্ সখীন্ তথা ।
শ্বশুরান্‌ সুহৃদঃ চ এব সেনয়োঃ উভয়োঃ অপি ।২৬।
অর্থ-তখন অর্জুন উভয়ে দলের মধ্যে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য মাতুল ভ্রাতা শ্বশুর মিত্র শুভকাঙ্খিদের উপস্থিত দেখতে পেলেন।
০১/২৭
তান সমীক্ষ্য সঃ কৌন্তেয়ঃ সর্বান বন্ধুন অবস্থিতান।
কৃপয়া পরয়া আবিষ্টঃ বিষীদন্ ইদম্‌ অব্রবীত্ ।২৭।
অর্থ-যখন অর্জুন সকল রকমের বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত দেখলেন তখন তিনি অত্যন্ত কৃপায়াবিষ্ট ও বিষন্ন হয়ে বললেন।
০১/২৮
অর্জুন উবাচ
দৃষ্টা ইমম্‌ স্বজনম্‌ কৃষ্ণ যুযুঃসুম সমুপস্থিতম্‌ ।
সীদন্তী মম্‌ গাত্রাণী মুখম্‌ চ পরিশুষ্যতি ।২৮। ।
অর্থ-অর্জুন বলিলেন হে প্রিয়বর কৃষ্ণ আমার সমস্ত বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের এমন ভাবে যুদ্ধাভিলাষি হয়ে আমার সামনে অবস্থান করতে দেখে আমার অঙ্গ প্রতঙ্গ অবশ হয়ে আসছে এবং মুখ শুস্কহয়ে উঠছে।
০১/২৯
বেপথুঃ চ শরীরে মে রোমহর্ষ চ জায়তে ।
গান্ডীবম্‌ স্রংসতে হস্তাত্ ত্বক চ এব পরিদহ্যতে ।২৯।
অর্থ-আমার সর্ব শরির কম্পিত ও কেশাগ্র রোমাচিত হচ্ছে। হাত থেকে গান্ডিব খসে পরছে এবং ত্বক যেন জ্বলে যচ্ছে।
০১/৩০
ন চ শক্লোমি অবস্থাতুম্‌ ভ্রমতী ইব চ মে মনঃ ।
নিমিত্তানি চ পশ্যামি বিপরীতানি কেশবঃ ।৩০।
অর্থ-হে কেশব আমি এখন স্থির থাকতে পারছি না। আমি বিভ্রান্তী বোধ করছি,আমার চিত্ত উত্ভ্রান্ত হচ্ছে। হে কেশীদৈত্যহন্তা শ্রীকৃষ্ণ আমি কেবলই অমঙ্গ সুচক লক্ষন দর্শন করছি।
০১/৩১
ন চ শ্রেয় অনুপশ্যামি হত্বা স্বজনম্‌ আহবে ।
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ম্‌ কৃষ্ণ ন চ রাজ্যম্‌ সুখানি চ ।৩১।
অর্থ-হে কৃষ্ণ আত্মীয় স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাইনা রাজ্যসুখ ভোগের কামনা করিনা।
০১/৩২,৩৩,৩৪,৩৫
কিম্‌ ন রাজ্যম্‌ গোবিন্দ কিম্‌ ভোগৈঃ জীবিতেন বা ।
যেষাম্‌ অর্থে কাঙ্খিতম্‌ নঃ রাজ্যম্‌ ভোগাঃ সুখানি চ ।৩২।।
তে ইমে অবস্থিতাঃ যুদ্ধে প্রানান ত্যাক্তা ধনানি চ ।
আচার্য্যাঃ পিতরঃ পুত্রাঃ তথা এব চ পিতামহাঃ ।৩৩।।
মাতুলা শ্বশুরাঃ পৌত্রাঃ শ্যালাঃ সম্বন্ধিনঃ তথা ।
এতান্‌ ন হন্তুম্‌ ইচ্ছামি ঘ্নতঃ অপি মধুসুদন ।৩৪।।
অপি ত্রৈলোক্য রাজ্যস্য হেতোঃ কিম্‌ নু মহীকৃতে ।
অর্থ-হে গবিন্দ আমাদের রাজ্যে কি প্রায়োজন, আর সুখভোগ বা জীবন ধারনেই বা কী প্রোয়োজন, যখন দেখছি যাদের জন্য রাজ্য ও ভোগ সুখের কামনা, তারা সকলেই এই রণক্ষেত্রে উপস্থিত? হেমধুসুদন যখন আচার্য্য পিত্রিব্য পুত্র, মাতুল শ্বশুর পৌত্র শ্যালক আত্মীয়স্বজন ,প্রান ও ধনাদির আশা পরিত্যাগ করে আমার সামনে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছে, তখন তারা আমাকে বধ করলেও আমি তাদের হত্যা করতে চাইব কেন? হে সর্বজীবসত্তার প্রতিপলক জনার্দন, পৃথিবীর তো কথাই নাই এমন কি ত্রিভুবনের বিনিময়েও আমি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই। ধৃতরাষ্টের পুত্রদের নিধন করে কি সন্তোষ আমরা লাভ করতে পারব?
০১/৩৬
পাপম্‌ এব আশ্রয়েত্ অস্মান্‌ হত্বা এতান আততায়িনঃ ।
তস্মাত্ ন অর্হা বয়ম্‌ হন্তুম্‌ ধার্তরাষ্ট্রান সবান্ধবান ।
স্বজনম্‌ হি কথম্‌ হত্বা সুখিনঃ স্যাম মাধবম্‌ ।৩৬।
অর্থ-এই ধরনের আততায়িদের বধ করলে মহাপাপ আমাদের আচ্ছন্ন করবে। সুতরাং ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সংহার করা আমাদের উচিত্ হবে না। হে শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্মীপতি মাধব আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে কিলাভ হবে।এবং তা থেকে কেমন করে আমরা সুখী হব।
০১/৩৭,৩৮
যদি অপি এতে ন পশ্যতি লোভ উপহত চেতসা ।
কুলক্ষয় কৃতম্‌ দোষম্‌ মিত্রদ্রোহে চ পাতকম্‌ ।৩৭।
কথম্‌ ন জ্ঞেয়ম্‌ অস্মাভিঃ পাপাত্ অস্মাত্ নিবর্তিতুম্‌ ।
কুলক্ষয় কৃতম্‌ দোষম্‌ প্রপশ্যদ্ভিঃ জনার্দন ।৩৮।
অর্থ-হে জনার্দন যদিও এরা রাজ্যলোভে অভিভুত হয়ে কুলক্ষয় জনিত দোষ ও মিত্রদোহ নিমিত্ত পাপ লক্ষ করছে না, কিন্তু আমরা কুলক্ষয় জনিত দোষ লক্ষ্য করেও এই পাপ কাজে কেন প্রবৃত্ত হব।
০১/৩৯
কুলক্ষয়ে প্রণশ্যতি কুলধর্মাঃ সনাতনাঃ ।
ধর্মে নষ্টে কুলম্‌ কৃত্স্নম অধর্মঃ অভিভবতি উত ।৩৯।
অর্থ-কুলক্ষয় হলে সনাতন কুলধর্ম বিনষ্ট হবে এবং তা হলে সমগ্র বংশ অধর্মে অভিভুত হবে।
০১/৪০
অধর্ম অভিভবাত্ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রীয় ।
স্ত্রীষু দুষ্টাষু বাষ্ণেয় জায়তে বর্ন সংঙ্করঃ ।৪০।
অর্থ-হে কৃষ্ণ অধর্মের দ্বারা অভিভুত হলে কুলবধুগন ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং হে বাষ্ণেয় কুলস্ত্রীগন অসত্ চরিত্রা হলে অবাঞ্চিত প্রজাতি উত্পন্ন হয়।
০১/৪১
সঙ্করঃ নরকায় এব কুলঘ্নানাম্‌ কুলস্য চ ।
পতন্তি পিতরঃ হি এষাম্‌ লুপ্ত পিন্ড উদকক্রিয়াঃ ।৪১।
অর্থ-অবাষ্ণিত বর্ন সঙ্কর সন্তান উত্পাদন বৃদ্ধি হলে কুল ও কুলঘাতকেরা নরকগামী হয়। সেই কুলে পিন্ডদান ও তর্পনক্রিয়া লোপ পওয়ার ফলে তাদের পিতৃ পুরুষরাও নরকে অধঃপাতিত হয়।
০১/৪২
দোষৈঃ এতৈঃ কুলঘ্নানাম বর্নসঙ্কর কারকৈঃ ।
উত্সাদ্যন্তে জাতিধর্মাঃ কুলধর্মাঃ চ শাশ্বতাঃ ।৪২।
অর্থ-যারা বংশের ঐতিয্য নষ্ট করে এবং তার ফলে অবাষ্ণিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে,তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং বংশের কল্যানধর্ম উত্সন্নে যায়। ফলে সনাতন জাতিধর্ম ও কুলধর্মও বিনষ্ট হয়।
০১/৪৩
উত্সন্ন কুলধর্মানাম্‌ মনুষ্যনাম জনার্দন ।
নরকে নিয়তম্‌ বাসঃ ভবতী ইতি অনুশুশ্রুম্‌ ।৪৩।
অর্থ-হে জনার্দন যাদের কুলধর্ম নষ্ট হয়েছে তাদের নিয়ত নরকে বাস করতে হয়, আমি পরস্পরাক্রমে শুনেছি।
০১/৪৪
অহো বত মহত্ পাপম্‌ কর্তুম্‌ ব্যাবসিতা বয়ম্‌ ।
যত্ রাজ্যম্‌ সুখলোভেন হন্তুম্‌ স্বজনম্‌ উদ্যতাঃ ।৪৪।
অর্থ-হায়! কী দঃখের বিষয় যে রাজ্য সুখের লাভের আশায় স্বজনদের হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মহাপাপে প্রবৃত্ত হইতেছি।
০১/৪৫
যদি মাম্‌ অপ্রতিকারম্‌ অশস্ত্রম্‌ শস্ত্রপানয়ঃ ।
ধার্তরাষ্ট্রাঃ রনে হন্যুঃ তত্ মে ক্ষেমতরম ভবেত্ ।৪৫।
অর্থ-প্রতিরোধ রহিত ও নিরস্ত্র অবস্থায় আমাকে যদি শস্ত্রধারী ধৃতরাষ্টের পুত্রেরা যুদ্ধে বধ করে তাহা হলে আমার অধিকতর মঙ্গল হবে।
০১/৪৬
সঞ্জয় উবাচ
এবম্‌ উক্তাঃ অর্জুন সংখ্যে রথোপস্থ উপবিশত্ ।
বিশৃজ্য সশরম চাপম্‌ শোক সংবিগ্ন মানসঃ ।৪৬।
অর্থ-সঞ্জয় বললেন রনক্ষেত্রে এই কথা বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন। বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়


দ্বিতীয় অধ্যায়
সাংখ্য যোগ
                                    সঞ্জয় ঊবাচ
                         
তম্‌ তথা কৃপয়া আবিষ্টম অশ্রুপুর্ন আকুল ঈক্ষনম্‌ ।
 বিষীদন্তম ইদম্‌ বাক্যম্‌ উবাচ মধুসুদনঃ ॥১
অর্থ-সঞ্জয় বললেন অর্জুনকে এইভাবে অনুতপ্ত ব্যাকুল এবং অশ্রুশিক্ত দেখে কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসুদন শ্রীকৃষ্ণ বন্ধুভাবে অতি মিষ্টি স্বরে এই কথাগুলি বললেন।
       
ভগবান উবাচ
কুতঃ ত্বা কশ্মলম ইদম্‌ বিষমে সমুপস্থিতম্‌ ।
অনার্য্য জুষ্টম্‌ অস্বর্গ্যম্‌ অকীর্তি  করম্‌ অর্জুনঃ ॥২
অর্থ-ভগবান বললেন প্রিয় অর্জুন এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধেস্থলে যারা প্রকৃত জীবনের মুল্য বোঝেনা সে সব অনার্যের মত শোকানল তোমার হৃদয় কিভাবে প্রজ্জলিত হল। এই রকমের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নিত করবে না। পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট হবে।
        ক্লৈব্যম মা স্ম গমঃ পার্থ ন এতত্ ত্বয়ি উপপদ্যতে ।
        ক্ষুদ্রম্‌ হৃদয় দৌর্বল্যম্‌ ত্যাক্তা উত্তিষ্ঠ পরম তপ ॥৩
অর্থ-হে পার্থ এই অসন্মান জনক ক্লীবত্তের বশোবর্তি হয়োনা এই ধরনের আচরন তোমার পক্ষে অনুচিত্। হেপরন্তপ হৃদয়ের দুর্বলতা পরিত্যাগ করে উঠে দাড়াও।
                      অর্জুন উবাচ
        কথম ভীস্মম্‌ অহম্‌ সংখ্যে দ্রোনম্‌ চ মধুসুদন ।
        ইষুভিঃ প্রতিযোত্স্যামি পূজা অর্হৌ অরিসুদন ॥৪
অর্থ-অর্জুন বললেন হে মধুসুদন এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্ম এবং দ্রোনের মত পরম পূজনীয় ব্যাক্তিদের কেমন করে আমি বানের দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।


        গুরুন্‌ অহত্বা হি মহা-অনুভাবান
                          শ্রেয়ঃ ভোক্তুম্‌ ভৈক্ষ্যম্‌ অপি ইহ লোকে ।
        হত্বা অর্থ কামান্‌ তু গুরূন ইহ এব
                           ভূঞ্জীয় ভোগান রুধীর প্রদিগ্ধান্‌ ॥৫
অর্থ-আমার মহানুভব শিক্ষাগুরুদের জীবন হানি করে এই জগত্ ভোগ করার থেকে বরং ভিক্ষাকরে জীবন ধারন করা ভাল।তারা জড়জাগতিক লোভার্থী হলেও আমার গুরুজন। তাদের হত্যা করা হলে যুদ্ধলব্ধ ভোগ যে রক্ত মাখা হবে।
        ন চ এতত্ বিদ্মঃ কতরত্ ন গরিয়ঃ
                           যত্ বা জয়েম যদি বা নঃ জয়েয়ু ।
        যান এব হত্বা ন জিজী বিষামঃ
                            তে অবস্থিতাঃ প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ ॥৬
অর্থ-তাদের জয়করা ভাল না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া ভাল। তাও আমি বুজতে পারছি না।এই রনাঙ্গনে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ধৃতরাষ্টের যে পুত্রেরা তাদের হত্যা করা হলে আমাদের আর বেচে থাকতে ইচ্ছা করবে না।

        কার্পন্য দোশ উপহত স্বভাবঃ
                         পৃচ্ছামি ত্বাম ধর্ম সমূঢ় চেতাঃ ।
        যত্ শ্রেয় স্যাত্ নিশ্চিতম্‌ ব্রুহি তত্ মে
                         শিষ্যঃ তে অহম্‌ শাধিমাম তাম প্রপন্নম ॥৭

অর্থ-কার্পন্য জনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়েছি আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি,এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর। এখন আমি তোমার শিষ্য, সর্বত ভাবে তোমার শ্বরনাগত, দয়াকরে তুমি আমাকে শিক্ষা দাও।

        ন হি প্রপশ্যামি মম অপনুদ্যাত্
                           যত্ শোকম উচ্ছোষনম্‌ ইন্দ্রিয়ানাম্‌ ।
        অবাপ্য ভূমৌ অসপত্বম ঋদ্ধম্‌
                            রাজ্যম্‌ সুরানাম্‌ অপি চ অধিপত্যম্‌ ॥৮
অর্থ-আমার ইন্দ্রিয় গুলিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যে শোক তা যে কিভাবে আমি দুর করব তা আমি জানি না।স্বর্গের দেবতাদের মত আধিপত্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না।

                        সঞ্জয় উবাচ
        এবম্‌ উক্তা হৃষীকেশম্‌ গুড়াকেশঃ পরন্তপঃ ।
        ন য্যোত্স্য ইতি গোবিন্দম্‌ উক্তা তুঞ্চিম বভূবহ ॥৯
অর্থ-সঞ্জয় বললেন এই ভাবে তার মনোভাব ব্যাক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন,হে গবিন্দ,আমি যুদ্ধ করব না ,এই বলে তিনি মৌন হলেন।
        তম্‌ উবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্‌ ইব ভারত ॥
        সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে বিষীদন্তম্‌ ইদম্‌ বচঃ ॥১০॥
অর্থ-হে ভারত বংশীয় ধৃতরাষ্ট্র সে সময় স্মিত হেসে শ্রীকৃষ্ণ উভয় পক্ষেও সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদ গ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন।
        অশোচ্যান অন্বশোচঃ ত্বম প্রজ্ঞাবাদান চ ভাষসে ।
        গত অসুন অগত অসুন চ ন অনুশোচন্তি পন্ডিতাঃ ॥১১
অর্থ-ভগবান বললেন তুমি প্রজ্ঞের মত কথা বলছ অথচ যে বিষয়ে শোককরা উচিত্ নয় সে বিষয় শোক করছ। যারা যথার্থই পন্ডিত তারা কখনো জিবীত বা মৃত কারোর জন্য শোক করে না।

         ন তু এব অহম্‌ জাতু ন আসম ন ত্বম্‌ ইমে জনঅধিপা ।
        ন চ এব ভবিষ্যাম্‌ সর্বে বয়ম্‌ অতঃ পরম্‌ ॥১২
অর্থ-এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি,তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও দেহী কখনো আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না ।

        দেহীনঃ অস্মিন যথা দেহে কৌমারম্‌ যৌবনম্‌ জরা ।
        তথা দেহান্তর প্রাপ্তিঃ ধীরঃ তত্র ন মুহ্যতি ॥১৩
অর্থ-দেহী যে ভাবে কৌমার যৌবন এবং জরার মাধ্যমে দেহের রুপ পরিবর্তন করে চলে মৃত্যু কালে ঐ দেহী এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহন-রীত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পন্ডিতেরা কখনো এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হয় না ।
ি
        মাত্রা স্পর্শাঃ তু কৌন্তেয় শীত উষ্ণ সুখ দুঃখদাঃ ।
        আগম অপায়িনঃ অনিত্যাঃ তান তিতিক্ষস্য ভারত ॥১৪
অর্থ-হে কৌন্তয় ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্ত সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় সেগুলি যেন শীত এবং গৃস্ম ঋতুর গমনা গমনের মত। হে ভরত কুল প্রদীপ সেই ইন্দ্রিযাত অনুভূতির দ্বরা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলির সহ্য করার চেষ্টা কর।
        যম হি ন ব্যাথয়ন্তি এতে পুরুষম্‌ পুরুষ ঋৃষভ ।
        সম দুঃখ সুখম্‌ ধীরম্ সঃ অমৃতত্বায় কল্পতে ॥১৫
অর্থ-হে পুরুষ শ্রেষ্ট যে জ্ঞানি ব্যক্তি সুখ ও দুঃখ শীত উষ্ণ আদিদন্ধে বিচলিত হন না তিনি অমৃত তত্তের প্রকৃত অধিকারি হন।

        ন অসতঃ বিদ্যতে ভাবঃ ন অভাবঃ বিদ্যতে সতঃ ।
        উভয়ো অপি দৃষ্টাঃ অন্তঃ তু অনয়োঃ তত্ত দর্শিভিঃ ॥১৬
অর্থ-যারা তত্তদ্রষ্টা তারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্ত জড়বস্তুর স্থয়িত্ব নেই এবং নিত্তবস্তুর  আত্মার কখন বিনাশ হয় না। তত্ত্ব দ্রষ্টাগন উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরুপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে।

        অবিনাশি তু তত্ বিদ্ধি যেন সর্বম্‌ ইদম্‌ ততম্‌ ।
        বিনাশম অব্যয়স্য তস্য ন কশ্চিত্ কর্তুম্‌ অর্হতি ॥১৭
অর্থ-সমস্ত শরিরে পরিব্যপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা যেনেরেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
        অন্তবন্তঃ ইমে দেহাঃ নিত্যস্য উক্তাঃ শরীরিণ ।
        অনাশিনঃ অপ্রমেয়স্য তস্মাত্ যুধ্যস্ব ভারত ॥১৮
অর্থ-এই সমস্ত শরির অনিত্ত কিন্তু শরীরী আত্মা অবিনাশী। সেই আত্মার অতি সুক্ষ্মত্ব হেতু অপরিমেয়। অতএব হে ভারত তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।
        যঃ এনম্‌ বেত্তি হন্তারম্‌ যঃ চ এনম মন্যতে হতম্‌ ।
        উভৌ তৌ ন বিজানীত ন অয়ম্‌ হন্তি ন হন্যতে ॥১৯
অর্থ-যিনি জীব সত্তাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন তারা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরুপ জানেনা। কারন আত্মা কাউকে হত্মা করে না বা কারোর দ্বারা নিহত হন না।

        ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিত্
                      ন অয়ম্‌ ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ।
        অজঃ নিত্য শাশ্বতঃ অয়ম্‌ পুরানঃ
                       ন হন্যতে হন্যমানে শরিরে ॥২০
অর্থ-আত্মার কখনো জন্ম হয়না বা মৃত্যু হয় না। অথবা  পুনঃ পুনঃ তার উত্পত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্ত এবং নবীন। শরীর  নষ্ট হলেও  আত্ম কখনো বিনষ্ট হয় না।

        বেদ অবিনাশিনম্‌ নিত্যম যঃ এনম্‌ অজম্‌ অব্যয়ম্‌।
        কথম্‌ সঃ পুরুষঃ পার্থকম্‌ ঘাতয়তি হন্তিকম্‌ ॥২১
অর্থ-হেপার্থ যিনি এই আত্মাকে অবিনাশি, নিত্য, শাশ্বত, জন্ম-রহিত ও অক্ষয় বলে জানেন তিনি ভাবে কাউকে বধ বা হত্যা করতে পারে।

        বাসাংসি জীর্নানি যথা বিহায়
                         নবানি গৃহ্নাতি নরঃ অপরাণি ।
        তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণানি
                         অন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥২২
অর্থ-মানুষ যেমন জীর্ন বস্ত্র পরিত্যাগ করে নুতন বস্ত্র পরিধান করে দেহীও তেমনই জীর্ন শরির ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারন করে।
        ন এনম ছিন্দন্তি শাস্ত্রানি ন এনম্‌ দহতী পাবকঃ ।
        ন চ এনম ক্লেদয়ন্তি আপঃ ন শোষয়তি মারুতঃ ॥২৩
অর্থ-আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না আগুনে পোড়ান যায় না জলে ভেজান যায় না অথবা হাওয়ায় শুকানোও যায় না।

         অচ্ছেদ্যঃ অয়ম অদাহ্যঃ অয়ম অক্লেদ্যঃ অশোষ্যঃ এব চ ।
        নিত্য সর্বগত সর্ব-গতঃ স্থাণুঃ অচলঃ অয়ম্‌ সনাতনঃ ॥২৪
অর্থ-এই আত্মা অচ্ছেদ্য অদাহ্য অক্লেদ্য এবং অশোষ্য। তিনি চিরস্থায়ি সর্ব ব্যপ্ত অপরিবর্তনীয় অচল এবং সনাতন।

        অব্যক্তঃ অয়ম অচিন্ত্যঃ অয়ম অবিকার্যঃ অয়ম উচ্যতে ।
        তস্মাত্ এবম বিদিত্বা এনম ন অনুশোচিতুম্‌ অর্হসি ॥২৫       
অর্থ-এই আত্মা অব্যক্ত অচিন্ত ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরুপ অবগত হয়ে তুমি দেহীদের প্রতি শোক পরিত্যাগ কর।

        অথ চ এনম্‌ নিত্যজাতম্‌ নিত্যম্‌ বা মন্যসে মৃতম্‌ ।
        তথাপি ত্বম মহাবাহো ন এনম শোচিতুম অর্হসি ॥২৬
অর্থ-হে মহাবাহো আর তুমি যদি মনে কর যে আত্মার বার বার জন্ম হয় বা মৃত্যু হয় তা হলেও তোমার শোক করার কোন কারন নেই।

        জাতস্য হি ধ্রুবঃ মৃত্যু ধ্রুবম্‌ জন্ম মৃতস্য চ ।
        তস্মাত্ অপরিহার্যে অর্থে ন ত্বম্‌ শোচিতুম অর্হসি ॥২৭
অর্থ-যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবি এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত্ নয়।
        অব্যক্ত-আদীনি ভূতানি ব্যক্ত মধ্যানি ভারত ।
        অব্যক্ত নিধনানি এব তত্র কা পরিবেদনা ॥২৮
অর্থ-হে ভারত সমস্ত জীব উত্পন্ন হওয়র আগে অপ্রকাশিত ছিল। তাদের স্থিতি কালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং সেজন্য শোক করার কি কারন।

        আশ্চর্য্য বত্ পশ্যতি কশ্চিত্ এনম্‌
                         আশ্চর্য-বত্ বদতি তথা এব চ অন্যঃ ।
        আশ্চর্য-বত্ চ এনম্‌ অন্য শৃনোতি
                        শ্রুত্বা অপি এনম্‌ বেদ ন চ এব কশ্চিত্ ॥২৯
অর্থ-কেউ আত্মাকে আশ্চার্যবত্ দর্শন করেন,কেউ আশ্চর্য ভাবে বর্ননা করেন আবার কেউ আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবন করেন আর কেউ জেনে শুনেও বুজতে পারে না।
        দেহী নিত্যম অবধ্যঃ অয়ম্‌ দেহে সর্বস্য ভারত ॥
        তস্মাত্ সর্বানি ভূতানি ন ত্বম শোচিতুম অর্হসি ॥৩০॥
অর্থ-হে ভারত প্রানিদের দেহে অবস্তিত আত্মা সর্বদাই অবধ্য।সেজন্য কোন প্রাণীর দেহ ত্যাগে তোমার শোক করা উচিৎ নয়।

        স্বধর্মম অপি চ আবেক্ষ্য বিকম্পিতুম অর্হসি ।
        ধর্মাত্ হি যুদ্ধাত্ শ্রেয়ঃ অন্যাত্ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে ॥৩১
অর্থ-ক্ষত্রিয় রুপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করেও তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত্ নয়। কারন ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করা থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নাই।

        যদৃচ্ছয়া চ উপপন্নম স্বর্গদ্বারম্‌ ন করিষ্যসি ।
        সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধম্‌ ঈদৃশম্‌ ॥৩২
অর্থ-হে পার্থ স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তারা সুখী হন।


        অথ চেত্ ত্বম ইমম ধর্মম সংগ্রামম ন করিষসি ।
        ততঃ স্বধর্মম কীর্তিম্‌ চ হিত্বা পাপম্‌ অবাস্প্যসি ॥৩৩
অর্থ-কিন্তু তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তা হলে তোমার স্বীয়কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে।

        অকীর্তিম্‌ চ অপি ভূতানি কথয়িষ্যন্তি তে অব্যয়ম্‌ ।
        সম্ভাবিতস্য চ অকীর্তিঃ মরণাত্ অতিরিচ্যতে ॥৩৪
অর্থ-সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষে মৃত্যু অপেক্ষাও অত্যন্ত ক্ষতিকর এই অমর্যাদা।

        ভয়াত্ রনাত্ উপতরম্‌ মত্স্যন্তে ত্বাম্‌ মহাঃরথাঃ ।
        যেষাম চ ত্বম বহুমতঃ ভূত্বা যাস্যসি লাঘবম্‌ ॥৩৫
অর্থ-সমস্ত মহারথীরা মনে করেন যে তুমি ভয়পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানিত ছিলে তারা তোমাকে তুচ্ছ তাছিল্য জ্ঞান করবে।
        অবাচ্য বাদান বহুন বদিষ্যন্তি তব অহিত্যাঃ ।
        নিন্দন্তঃ তব  সামর্থন ততঃ দুঃখতরম্‌ নু কিম্‌ ॥৩৬
অর্থ-তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখকর তোমার পক্ষে কি হতে পারে।

        হতঃ বা প্রাপ্সসি স্বর্গম্‌ জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম ।
        তস্মাত্ উত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃত নিশ্চয়ঃ ॥৩৭
অর্থ-হে কুন্তীপুত্র এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্‌র্গ লাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্য সুখ ভোগ করবে  অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।

        সুখ দুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ ।
        ততঃ যুদ্ধায় যুজ্যস্ব ন এবম্‌ পাপম্‌ অবাপ্সসি ॥৩৮
অর্থ-সুখ-দুঃখ লাভ ক্ষতি জয় পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে যুদ্ধ করলে তোমাকে পাপ ভোগী হতে হবে না।

        এষা তে অবিহিতা সাংখ্যে বুদ্ধিঃ যোগে তু ইমাম্‌ শৃনু ।
        বুদ্ধাঃ যুক্তঃ যয়া পার্থ কর্মবন্ধম্‌ প্রহাসসি ॥৩৯
অর্থ-হে পার্থ আমি তোমাকে সাংখ্য যোগের কথা বললাম এখন ভক্তি যোগ সম্বন্ধিনী বুদ্ধির কথা শ্রবন কর যার প্রভাবে তুমি কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্ত হবে।

        ন ইহ অভিক্রম্‌ নাশ অস্তি প্রত্যবায়ঃ ন বিদ্যতে ।
        স্বল্পম্‌ অপি অস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতঃ ভয়াত্ ॥৪০
অর্থ-ভক্তি য়োগের অনুশিলন  কখনো ব্যর্থ হয় না এবং তার কোন ক্ষয় নাই। তার সল্প অনুষ্ঠান ও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররুপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।

        ব্যবসায়াত্মিকা বূদ্ধিঃ এক ইহ কুরু নন্দন ।        
        বহু শাখা হি অনন্তাঃ চ বুদ্ধয়ঃ অব্যবসায়িনাম ॥৪১
অর্থ-যারা এই পথ অবলম্বন করছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরু নন্দন অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহুশাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী।

        যামিমাম পুস্পিতাম্‌ বাচম্‌ প্রবদন্তি অবিপশ্চিতঃ ।
        বেদ বাদরতাঃ পার্থ ন অনাত্ অস্তি ইতি বাদিনঃ ॥৪২

        কামাত্মানঃ সর্গপরাঃ জন্মকর্ম ফল প্রদাম ।
        ক্রিয়াবিশেষ বহুলাম্‌ ভোগ ঐশ্বর্য্য গতিম প্রতি ॥৪৩
অর্থ-বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের পুস্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে সর্গ সুখ ভোগ উচ্চকুলে জন্ম ক্ষমতা লাভ ইত্যাদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয় সুখভোগ এবংঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে তার উর্ধ্বে আর কেউ নাই।

        ভোগ ঐশ্বর্য প্রশক্তানাম তয়া অপহৃত চেতসাম্‌।
        ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধি সমাধৌ ন বিধিয়তে ॥৪৪
অর্থ-যারা ভোগ ঐশ্বর্য্য সুখে আসক্ত সেই সমস্ত বিবেক বর্জিত ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাত্ ভগবানের একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।

        ত্রৈগুন্য বিষয়াঃ বেদাঃ নিস্ত্রৈগুন্যঃ ভব অর্জুন ।
        নির্দ্বন্দ্ব নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্যোগক্ষেমঃ আত্মবান ॥৪৫
অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুন সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন তুমি সেই গুন গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুনস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।

        যাবান অর্থ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুতোদকে ।
        তাবান সর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মনস্য বিজনতঃ ॥৪৬
অর্থ-ক্ষুদ্র জলাশয় যে সমসস্ত কার্য্য সাধিত হয় সে গুলি যেমন বৃহত্ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়। তেমনই ভগবানের উপসনার মাধ্যমে যিনি পরব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন তার কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য স্বাধিত হয়েছে।

        কর্মনি এব অধিকতরঃ তে মা ফলেষু কদাচন ।
        মা কর্মফল হেতুঃ ভূঃ মা তে সঙ্ঘ অস্ত অকর্মনি ॥৪৭
অর্থ-স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্ম ফলের হেতু মনে করো না  এবংকখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।

        যোগস্থঃ কুরু কর্মানি সঙ্গম্‌ ত্যাক্তা ধনঞ্জয় ।
        সিদ্ধ্যসিদ্ধৌঃ সমঃ ভূত্বা সমত্বম্‌ যোগঃ উচ্যতে ॥৪৮
অর্থ-হে অর্জুন ফল ভোগের কামনা পরি ত্যাগ করে ভক্তি যোগস্থ্য হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্মাচরন কর। কর্মের সিদ্ধি অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমবুদ্ধি তাকেই যোগ বলা হয়।
        দুরেন হি অবরম্‌ কর্ম বুদ্ধি-যোগাত্ ধনঞ্জয় ।
        বুদ্ধৌ শরনম্‌ কর্ম অন্বিচ্ছ কৃপনাঃ ফল হেতবঃ ॥৪৯
অর্থ-হে ধনঞ্জয় বুদ্ধি যোগ দ্বারা ভক্তির অনুশিলন করে সকাম কর্ম থেকে দুরে থাক। যারা কর্মের ফল ভোগ করতে চায় তারা কৃপন।

        বুদ্ধিযুক্তঃ জহাতি ইহ উভে সুকৃত-দুস্কৃতে ।
        তস্মাত্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্‌ ॥৫০
অর্থ-যিনি ভগবত্ ভক্তির অনুশিলন করেন তিনি এই জীবনেই পাপ পুন্য উভয় থেকে মুক্ত হন। সুতরাং হে অর্জুন তুমি নিস্কাম কর্ম যোগের অনুশিলন কর সেটাই হল সর্বাঙ্গিন কর্ম কৌশল।

        কর্মজম্‌ বুদ্ধিযুক্তাঃ হি ফলম্‌ ত্যক্তা মনিষিনঃ ।
        জন্মবন্ধ বিনিমুক্তাঃ পদম্‌ গচ্ছন্তি অনাময়ম্‌॥৫১
অর্থ-মনিষিগন ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের শ্বরনাগত হন। কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন।এইভাবে তারা সমস্ত দুঃখ দুর্দ্দশা থেকে মুক্ত হন।
        যদ তে মোহ কলিলম্‌ বুদ্ধিঃ ব্যতিতরিষ্যতি ।
        তদা গন্তাসি নির্বেদম্‌ শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ ॥৫২
অর্থ-এইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের অর্পিত নিস্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে তোমার বুদ্ধি মোহরুপ গভীর অরন্যকে সম্পুর্নরুপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ সেই সবের প্রতি সম্পুর্ণরুপে নিরপেক্ষ্য হয়ে বিশুদ্ধ ভক্তি সাধনে প্রবৃত্ত হবে।
        শ্রুতি বিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা ।
        সমাধৌ অচলা বুদ্ধি তদা যোগম্‌ অব্যপ্সসি ॥৫৩
অর্থ-তোমার বুদ্ধি যখন বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তি যোগে অধিষ্ঠিত হবে।
                    অর্জুন উবাচ
                         স্থীত প্রজ্ঞস্য কাভাষা সমাধিস্থস্য কেশব ।
        স্থীতধীঃ কিম্‌ প্রভাষেত কিম্‌ আসিত ব্রজেত্ কিম্‌ ॥৫৪
অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে কেশব স্থিতপ্রজ্ঞ অর্থাত্ অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষন কী? তিনি কিভাবে কথা বলেন কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি আচরন করেন।
                    ভগবান উবাচঃ
        প্রজহাতি যদা কামান সর্বান পার্থ মনোগতান ।
        আত্মনি এব আত্মনা তুষ্টঃ স্থীতপ্রজ্ঞঃ তদা উচ্যতে ॥৫৫
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ মানুষ যখন মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভুত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন আত্মাতেই পুর্ন পরিতৃপ্তি লাভ করে তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞা বলা হয়।

        দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ ।
        বীত রাগ ভয় ক্রোধঃ স্থিতধীঃ মুনিঃ উচ্যতে ॥৫৬
অর্থ-ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যার মন উদ্বিগ্ন হয় না,সুখ উপস্থিত হলেও যার স্পৃহা হয়না এবং যিনি অনুরাগ ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত তিনিই স্থিতধী অর্থাত্ স্থিতপ্রজ্ঞ।
        যঃ সর্বত্র অনভিস্নেহঃ তত্ তত্ প্রাপ্য শুভ অশুভম ।
        অভিনন্দতি ন দেষ্টি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৭
অর্থ-জড় জগতে যিনি সমস্থ জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত যিনি পৃয় বস্তু লাভে আনন্দিত হয় না এবং অপৃয় বিষয় উপসতহলে দুঃখিত হন না তার চেতন পুর্ন জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

        যদা সংহরতে চ অয়ম্‌ কুর্মঃ অঙ্গানি ইব সর্বশঃ ।
        ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৮
অর্থ-কুর্ম যেমন তার অঙ্গসমুহ তার কঠিন বহিরাবরনের মধ্যে সংঙ্কুচিত কওে, তেমনই যে ব্যাক্তি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন তার চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।

        বিষয়াঃ বিনিবর্তন্তে নিরাহারস্য দেহিনঃ ।
        রস বর্জম্‌ রস অপি অস্য পরম দৃষ্টা নিবর্ততে ॥৫৯
অর্থ-দেহবিশিষ্ট জীব ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ থেকে নিবৃত হতে পারে কিন্তু তবুও ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের আসক্তি থেকে যায়। কিন্তু উচ্চতর স্বাধ আস্বাদন করার ফলে সে বিষয়-তৃষ্ণা তিনি চিরতরে নিবৃত্ত হন।

        যততঃ হি অপি কৌন্তেয় পুরুষস্য বিপশ্চিতঃ ।
        ইন্দ্রিয়ানি প্রমাথীনি হরন্তি প্রসভম্‌ মনঃ ॥৬০
হে কৌন্তেয় ইন্দ্রিয় সমুহ এত বলবান এবং ক্ষোভকারি  যে তারা অতি যত্নশিল বিবেক সম্পন্ন পুরুষের মনকেও বল পুর্বক ষিয়াভিমুখে আকর্ষন করে।

        তানি সর্বনি সংযম্য যুক্তঃ আসীত মৎপরাঃ ।
        বশে হি যস্য ইন্দ্রিয়ানি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬১
অর্থ-যিনি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পুর্ন রুপে বশীভুত করে আমার প্রতি উত্তমা ভক্তিপরায়ন হয়ে তার ইন্দ্রিয়গুলিকে  সম্পুর্নরুপে বশীভুত করেছেন তিনিই স্থিতিপ্রজ্ঞ।
        ধ্যায়তঃ বিষয়ান পুংসঃ সংঙ্গ তেষু উপজায়তে ।
        সংঙ্গাত্ সঞ্জায়তে কামঃ কামাত্ ক্রোধঃ অভিজায়তে ॥৬২

        ক্রোধাত্ ভবতী সম্মোহঃ সম্মোহাত্ স্মৃতি বিভ্রমঃ ।
        স্মৃতিভ্রংশাত্ বুদ্ধিনাশঃ বুদ্ধিনাশাত্ প্রনশ্যতি ॥৬৩

অর্থ-ইন্দ্রিয় বিষয় চিন্তা করতে করতে মানুষের আশক্তি জন্মায় আশক্তি থেকে কামনার উদয় হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উত্পন্ন হয়। ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতি বিভ্রম, স্মৃতি বিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ হওয়র ফলে সর্বনাশ হয়। এবং মানুষ পুনরায় জড় জগতের অন্ধকুপে পতিত হয়।

        রাগ দ্বেষ বিমুক্তৈঃ তু বিষয়ান ইন্দ্রিয়ৈ চরন ।
        আত্মবশ্যৈঃ বিধেয়াত্মা প্রসাদম্‌ অধিগচ্ছতি ॥৬৪
অর্থ-সংযত চিত্ত মানুষ প্রিয় বস্তুতে স্বাভবিক আশক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে তার বশিভুত ইন্দ্রিয় দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশিলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করে।

        প্রসাদে সর্ব দুঃখানাম হানিঃ অস্য উপজায়তে ।
        প্রসন্নচেতসঃ হি আশু বুদ্ধিঃ পরি অবতিষ্ঠতে ॥৬৫
অর্থ-চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তখন তার জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না এইভাবে প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি স্থির হয়।

        নাস্তি বুদ্ধি অযুক্তস্য ন চ অযুক্তস্য ভাবনা ।
        ন্‌ চ অভাবয়তঃ শান্তি অশান্তস্য কুতঃ সুখম্‌ ॥৬৬
অর্থ-যে ব্যক্তি কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত নন তার চিত্ত সংযত নয় এবং তার পরমার্থিক বুদ্ধি থাকতে পারে না। আর পরমার্থ চিন্তাশুন্য ব্যক্তির বিষয় তৃষ্ণার বিরতি নেই। এই রকম বিষয়-তৃষ্ণাক্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত সুখ কোথায়।

    ইন্দ্রিয়ানাম্‌ হি চরতাম্‌ যত্ মনঃ অনুবিধিয়তে ।        
           তত্ অস হরতি প্রজ্ঞাম্‌ বায়ুঃ নাবম্‌ ইব অম্ভসি ॥৬৭
অর্থ-প্রতিকুল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে তেমনই সদা বিচরনকারি যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষনেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরন করতে পারে।
        তস্মাত্ যস্য মহাবাহো নিগৃহীতানি সর্বশঃ ।
        ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬৮
অর্থ-সুতরাং হে মহাবাহো যার ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে সর্ব প্রকার নিবৃত্ত হয়েছে তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।

        যা নিশা সর্ব ভূতানাম্‌ তস্যাম্‌ জাগর্তি সংযমী ।
        যস্যাম্‌ জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতঃ মুন্যেঃ ॥৬৯
অর্থ-সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রি স্বরুপ স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরীত থেকে আত্মবুদ্ধিনিষ্ঠ আনন্দকে সাক্ষাত্ অনুভব করেন। আর যখন সমস্ত জীবেরা জেগে থাকে স্থিতপ্রজ্ঞা ব্যক্তির কাছে তা রাত্রি স্বরুপ।

        আপুর্যমানম্‌ অচল প্রতিষ্ঠম
                      সমুদ্রম আপঃ প্রবিশন্তি যদ্বত্ ।
        তদ্বত্ কামাঃ যম্‌ প্রবিশন্তি সর্বে
              সঃ শান্তিম্‌ আপ্নোতি ন কামকামী ॥৭০
অর্থ-বিষয় কামি ব্যক্তি কখনো শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সদা পরিপুর্ন সমুদ্রে প্রবেশ করেও তাকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমুহও তেমন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে প্রবিষ্ট হয়েও তাকে বিক্ষুব্ধ করতে পারেনা অতএব তিনিই শান্তি লাভকরে,

        বিহায় কামান যঃ সর্বান পুমান চরতি নিঃস্পৃহঃ ।
        নির্মমঃ নিরহঙ্কারঃ সঃ শান্তিম্‌ অধিগচ্ছতি ॥৭১
অর্থ-যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিঃস্পৃহ হয়ে নিঃরহঙ্কার এবং মমত্ত্ব বোধ রহিত হয়ে বিচরন করেন তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করে।
        এষা ব্রাহ্মী স্থিতিঃ পার্থ ন এনাম্‌ প্রাপ্য বিমুহ্যতি ।
        স্থিত্বা অস্যাম্‌ অন্তকালে অপি ব্রহ্মনির্বানম্‌ ঋচ্ছতি ॥৭২
অর্থ-এই প্রকার স্থিতিকেই ব্রহ্মস্থিতি বলে। হেপার্থ যিনি এই স্থিতি লাভ করেন তিনিমোহ প্রাপ্ত হন না ।জীবনের অন্তিম সময় তিনি এইজড় জগতের বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করেন।

                    

তৃতীয় অধ্যায়

                       তৃতীয় অধ্যায়
                        কর্ম যোগ
                       অর্জুন উবাচ
        জ্যায়সী চেত্ কমৃনঃ তে মতা বুদ্ধিঃ জনার্দন ।
        তত্ কিম্‌ কর্মানি ঘোওে মাম্‌ নিয়োজয়সি কেশব ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন-হে জনার্দন হে কেশব যদি তোমার মতে ভক্তি বিষয়ীনি বুদ্ধি কর্ম থেকে শ্রেয়তর হয় তাহা হলে কেন আমাকে ভয়ানক যুদ্ধে নিযুক্ত হওয়ার জন্য  প্ররোচিত করছ।
        ব্যামিশ্রেন ইব বাক্যেন বুদ্ধিম্‌ মোহয়সী ইব মে ।
        তত্ একম্‌ বদ নিশ্চিত্য যে শ্রেয়ঃ অহম্‌ আপ্নুয়াম ।।২
অর্থ-তুমি যেন সন্দেহ জনক রুপে প্রতিয়মান বাক্যের দ্বারা আমার বুদ্ধি বিভ্রান্ত করছ। তাই দয়া করে আমাকে নিশ্চিত ভাবে বল কোনটি আমার পক্ষে সব চেয়ে শ্রেয়স্কর।
                        ভগবান উবাচ
        লোকে অস্মিন দ্বিবিধা নিষ্ঠা পুরা পোক্তা ময়া অনঘ ।
        জ্ঞান যোগেন সাংখ্যানাম কর্মযোগেন যোগিনাম্‌ ।।৩
অর্থ-ভগবান বললেন-হে অর্জুন আমি ইতিপুর্বে ব্যাখ্যা করেছি যে দুই প্রকার মানুষ অধ্যাত্মচেতনা উপরব্ধি করতে চেষ্টা করে।আর কিছু লোক দার্শনিক জ্ঞানের আলাচনার মাধ্যমে নিজকে জানতে চান এবং অন্যেরা আবার তা ভক্তির মাধ্যমে জানতে চান।
        ন কর্মনাম্‌ অনারম্ভাত্ নৈস্কর্মম্‌ পুরুষঃ অশ্নুতে ।
        ন চ সন্ন্যসনাত্ এব সিদ্ধিম্‌ সমধিগচ্ছতি ।।৪
অর্থ-কেবল কর্ম অনুষ্ঠান না করার মাধ্যমে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় না আবার কর্ম ত্যাগের মাধ্যমেও কেবল সিদ্ধি লাভ করা যায় না।

        ন হি কশ্চিত্ ক্ষনম্‌ অপি জাতু তিষ্টতি অকর্মকৃত্ ।
        কার্যতে হি অবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকির্তিজৈঃ গুনৈ ।।৫
অর্থ-সকলেই অসহায় ভাবে মায়াজাত গুন সমুহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কর্ম করতে বাধ্যহয় তাই কর্ম না করে ক্ষনকাল থাকতে পারে না।

        কর্মেন্দ্রিয়ানি সংযম্য যঃ আস্তেঃ মনসা স্মরন ।
        ইন্দ্রিয়ার্থান বিমুঢ় আত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে ।।৬
অর্থ-মুঢ় ব্যক্তি পঞ্চ কর্ম ইন্দ্রিয় সংযত করেও  মনে মনে শব্দ রসাদি ইন্দ্রিয়গুলি স্বরন করে সে অবশ্যই নিজকে বিভ্রান্ত করে এবং তাকে মিথ্যাচারি ভন্ড বলা হয়।
        যঃ তু ইন্দ্রিয়ানি মনসা নিয়ম্য আরভতে অর্জুন ।
        কর্মেন্দ্রিয়ৈঃ কর্ম যোগম্‌ অসক্তঃ সঃ বিশিষ্যতে ।।৭
অর্থ-কিন্তু যিনি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে অনাসক্ত ভাবে কর্ম অনুষ্ঠান করেন তিনি পুর্বক্ত মিথ্যাচারি  অপেক্ষা অনেক গুনে শ্রেষ্ঠ।

        নিয়তম্‌ কুরু কর্ম ত্বম কর্ম জ্যয়াঃ হি অকর্মনঃ ।
        শরির যাত্রা অপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেত্ অকর্মনঃ ।।৮
অর্থ-তুমি শাস্ত্রক্তো কর্ম অনুষ্ঠান কর কেননা কর্মত্যাগ থেকে কর্ম অনুষ্ঠা শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রা নির্বাহ করতে পারে না।

        যজ্ঞার্থাত্ কর্ম নত্ অন্যত্র লোকঃ অয়ম্‌ কর্ম বন্ধনঃ ।
        তত্ অর্থম কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসংঙ্গঃ সমাচর ।।৯
অর্থ-বিষ্ণুর প্রতি সম্পাদন করার জন্য কর্ম করা উচিত্ তা নাহলে কর্ম জীবকে জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করে। তাই হে কৌন্তেয় ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই কেবল তোমার কর্ত্যব্য অনুষ্ঠান কর এবং তার ফলে তুমি সদা সর্বদা জড় জগতের  বন্ধন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।

        সহ যজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্টা পুরা উবাচ প্রজাপতিঃ ।
        অনেন প্রসবিধ্বম এষঃ বঃ অস্তু ইষ্ট  কামাধূক ।।১০
অর্থ-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান যজ্ঞ সহ প্রজা সৃষ্টি করে বলেছিলেন এই যজ্ঞের দ্বারা তোমরা সর্বদা সমৃদ্ধ হও এই যজ্ঞ তোমাদের সমস্ত অভীষ্ট পুরন করবে।
        দেবান ভাবয়তা অনেন তে দেবাঃ ভাবয়ন্তু বঃ ।
        পরস্পরম্‌ ভবয়ন্তঃ শ্রেঃয় পরম্‌ অবাপ্সথ ।।১১
অর্থ-তোমাদের যজ্ঞ অনুষ্ঠানে প্রীত হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রীতি সাধন করবেন। এইভাবে পরস্পরের প্রীতি সম্পাদন করার মাধ্যমে তোমরা পরম মঙ্গল লাভ করবে।
        ইষ্টান ভোগান হি বঃ দেবাঃ দাস্যন্তে যজ্ঞ ভাবিতাঃ ।
        তৈঃ দত্তান অপ্রদায় এভ্যঃ যঃ ভূঙক্তে স্তেনঃ এব সঃ ।।১২
অর্থ-যজ্ঞের ফলে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রতি বাঞ্চিত ভোগ্যবস্তু প্রদান করবেন। সুতরাং দেবতাদের দেওয়া বস্তু তাদের নিবেদন না করে যিনি ভোগ করেন তিনি নিশ্চয় চোর।

        যজ্ঞশিষ্ট অশিনঃ সন্তঃ মুচ্যতে সর্ব কিল্বষৈঃ ।
        ভূঞ্জতে তে তু অঘম্পাপাঃ যে পচন্তি আত্মকারণাত্ ।।১৩
অর্থ-ভগবান ভক্তরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন কারন তারা ভগবানকে নিবেদন করে অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল সার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য অন্নপাক করে তারা কেবল পাপ ভোজন করে।

        অন্নাত্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাত্ অন্ন সম্ভবঃ ।
        যজ্ঞাত্ ভবতী পর্জন্যঃ যজ্ঞঃ কর্ম সমুদ্ভব ।।১৪
অর্থ-অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারন করেন, বৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্ন উত্পাদন হয়, যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে বৃষ্টি হয়, শাস্ত্রক্ত কর্ম থেকে যজ্ঞ উত্পন্ন হয়।

        কর্ম ব্রহ্ম উদ্ভবম্‌ বিদ্ধি ব্রহ্ম অক্ষর সমুদ্ভবম্‌ ।
        তস্মাত্ সর্বগতম্‌ ব্রহ্ম নিত্যম্‌ যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্‌ ।।১৫
অর্থ-যজ্ঞাদি কর্ম বেদ থেকে উদ্ভব হয়েছে এবং বেদ অক্ষর ভগবান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অতএব সর্বব্যপক ব্রহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্টিত আছেন।


        এবম্‌ প্রবর্তিতম্‌ চক্রম্‌ ন অনুবর্তয়তি ইহ যঃ ।
        অঘায়ূঃ ইন্দ্রিয়ারামঃ মোঘম্‌ পার্থ সঃ জীবতী ।।১৬
অর্থ-হে অর্জুন যে ব্যক্তি এই প্রকারে ভগবান কতৃক প্রবর্তিত যজ্ঞ অনুষ্ঠানের পন্থা অনুস্বরন করে না, সেই ইন্দ্রিয় সুখপরায়ন পাপী ব্যক্তি বৃথা জীবন ধারন করে।
        যঃ তু আত্মরতিঃ এব স্যাত্ আত্মতৃপ্তঃ চ মানবঃ ।
        আত্মনি এব চ সনতুষ্টঃ তস্য কার্য্যম্‌ ন বিদ্যতে ।।১৭
অর্থ-যে ব্যক্তি আত্মাতে প্রীত আত্মাতেই তৃপ্ত আত্মতেই সন্তুষ্ট তার কোন কর্তব্য নেই।
        ন এব তস্য কৃতেন অর্থ ন অকৃতেন ইহ কশ্চন ।
        ন চ তস্য সর্ব ভূতেষু কশ্চিত্ অর্থ ব্যপাশ্রয়ঃ ।।১৮
অর্থ-আত্মনন্দ অনুভবকারি ব্যক্তির ইহজগতে ধর্ম অনুষ্ঠানের কোন প্রয়োজন নেই, এবং কর্ম না করারও কোন কারন নেই।তাকে অন্য কোন প্রাণীর উপর নির্ভর করতেও হয় না।

        তস্মাত্ অসক্তঃ সততম্‌ কার্যম্‌ কর্ম সমাচর ।
        অসক্তঃ হি আচরন কর্ম পরম্‌ আপ্নোতি পুরুষঃ ।।১৯
অর্থ-অতএব কর্মফলের প্রতি আসক্তি রহিত হয়ে কর্তব্য কর্ম সম্পাদন কর, অনাসক্ত হয়ে কর্ম করার ফলেই পরা ভক্তি লাভ করা যায়।

        কর্মনা হি সংসিদ্ধিম্‌ আস্থিতাঃ জনকাদয়ঃ ।
        লোক সংগ্রহম্‌ এব অপি সংপশ্যন কর্তুম্‌ অর্হসি ।।২০
অর্থ-জনক প্রভৃতি মহারাজরাও কর্ম দ্বারা ভক্তিরুপ সংসিদ্ধি প্রাপ্তি হয়েছিল,অতএব জনসাধারনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমার কর্ম করা উচিত্।

           যত্ যত্ আচরতি শ্রেষ্ঠ তত্ তত্ এব ইতর জনঃ ।
        সঃ যত্ প্রমানম্‌ কুরুতে লোকঃ তত্ অনুবর্ততে ।।২১
অর্থ-শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যে ভাবে আচরন করেন সাধারন মানুষেরাও তার অনুকরন করেন। তিনি যা প্রমান বলে স্বীকার করেন অন্য লোকে তারই অনুকরন করে।

        ন মে পার্থ অস্তি কর্তব্যম্‌ ত্রিষু লোকেষু কিঞ্চন ।
        ন অনবাপ্তম্‌ অবাপ্তব্যম্‌ বর্ত এব চ কর্মণি ।।২২
অর্থ-হে পার্থ এই ত্রিজগতে আমার কিছুই কর্তব্য নেই। আমার অপ্রাপ্ত কিছু নেই এবং প্রাপ্তব্যও কিছু নেই তবুও আমি কর্মে ব্যপৃত আছি।

        যদি হি অহম্‌ ন বর্তেয়ম্‌ জাতু কর্মনি অতন্দ্রিতঃ ।
        মম্‌ বর্ত্ম অনুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ।।২৩
অর্থ-হে পার্থ আমি যদি অলস হয়ে শুভকর্মে প্রবৃত্ত না হই তবে আমার অনুবর্তি হয়ে সমস্ত মানুষই কর্ম ত্যাগ করবে।

                                                                     উত্সীদেয়ু ইমে লোকাঃ ন কুর্যাম্‌ কম চেত্ অহম্‌ ।           
           সঙ্করস্য চ কর্তা স্যাম উপহন্যাম্‌ ইমে প্রজাঃ ।।২৪
অর্থ-আমি যদি কর্ম না করি সমস্ত লোক উত্সন্ন হবে। আমি বর্নসঙ্কর আদি সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারন হব এবং তার ফলে সমস্ত প্রজা বিনষ্ট হবে।

        সক্তা কর্মনি অবিদ্ধাংসঃ যথা কুর্বন্তি ভারত ।
        কুর্যাত্ বিদ্ধান তথা অসক্তঃ চিকীর্ষুঃ লোক সংগ্রহম্‌ ।২৫।
অর্থ-হে ভারত অজ্ঞানিরা যেমন কর্ম ফলের প্রতি আসক্ত হয়ে তাদের কর্তব্য কর্ম করে তেমনী জ্ঞানিরা অনাসক্ত হয়ে প্রকৃত পথে মানুষকে পরিচালিত করার জন্য কর্ম করেন।

        ন বুদ্ধি ভেদম্‌ জনয়েত্ অজ্ঞানাম্‌ কর্মসংঙ্গিনাম্‌ ।
        জোযয়েত্ সর্ব কর্মানি বিদ্বান যুক্তঃ সমাচরম্‌ ।।২৬
অর্থ-জ্ঞানবান ব্যক্তিরা কর্মাসক্ত জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের বুদ্ধি বিভ্রান্ত করে ন। তারা ভক্তিযুক্ত চিত্তে সমস্ত কর্ম অনুষ্ঠান করে জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের কর্মে প্রবৃত্তি করে।

        প্রকৃতেঃ ক্রিয়া মানানি গুনৈঃ কর্মানি সর্বশঃ ।
        অহংঙ্কার বিমুঢ় আত্মা কর্তা অহম্‌ ইতি মন্যতে ।।২৭
অর্থ-মোহাচ্ছন্ন জীব প্রাকৃত অহংঙ্কার বশত জড়া প্রকৃতির ত্রিগুন দ্বারা ক্রিয়মান সমস্ত কার্য্যকে স্বীয় কার্যবলে মনে করে আমি কর্তা এই রকম অভিমান করে।

        তত্তবিত্ তু মহাবাহো গুনকর্ম বিভাগয়োঃ ।
        গুনাঃ গুনেষু বর্তন্তে ইতি মত্বা ন সজ্জতে ।।২৮
অর্থ-হে মহাবাহো তত্তজ্ঞ ব্যক্তি ভগবদ্ভক্তিমুখী কর্ম এবং সকাম কর্মের পার্তক্য ভালভবে অবগত হয়ে কখনো ইন্দ্রিয় সুখ ভোগাত্মক কার্য্যে প্রবৃত্ত হন না।



        প্রকৃতৈঃ গুন সংমূঢ়া সজ্জন্তে গুনকর্মষু ।
        তান অকৃত্স্নবিদঃ মন্দান্‌ কৃত্স্নবিত্ ন বিচাল্যতে ।।২৯
অর্থ-জড়া প্রকৃতির ত্রিগুনের দ্বারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে অজ্ঞান ব্যক্তিরা জাগতিক কার্য্য কলাপে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু তাদের সেইকর্ম নিকৃষ্ট হলেও তত্তজ্ঞানি পুরুষেরা তাদের বিচলিত করে না।

        ময়ি সর্বানি কর্মানি সংনস্য অধ্যাত্ম চেতসা ।
        নিরাশীঃ নির্মমঃ ভূত্বা যুধ্যস্য বিগতজ্বরঃ ।।৩০
অর্থ-হে অর্জুন তোমার সমস্ত কর্ম আমাকে সমর্পন করে আধ্যত্ম চেতনা সম্পন্ন হয়ে মমতা শুন্য নিস্কাম ও শোক শুন্য হয়ে যুদ্ধ কর।

        যে মে মতম্‌ ইদম্‌ নিত্যম অনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ ।
        শ্রদ্ধাবন্ত অনুসুয়ন্ত মূচ্যন্তে তে অপি কর্মভিঃ ।।৩১
অর্থ-আমার নির্দ্দেশ অনুসারে শ্রদ্ধাবান এবং মাত্সর্য রহিত যিনি তার কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান করেন, তিনি কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তহন।

        যে তু অভ্যসুয়ন্ত ন অনুতিষ্ঠন্তি মে মতম্‌ ।
        সর্বজ্ঞান বিমূঢ়ান তান বিদ্ধি নষ্টান অচেতসাঃ ।।৩২
অর্থ-কিন্ত যারা অসুয়া পুর্বক আমার এই উপদেশ পালন করে না তাদের সমস্ত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত বিমূঢ় এবং পরমার্থ লাভের সকল প্রচেষ্টা থেকে ভ্রষ্ট বলে জানবে।


        সদৃশম্‌ চেষ্টতে সস্ব্যাঃ প্রকৃতেঃ জ্ঞানবান অপি ।
        প্রকৃতিম্‌ যান্তি ভূতানি নিগ্রহঃ কিম্‌ করিষ্যতি ।।৩৩
অর্থ-গুনবান ব্যক্তিও তার প্রকৃতি অনুসারে কার্যকরেন কারন সকলেই তাদের স্বীয় স্বভাবকে অনুগমন করেন। সুতরাং দমন করে কি লাভ হবে?

        ইন্দ্রিয়স্য ইন্দ্রিয়স্যার্থে রাগ দেষৌ ব্যবস্থিতৌ ।
        তয়োঃ ন বশম্‌ আগচ্ছেত্ তৌ হি অস্য পরিপন্থিনৌ ।।৩৪
অর্থ-সমস্ত জীবই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুতে আসক্তি অথবা বিরক্তি অনুভব করে, কিন্তু এইভাবে ইন্দ্রিয় এবংইন্দ্রিয়ের বিষয়ের বশীভুত হওয়া উচিত্ নয়, কারন তা পারমার্থিক প্রগতির পথে প্রতিবন্ধক।

        শ্রেয়ান স্বধর্মঃ বিগুনঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্ঠিতাত্ ।
        স্বধর্মে নিধনম্‌ শ্রেয়ঃ পরধর্মঃ ভয়বহঃ ।।৩৫
অর্থ-স্বধর্মের অনুষ্ঠান দোষযুক্ত হলেও উত্তমরুপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম থেকে উত্কৃষ্ট। স্বধর্ম সাধনে যদি মৃত্যু হয় তাও মঙ্গল জনক কি অন্যের ধর্মের অনুষ্ঠান করা বিপদ জনক।
                          অর্জুন উবাচ
        অথ কেন প্রযুক্ত অয়ম্‌ পাপম্‌ চরতি পুরুষ ।
        অনিচ্ছন অপি বাঞ্চেয় বলাত্ ইব নিয়োজিত ।৩৬।
অর্থ-অর্জুন বললেন হে বার্ঞ্চেয়, মানুষ কারদ্বারা চালিত হয়ে অনিচ্ছা সত্তেও যেন বলপুর্বক নিয়োজিত হয়েই পাপাচারনে প্রবৃত্তহয়?

                        ভগবান উবাচ
                           কাম এষঃ ক্রোধ এষঃ রজোগুন সমুদ্ভবম্‌ ।
         মহাশনঃ মহাপাপ্না বিদ্ধি এনম্‌ ইহ বৈরিনম্‌ ।৩৭।
অর্থ-ভগবান বললেন হেঅর্জুন রজোগুন থেকে কাম মানুষকে এই পাপে প্রবৃত্ত করে এবং এই কামই ক্রোধে পরিনত হয়। কাম হল সর্বগ্রাসী এবং পাপাত্মক; কামকেই জীবনের প্রধান শত্রু বলে জানবে।

        ধুমেন আব্রিয়তে বহ্নিঃ যথা আদর্শঃ মলেন চ ।
        যথা উল্বেন আবৃতঃ গর্ভঃ তথা তেন ইদম আবৃতম্‌ ।৩৮।
অর্থ-অগ্নি যেমন ধুমদ্বরা আবৃত থাকে এবং দর্পন যেমন ময়লার দ্বারা আবৃত থাকে অথবা গর্ভ যেমন জরায়ুদ্বারা আবৃত্ত থাকে তেমনই জীব সত্ত্বা বিভিন্ন মাত্রায় এই কামের দ্বারা আবৃত্ত থাকে।

        আবৃতম্‌ জ্ঞানম এতেন জ্ঞানিনঃ নিত্য বৈরিনা ।
        কামরুপেন কৌন্তেয় দুস্পুরেন অনলেন চ ।৩৯।
অর্থ-কামরুপি চিরশত্রু দ্বারা মানুষের শুদ্ধ চেতনা আবৃত্ত। এই কাম দুর্বারিত অগ্নির মত চির অতৃপ্ত।

        ইন্দ্রিয়ানি মন বুদ্ধিঃ অস্য অধিষ্ঠানম্‌ উচ্যতে ।
        এতৈঃ বিমোহয়তি এষঃ জ্ঞানম আবৃত্য দেহিনম্‌ ।৪০।
অর্থ-ইন্দ্রিয় সমুহ মন এবং বুদ্ধি এই কামের আশ্রয়স্থল যার মাধ্যমে কাম জীবের প্রকৃত জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে তাকে বিভ্রান্ত করে।


        তস্মাত্ ত্বম্‌ ইন্দ্রিয়ানি আদৌ নিয়ম্য ভরতর্ষভ ।
        পাপমানম্‌ প্রজাহি হি এনম্‌ জ্ঞন বিজ্ঞান নাশনম্‌ ।।৪১
অর্থ-অতএব হে ভারত শ্রেষ্ট তুমি প্রথমে ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ত্রিত করার মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞান নাশক পাপের প্রতিক রুপ কামকে বিনাশ কর।
               
ইন্দ্রিয়ানি পরানি আহুঃ ইন্দ্রিয়েভ্যঃ পরম্‌ মনঃ ।
        মনসঃ তু পরা বুদ্ধিঃ যঃ বুদ্ধেঃ পরতঃ তু সঃ ।।৪২
অর্থ-স্থুলজড় পদার্থের থেকে ইন্দ্রিয়গুলি শ্রেয়,ইন্দ্রিয়ের থেকে মন শ্রেয় মন থেকে বুদ্ধি শ্রেয় এবং তিনি (আত্মা) সেই বুদ্ধি থেকেও শ্রেয়।
৪৩।এবম্ বুদ্ধেঃ পরম বুদ্ধা সংস্তভ্য আত্মনম্ আত্মনা।
  জহী শত্রুম্ মহাবাহো কামরুপম্দুরাসদম্।।
অর্থ-হে মহাবির অর্জুন নিজেকে জড় ইন্দ্রীয়,মন এবং বুদ্ধির অতীত জেনে চিত্শক্তির দ্বারা নিকৃষ্ট বৃত্তিকে সংযত করে কামরুপ দুর্জয় শত্রুকে জয় কর।       

চতুর্থ অধ্যায়

                
                      চতুর্থ অধ্যায়
                                        জ্ঞান যোগ

                                      ভগবান উবাচ
ভগবান উবাচ
        ইমম বিবস্বতে যোগম্‌ প্রোক্তবান অহম্‌ অব্যয়ম্‌ ।
        বিবস্বান মনবে প্রাহ মনুঃ ইক্ষাকবে অব্রবীত্ ।।১
অর্থ-ভগবান বললেন-অমি পুর্বে সুর্য্যদেব বিবশ্বানকে এই অব্যয় নিস্কাম কর্মসাধ্য জ্ঞান যোগ বলে ছিলাম। সুর্য তা মানবজাতির জনক মনুকে বলেন এবং মনু তা ইক্ষাকুকে বলেছিলেন।
        এবম্‌ পরম্পরা প্রাপ্তম্‌ ইমম্‌ রাজর্ষয বিদুঃ ।
                 সঃ কালেন ইহ মহতা যোগঃ নষ্টঃ পরন্তপ ।।২
অর্থ-এই ভাবে পরম্পরের মাধ্যমে এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিরা লাভ করেছিল কিন্তু কালের প্রভাবে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিল এবং সেই যোগ নষ্টপ্রায় হয়েছে।

        সঃ এব অয়ম্‌ ময়া তে অদ্য যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতন ।
        ভক্তঃ অসি মে সখ্য ইতি রহস্যম্‌ হি এতত্ উত্তমম্‌ ।।৩
অর্থ-সেই সনাতন যোগ আজ তোমাকে বললাম কারন তুমি আমার ভক্ত ও সখা তাই তুমি এই বিজ্ঞানের অতি গুরুরহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।

                         অর্জুন উবাচ
        অপরম্‌ ভবতঃ জন্ম পরম জন্ম বিবস্বতঃ ।
        কথম্‌ এতত্ বিজানিয়াম্‌ ত্বম আদৌ প্রক্তবান ইতি ।।৪
অর্থ-অর্জুন বললেন সুর্যদেব বিবশ্বানের জন্ম হয়েছিল আপনার জন্মের অনেক পুর্বে। আপনি সৃষ্টির প্ররম্ভে তাকে এই জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন তা আমি কিকরে জানব।



                      
   ভগবান উবাচ
        বহুনী মে ব্যতীতানি জন্মানি তব অর্জুন ।
        তানি অহম্‌ বেদ সর্বানি ন ত্বম্‌ বেত্থ পরন্তপ ।।৫
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পরন্তপ অর্জুন আমার এবং তোমার বহুজনম অতিত হয়েছে, আমি সে সমস্ত জন্মের কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার না।

        অজ অপি সন অব্যয় আত্মা ভূতানাম্‌ ঈশ্বর অপি সন ।
        প্রকৃতিম্‌ স্বাম অধিষ্ঠায় সম্ভবামি আত্মমায়য়া ।।৬
অর্থ-যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্ব ভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা আমার আদি চিন্ময় রুপে যুগে যুগে অবতির্ন হই।

        যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানিঃ ভবতি ভারত ।
        অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদা আত্মনম্‌ সৃজামি অহম্‌ ।।৭
অর্থ-হে ভরত যখনই ধর্মের অধঃপতন হয়এবং অধর্মের অভূত্থান হয় তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতির্ন হই।

        পরিত্রানায় সাধুনাম বিনাশায়ঃ চ দুস্কৃতম্‌ ।
        ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে ।।৮
অর্থ-সধুদের পরিত্রান করার জন্য এবং দুস্কৃত কারিদের বিনাশ করার জন্যএবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতির্ন হই।

        জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্‌ এবম্‌ যঃ বেত্তি তত্ত্বতঃ ।
        ত্যাক্তা দেহম্‌ পুনঃ জন্ম ন এতি মাম এতি সঃ অজৃুন ।।৯
অর্থ-হে অর্জুন যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম এবং কর্ম যথাযথ ভাবে জানেন তাকে আর দেহ ত্যাগ করার পর পুনরায় জন্ম গ্রহন করতে হয় না তিনি আমার নিত্য ধাম লাভ করে।

        বীত রাগ ভয় ক্রোধাঃ মন্ময়া  মাম্‌ উপাশ্রিতাঃ ।
        বহবঃ জ্ঞান তপসা পুতাঃ মদ্ভাবম আগতাঃ ।।১০
অর্থ-আসক্তি ভয় ক্রোধ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পুর্নরুপে আমাতে মগ্ন হয়ে, একান্ত ভাবে আমার আশ্রিত হয়ে, পুর্বে বহু বহু ব্যক্তি আমার জ্ঞান লাভ করে পবিত্র হয়েছে এবং সেই ভাবে সকলেই আমার প্রীতি লাভ করিয়াছে।

যে যথঅ মাম প্রপদ্যন্তে তান তথঅ এব ভজামি অহম্‌ ।
মম বর্ত অনুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ।।১১
অর্থ-যে যেভাবে আমার প্রতি আত্ম সমর্পন করে,প্রপত্তি স্বীকার করে,আমি তাকে সেইভাবেই পুরুষকৃত করি। হেপার্থ সকলেই সর্বতেভাবে আমার অনুসরন করে।

        কাঙ্ক্ষন্ত কর্মনাম সিদ্ধিম্‌ যজন্তে ইহ দেবতাঃ ।
        ক্ষিপ্রম্‌ হি মানুষে লোকে সিদ্ধির্ভবতি কর্মজা ।।১২
অর্থ-এই জগতে মনিুষ সকাম কর্মের সিদ্ধি কামনা করে এবং তাই তারা বিভিন্ন দেব দেবীর উপসনা করে।সকাম কর্মের ফল অতি শীগ্রই লাভ কহয়।

        চাতুর্বর্ন্‌ ময়া সৃষ্টম্‌ গুনকর্ম বিভাগশঃ ।
        তস্য কর্তরম্‌ অপি মাম্‌ বিদ্ধি অকর্তারম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।১৩
অর্থ-প্রকির্তির তিনটি গুন এবং কর্ম অনুসারে  আমি মানুষ সমাজে চারিটি বর্নবিভাগ সৃষ্টি করিয়ছি । আমিই এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।
        ন মাম্‌ কর্মানি লিম্পন্তি ন মে কর্মফলে স্পৃহা ।
        ইতি মাম্‌ যঃ অভিজানাতি কর্মভিঃ ন সঃ বধ্যতে ।।১৪
অর্থ-কোন কর্ম আমাকে প্রভাবিত করতে পারে না এবং আমিও কোন কর্মফলের আকাঙ্খা করি না। আমার এই তত্ত যে জানেন তিনি কখনো সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।
        এবম্‌ জ্ঞাত্বা কৃতম্‌ কর্ম পুবৈঃ অপি মুমুক্ষুভি ।
        কুরু কর্ম এব তস্মাত্ ত্বম পুবৈঃ পুর্বতরম্‌ কৃতম্‌ ।।১৫

অর্থ-প্রাচিনকালে সমস্ত পুরুষেরা এই তত্ত অবগত হয়ে সকাম কর্ম পরিত্যাগ করে মুক্তি লাভ করেছেন।অতএব তুমিও সেই প্রাচিন মহাজনের মত চিন্ময় চেতনায় তোমার কর্তব্য সম্পাদন কর।

        কিম কর্ম কিম অকর্ম ইতি কবয়ঃ অপি অত্র মহিতাঃ ।
                          তত্ তে কর্ম প্রবক্ষামি যত্ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসে অশুভাত্ ।।১৬
অর্থ-কাকে কর্ম কাকে অকর্ম বলে তা স্থির করতে বিবেকী ব্যক্তিরাও মোহিত হন। আমি সেই বিষয় তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি। তুমি তা অবগত হয়ে সমস্ত অশুভ অবস্থা থেকে মুক্ত হও।

        কর্মনঃ হি অপি বোদ্ধব্যম্‌ বোদ্ধব্যম্‌ চ বিকর্মনঃ ।
        অকর্মন চ বোদ্ধব্যম্‌ গহনা কর্মনঃ গতিঃ ।।১৭
অর্থ-কর্মের নিগুর তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করা অত্যন্ত কঠিন। তাই কর্ম বিকর্ম এবং অকর্ম সম্বন্ধে যথাযথ ভাবে জানা কর্তব্য।

        কর্মনি অকর্ম যঃ পশ্যেত্ অকর্মনি চ কর্ম যঃ ।
        সঃ বুদ্ধিমান মনুষ্যেসু সঃ যুক্তঃ কৃত্স্ন কর্মকৃত্ ।।১৮
অর্থ-যিনি কর্মে অকর্ম দর্শন করেন এবং অকর্মে কর্ম দর্শন করেন,তিনিই মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান। সবরকম কর্মে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি চিনন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত।

        যস্য সর্বে সমারম্ভাঃ  কাম সংকল্প বর্জিতাঃ ।
        জ্ঞান অগ্নি দগ্ধ কর্মানাম তম্‌ আহুঃ পন্ডিতম্‌ বুধাঃ ।।১৯
অর্থ-যার সমস্ত প্রচেষ্টা কাম এবং সংকল্প রহিত তিনি পুর্নজ্ঞানে অধিষ্ঠিত।জ্ঞানিগন বলেন যে তার সমস্ত কর্মের প্রতিক্রিয়া পরিশুদ্ধ জ্ঞানাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হইয়াছে।

        ত্যাক্তা কর্মফলাসঙ্গম্‌ নিত্য তৃপ্ত নিরাশ্রয়ঃ ।
        কর্মনি অভিপ্রবৃত্তঃ অপি ন এব কিঞ্চিত্ করতি সঃ ।।২০
অর্থ-কর্মফলের আসক্তি সম্পুর্নরুপে ত্যাগ করে সর্বদা তৃপ্ত এবং কোন  রকম আশ্রয়ের অপেক্ষা যিনি করেন না, সব রকম কর্মে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি কর্ম ফলের আশায় কোনও কিছইু করেন না।
        নিরাশীঃ যত চিত্তাত্মা ত্যক্ত সর্ব পরিগ্রহ ।
        শরিরম্‌ কেবলম্‌ কর্ম কুর্বন ন আপ্নোতি কিল্লিষম্‌ ।।২১
অর্থ-এই প্রকার জ্ঞানিব্যক্তি তার মন এবং বুদ্ধিকে সর্বোতভাবে সংযত করে কার্য করেন।তিনি ফলেরআশা পরিত্যাগ করে এবং প্রভূত্ত করার প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবল জীবন ধারনের জন্য কর্ম করেন। এই ভাবে কর্ম করার ফলে কোন রকম পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

        যদৃচ্ছা লাভ সন্তুষ্টঃ দ্বন্ধ অতিতঃ বিমত্সরঃ ।
        সম সিদ্ধৌ অসিদ্ধৌ চ কৃত্বা অপি ন নিবধ্যতে ।।২২
অর্থ-যিনি অনায়সে যা লাভ করেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন,যিনি সুখ-দুঃখ রাগ দ্বেষ ইত্যাদি দ্বন্ধের বশীভূত হন না এবং মাত্সর্যশুন্য,যিনি কার্যের সাফল্য এবং অসাফল্যে অবিচালিত থাকেন তিনি কর্ম সম্পাদন করলেও কর্মফলের দ্বারা কখনো আবদ্ধ হয় না।

        গতসঙ্গস্য মুক্তস্য জ্ঞানাবস্থিত চেতসাঃ ।
        যজ্ঞায় আচরতঃ কর্ম সমগ্রম্‌ প্রবলিয়তে ।।২৩
অর্থ-জড়া প্রকৃতির গুনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জ্ঞাননিষ্ট ব্যক্তি ভগবানের উদ্দেশ্যে সমর্পিত যজ্ঞের উদ্দেশ্যে যে কর্ম সম্পাদন করেন সে সকল কর্ম সম্পুর্নরুপে লয় প্রাপ্ত হয়।
        ব্রহ্ম অর্পনম্‌ ব্রহ্ম হবিঃ ব্রহ্ম অগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্‌ ।
        ব্রহ্ম এব তেন গন্তব্যম্‌ ব্রহ্ম কর্ম সমাধিনা ।।২৪
অর্থ-যিনি কৃষ্ণ ভাবনায় সম্পুর্ন মগ্ন তিনি অবশ্যই চিত্জগতে উন্নিত হবেন,কারন তার সমস্ত কার্য কলাপ চিন্ময়।তার কর্মের উদ্দেশ্য চিন্ময় এবং সেই উদ্দেশ্যে তিনি যা নিবেদন করেন তাও চিন্ময়।

        দৈবম্‌ এব অপরে যজ্ঞম্‌ যোগিনঃ পর্যুপাসতে ।
        ব্রহ্ম অগ্নৌ অপরে যজ্ঞম্‌ যজ্ঞেন এব উপযুহ্বতী ।।২৫
অর্থ-কোন যোগী অধীদেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করার মাধ্যমে তাদের উপসনা করেন।আবার ,অন্য অনেক পরম ব্রহ্মরুপ অগ্নিতে সব কিছু নিবেদন করার মাধ্যমে যজ্ঞ করেন।
        শ্রোত্রাদীনি ইন্দ্রিয়ানি অন্যে সংযম্‌ অগ্নিষু জুহ্বতী ।
        শব্দদীন্‌ বিষয়ান অন্যে ইন্দ্রিয় অগ্নিষু জুহ্বতী ।।২৬
অর্থ-কেউ কেউ মন সংযম রুপ অগ্নিতে শ্রবন আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি দেন আবার অন্য অনেকে ( নিয়মনিষ্ঠ গৃহস্তেরা) শব্দাদি ইন্দ্রিয়ের বিষয়কে ইন্দ্রিয়রুপ অগ্নিতে আহুতি দেন।
        সর্বানি ইন্দ্রিয় কর্মানি প্রান কর্মানি চ অপরে ।
        আত্ম সংযম্‌ যোগ অগ্নৌ জুহ্বতী জ্ঞান দীপিতে ।।২৭
অর্থ-মন এবংইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে যারা আত্মজ্ঞান লাভের প্রয়াসী তারা তাদের ইন্দ্রিয় সমস্ত কার্য কলাপ এবং প্রান বায়ুর দ্বারা  প্রদীপ্ত আত্মা সংযমরুপ অগ্নিতে আহুতী দেন।
                          দ্রব্যযজ্ঞঃ তপোযজ্ঞঃ যোগযজ্ঞঃ তথা অপরে ।      
        সাধ্যায় জ্ঞানযজ্ঞাঃ চ যতঃ সংশিত ব্রতাঃ ।।২৮
অর্থ-কেউ কেউ দ্রব্য দানরুপ যজ্ঞ করেন। কেউ কেউ তপস্যারুপ যজ্ঞ করেন কেউ কেউ অষ্টাঙ্গ যোগরুপ যজ্ঞ করেন এবং   অন্য অনেকে পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য বেদ অধ্যায়নরুপ যজ্ঞ করেন।
        অপানে জুহ্বতীপ্রাণম্‌ প্রাণে অপানম তথা অপরে ।
        প্রাণ অপান গতী রুদ্ধা প্রাণায়াম্‌ পরায়ণাঃ ।
        অপরে নিয়ত আহারাঃ প্রাণান প্রানেষু জুহ্বতী ।।২৯
অর্থ-আর যারা প্রাণায়াম চচ্চায় আগ্রহী তারা অপান বায়ুকে প্রাণবায়ুতে এবং প্রান বায়কে অপান বায়ুতে আহূতী দিয়ে অবশেষে প্রাাণ এবং অপান বয়ুর গতী রোধ করে সমাধিস্থ হন। কেউ আবার আহার সংযম করে প্রাণ বায়ুকে প্রাণবয়ুতেই আহুতী দেন।
        সর্বে অপি এতে যজ্ঞবিদঃ যজ্ঞ ক্ষপিত কল্মষাঃ ।
        যজ্ঞশিষ্ট অমৃতভূজঃ যান্তি ব্রহ্ম সনাতনম্‌ ।।৩০
অর্থ-তারা সকলে যজ্ঞ তত্তবিত্ এবং যজ্ঞের প্রভাবে পাপমুক্ত হয়ে তারা যজ্ঞশিষ্ট অমৃত আস্ব্বাদন করেন। তারপর সনাতন প্রকৃতিতে ফিরে যান।
    ন অয়ম্‌ লোকাঃ অস্তি অযজ্ঞস্য কুতঃ অন্যঃ কুরুসত্তম্‌ ।।৩১
অর্থ-যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে কেউ এই জগতে সুখে থাকতে পারে না, সুতরাং পরলোক প্রাপ্তির পরে তাদের কি হবে?
        এবম্‌ বহুবিধাঃ যজ্ঞাঃ বিততাঃ ব্রাহ্মন মুখে ।
        কর্মজান বিদ্ধি তান সর্বান এবম্‌ জ্ঞাত্বা বিমক্ষ্যসে ।।৩২
অর্থ-এই সমস্ত যজ্ঞই বৈদিগ শাস্ত্রে অনুমোদিত হয়েছে এবংএই সমস্ত যজ্ঞ বিভিন্ন প্রকার কর্মজাত। তা যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে তুমি মুক্তি লাভ করতে পারবে।

        শ্রেয়ান দ্রব্যময়াত্ যজ্ঞাত্ জ্ঞানযজ্ঞঃ পরন্তপ ।
        সর্বম্‌ কর্ম অখিলম্‌ পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে ।।৩৩
অর্থ-হে পান্ডব দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়-হে পার্থ সমস্ত কর্মই চিন্ময় জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ করে।
        তত্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া ।
        উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানম্‌ জ্ঞানিনঃ তত্ত্বঃ দর্শিনঃ ।।৩৪
অর্থ-সদগুরু শরনাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃতিম সেবার দ্বারা তাকে সন্তুষ্ট কর তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষ তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবে।
        যত্ জ্ঞাত্বা ন পুন মোহম এবম্‌ যাস্যসি পান্ডবা ।
        যেন ভূতানি অশেষানি দ্রক্ষ্যসি আত্মনি অথো ময়ি ।।৩৫
অর্থ-হে পান্ডব এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না।যখন জানবে সমস্থ জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।
        অপি চেত্ অসি পাপেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পাপ কৃত্তমঃ ।
         সর্বম জ্ঞানপ্ল্লাবেন এব বৃজিনম্‌ সন্তরিষ্যসি ।।৩৬
অর্থ-তুমি যদি পাপিদের চেয়েও পাপিষ্ট হয়ে বলে গন্য হয়ে থাক,তা হলে এই জ্ঞানরুপ তরনীতে আরেহন করে তুমি দুঃখ সমুদ্র পার হতে পারবে।

        যথা এধাংসী সমিদ্ধঃ অগ্নিঃ ভস্মস্যাঃ কুরুতে অর্জুন ।
        জ্ঞানাগ্নি সর্ব কর্মানি ভস্মস্যাত্ কুরুতে তথা ।।৩৭
অর্থ-প্রবল রুপে প্রজ্জলিত অগ্নি যেমন কাষ্টকে ভস্মস্যাত্ করে ,হে অর্জুন তেমনী জ্ঞানাগ্নি সমস্ত কর্মকে দগ্ধ করে ফেলে।

        ন হি জ্ঞানেন সদৃশম্‌ পবিত্রম্‌ ইহ বিদ্যতে ।
        তত্ সময় যোগ সংসিদ্ধঃ কালেন আত্মনি বিন্দতি ।।৩৮
অর্থ-চিন্ময় তত্ত্ব জ্ঞানের মত পবিত্র পদার্থ এই জগতে আর নাই। এই জ্ঞান সমস্ত যোগের ফলশ্রুতি এবং ভক্তি চর্চ্চার মাধ্যমে যিনি সেই জ্ঞান আয়ত্ত করেন,তিনি কালক্রমে আত্মার পরাশক্তি লাভ করে।
                                                                                                                                                                                  শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্‌ তত্পরঃ সংযত ইন্দ্রিয়ঃ।
        জ্ঞানম্‌ লব্ধা পরাম্‌ শান্তিম্‌ অচিরেন অধিগচ্ছতি ।।৩৯
অর্থ-সংযতেন্দ্রিয় ও তত্পর হয়ে চিন্ময় তত্ত্বজ্ঞানে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি এইজ্ঞান লাভ করেন,সেই দিব্যজ্ঞান লাভ করে তিনি অচিরেই পরাশান্তি লাভ হন।

        অজ্ঞঃ চ অশ্রদ্দধ্যানঃ চ সংশয় আত্মা বিনশ্যতি ।
        ন অয়ম লোক অস্তি ন পরাঃ ন সুখম্‌ সংশয় আত্মম ।।৪০
অর্থ-মুর্খ এবং শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখন ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না।সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহ লোকে সুখভোগ করতে পারে না এবং পরলোকেও সুখভোগ করতে পারে না।
        যোগ সংন্যাস্ত কর্মনাম জ্ঞান সংছিন্ন সংশয়ম ।
        আত্মবন্তম ন কর্মনি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।।৪১ 
অর্থ-অতএব হে ধনঞ্জয় যিনি নিস্কাম কর্ম যোগের দ্বারা কর্মত্যাগ করেন,জ্ঞনের দ্বারা সংশয় নাশ করেন এবং আত্মার চিন্ময় সরুপ অবগত হন তাকে কোন কর্মে আবদ্ধ করতে পারে না।
        তস্মাত্ অজ্ঞান সম্ভূতম্‌ হৃত্স্তম জ্ঞান অসিনা আত্মনঃ ।
        ছিত্ত্বা এনম্‌ সংশয়ম যোগম্‌ অতিষ্ঠ উতিষ্ঠ ভারত ।।৪২
অর্থ-হে ভারত তোমার হৃদয় যে অজ্ঞান প্রসুত সংশয়ের উদয় হয়েছে তা জ্ঞানরুপ
খড়গের দ্বারা ছিন্ন কর। যোগাশ্রয় করে যুদ্ধ করার জন্য উঠে দাড়াও।





                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                      
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                   



পঞ্চম্ অধ্যায়

  পঞ্চম অধ্যায়
                     কর্ম সন্নাস যোগ
                        অর্জুন উবাচ
                 সন্নাসম্ কর্মনাম্ কৃষ্ণ পুনঃ যোগম্ চ শংসসি ।
        যত্ শ্রেয়ঃ এতয়ো একম্ তত্ মে ব্রুহি সুনিশ্চিতম্ ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন হে কৃষ্ণ প্রথম তুমি আমাকে কর্ম ত্যাগ করতে বললে,এবং তারপর কর্তব্য কর্মের অনুষ্ঠান করতে বললে।এই দুটির মধ্যে কোনটি অধিকতর কল্যানকর তা সুনিশ্চিত ভাবে আমাকে বল।
                       ভগবান উবাচ
        সন্ন্যাসঃকর্মযোগঃ চ নিঃশ্রেয়সকরৌ উভৌ ।
        তয়ো তু কর্মসন্ন্যাসাত্ কর্মযোগঃ বিশিষ্যতে ।।২
অর্থ-ভগবান বললেন-কর্ম ত্যাগ এবং কর্ম-যোগ উভয়েই মুক্তি দায়ক। এই দুটির মধ্যে কর্মযোগ কর্মসন্নাস থেকে শ্রেয়।

        জ্ঞেয় সঃ নিত্য সন্নাসী যঃ ন দেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি ।
        নির্দ্ধন্ধঃ মহাবাহো সুখম্ বন্ধাত্ প্রমুচ্যতে ।।৩
অর্থ-হে মহাবাহো যিনি নির্দ্ধন্ধ এবং কর্মফলের প্রতি আকাঙ্খা করে না তিনিই নিত্য সন্নাসী তিনিই পরম সুখে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করে।

        সাংখ্য যোগৌ পৃথক বালাঃ প্রবদন্তি ন পন্ডিতাঃ ।
        একম্ অপি আস্থিতঃ সম্যক উভয়োঃ বিন্দতে ফলম ।।৪
অর্থ- মুর্খেরাই কেবল কর্মযোগ সাংখ্য যোগ পৃথক বলে মনে করে।পন্ডিতেরা তা বলে না।সাংখ্যযোগ বা কর্মযোগ যেটাকেই সুন্দও রুপে আচরন কর তাতেই উভয়ে উভয়ের ফল লাভ করতে পারবে।
        যত্ সাঃ খ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তত্ যোগৈঃ অপি গম্যতে।
        একম্ সাংখ্যম্ চ যোগম্ চ যঃ পশ্যতি সঃ পশ্যতি ।।৫
অর্থ-যিনি জানেন কর্ম ত্যাগের মাধ্যমে যে গতী লাভ হয়,কর্মযোগের দ্বারাও সেই গতি প্রাপ্ত হওয়া যায়,এবং তাই যিনি কর্ম যোগ ও কর্ম ত্যাকে এক বলে জানেন তিনিই যথার্থ তত্তদ্রষ্টা।
        সন্নাসঃ তু মহাবাহো দুঃখম্ আপ্তুম্ অযোগতঃ ।
        যোগযুক্তঃ মুনি ব্রহ্ম ন চিরেন অধিগচ্ছতি ।।৬
অর্থ-হে মহাবাহো কর্মযোগ ব্যতীত কেবল কর্ম ত্যাগরুপ সন্নাস দুঃখ জনক,যোগ যুক্ত মানুষ অচিরেই পরম গতী লাভ করে।

        যোগযুক্তঃ বিশুদ্ধত্মা বিজিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ ।
        সর্বভূতাত্মা ভূতাত্মা কুর্বন্নপি ন লিপ্যতে ।।৭
অর্থ-যোগযুক্ত জ্ঞানি ত্রিবিধ বিশুদ্ধ বুদ্ধি বিশুদ্ধ চিত্ত এবং জিতেন্দ্রিয়। তারা সমস্ত জীবের অনুরাগভাজন হয়ে সমস্ত কর্ম করেও লিপ্ত হয় না।

        ন এব কিঞ্চিত্ করোমি ইতি যুক্ত মন্যেতে তত্ত্ববিত্ ।
        পশ্যন শূন্বন স্পৃশন জিঘ্রন অশ্নন গ্চ্ছন স্বপন শ্বসন ।।৮

        প্রলপন বিসৃজন গৃহ্নন উন্মিষন নিমিষন অপি ।
        ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেষু বর্তন্তে ইতি ধারয়ন ।।৯
অর্থ-চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তি দর্শন শ্রবন স্পর্শ ঘ্রান ভোজন গমন নিদ্রা ও নিশ্বাষ,আদিক্রিয়া করেও সর্বদা জানেন যে প্রকৃত পক্ষে কিছুই করছেন না। কারন প্রলাপ, দ্রব্য ত্যাগ, দ্রব্য গ্রহন, চক্ষুর উন্মেষ এবং নিমেষ করার সময় তিনি সব সময় জানেন যে, জড় ইন্দ্রিয়গুলিই কেবল ইন্দ্রিয়ের বিষয় প্রবৃত্ত হয়েছে, তিনি নিজে কিছুই করছে না।

        ব্রহ্মণি আধায় কর্মাণি সঙ্গম্ ত্যত্ত্বা করোতি যঃ ।
        লিপ্যতে ন সঃ পাপেন পদ্মপত্রম্ ইব অম্ভসা ।।১০
অর্থ-যিনি আসক্ত হয়ে কর্ম করেন এবং কর্মের সমস্থ ফল পরমেশ্বর ভগবানকে অর্পন করেন, কোন পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না ঠিক যেমন জল পদ্মপাতাকে স্পর্শ করতে পারে না।

        কায়েন মনসা বুদ্ধা কেবলৈঃ ইন্দ্রিয়ৈ অপি ।
        যোগিনঃ কর্ম কুর্বন্তি সঙ্গম্ ত্যক্তা আত্ম শুদ্ধয়ে ।।১১
অর্থ-আত্ম শুদ্ধির জন্য যোগিরা কর্ম ফলের আসক্তি ত্যাগকরে। দেহ মন বুদ্ধি এমনকি ইন্দ্রিয় দ্বারাও কর্ম করে।

                যুক্তঃ কর্মফল ত্যাক্তা শান্তিম্ আপ্নোতি নৈষ্টিকীম্ ।
                অযুক্তঃ কাম্ কারেন ফলে সক্তঃ নিবধ্যতে ।।১২
অর্থ-যোগি কর্মফল ত্যাগ করে নৈষ্টিক শান্তি লাভ করেন কিন্তু সকাম কর্মি কর্মফলের প্রতি আসক্ত হয়ে কর্ম করার ফলে কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

        সর্ব কর্মানি মনসা সংনস্য আস্তে সুখম্ বশী ।
        নবদ্বারে পুরে দেহী ন এব কুর্বন ন কারয়ন ।।১৩
অর্থ-বাহ্যে সমস্ত কার্য্য করেও মনের দ্বারা সমস্ত কার্য্য ত্যাগ করে জীব নবদ্বার বিশিষ্ট দেহরুপ গৃহে পরম সুখে বাস করতে থাকেন,তিনি নিজেও কিছু করেন না এবং কাউকে দিয়েও কিছু করান না।
ন কর্তৃত্বম ন কর্মানি লোকস্য সৃজতি প্রভূ ।
ন কর্মফল সংযোগম্ স্বভাবঃ তু প্রবর্ততে ।।১৪
অর্থ-দেহরুপ নগরীর প্রভূ জীব, কর্মসৃষ্টি করে না, সে কাউকে দিয়ে কিছু করান না বিভূএবং সে কর্মের ফল সৃষ্টি করে না এই সবই হয় জড়া প্রকৃতির গুনের প্রভাবে।

        ন আদত্তে কস্যচিত্ পাপম্ চ এব সুকৃতম্ ।
        অজ্ঞানেন আবৃতম্ জ্ঞানম্ তেন মুহ্যতি জন্তবঃ ।।১৫
অর্থ-ভগবান জীবের পাপ এবং পুন্য কিছুই গ্রহন করেন না।অজ্ঞানের দ্বারা আবৃত হওয়ার ফলে জীবসত্তা এই প্রকৃত জ্ঞান সম্পর্কে মোহাচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

        জ্ঞনেন তু তত্ অজ্ঞানম্ যেষাম্ নাশিতম্ আত্মনঃ ।
        তেষাম্ আদিত্যবত্ জ্ঞানম্ প্রকাশয়তি তত্ পরম্ ।১৬।
অর্থ-জ্ঞানের প্রভাবে যখন অজ্ঞান বিনষ্ট হয় তখন তার কাছে সব কিছু যথাযথ ভাবে প্রকাশিত হয়; ঠিক যেমন দিন মানে সুর্যের উদয়ে সব কিছু প্রকাশিত হয়।


        তদ্বুদ্ধয় তদাত্মনঃ তন্নিষ্ঠাঃ তত্পরায়নাঃ ।
        গচ্ছন্তি অপুনরা বৃত্তিম জ্ঞান নির্ধুত কল্মষাঃ ।।১৭
অর্থ-যার বুদ্ধি ভগবানের প্রতি উন্মুখ হয়েছে মন ভগবানের চিন্তায় একাগ্র হয়েছে, নিষ্টা ভগবানে দৃঢ় হয়েছে,এবং যিনি ভগবানকে তার একমাত্র আশ্রয় বলে গ্রহন করেছেন,জ্ঞানের দ্বারা তার সমস্ত কলুষ সম্পুর্নরুপে বিধৌত হয়েছে এবং তিনি জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছে।

        বিদ্যা বিনয় সম্পন্নে ব্রহ্মনে গবি হস্তিনি ।
        শুনি চ এব শ্বপাকে চ পন্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ।।১৮
অর্থ-যথার্থ জ্ঞানবান পন্ডিত বিদ্যাবিনয় সম্পন্ন ব্রাহ্মন গাভী হস্তি,কুকুর ও চন্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শি হয়।

        ইহ এব তৈঃ জিতঃ সর্গ যেষাম্ সাম্যে স্থিতম্ মনঃ ।
        নির্দোশম হি সমম ব্রহ্ম তস্মাত্ ব্রহ্মনি তে স্থিতাঃ ।।১৯
অর্থ-যাদের মন সাম্যে অবস্থিত হয়েছে তারা ইহ লোকেই সংসার জয় করেছেন।তারা ব্রহ্মের মতো নির্দোশ।তারা ব্রহ্মতেই অবস্থিত হয়ে আছে।

        প্রহৃষ্যেত্ প্রিয়ম প্রাপ্য ন উদ্ধিজেত্ প্রাপ্য চ অপ্রিয়ম ।
        স্থির বুদ্ধি অসংমুঢ় ব্রহ্মবিদ ব্রহ্মনি স্থিত ।।২০
অর্থ-যে ব্যক্তি প্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতে উত্ফুল্য হয় না এবং অপ্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতেও বিচলিত হয় না,যিনি স্থিরবুদ্ধি মোহশুন্য এবং ভগবত্ তত্ত্ববেত্তা তিনি ব্রহ্মতেই অবস্থিত রয়েছে।

        বাহ্যস্পর্শেষু অসক্তত্মা বিন্দতি আত্মনি যত্ সুখম্ ।
        সঃ ব্রহ্ম যোগযুক্তত্মা সুখম্ অক্ষরম অশ্নুতে ।২১।
অর্থ-সেই ব্রহ্মবিদ পুরুষ কোন রকম জড় ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের প্রতি আকৃষ্ট হন না, তিনি চিত্জগত্ সুখ লাভ করেন।ব্রহ্মে যোগযুক্ত হয়ে তিনি অক্ষয় সুখ ভোগ করেন।

        যে হি সংস্পর্শেজাঃ ভোগাঃ দুঃখ যোনয়ঃ এব তে ।
        আদি অন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন তেষু রমতে বুধঃ ।।২২
  অর্থ-বিবেকবান পুরুষ ইন্দ্রিয়জাত দুঃখজনক বিষয় ভোগে আসক্ত হন না।হে কৌন্তেয় এই ধরনের সুখ-ভোগ উত্পত্তি হয় এবং বিনাশশীল।তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা তাতে প্রীতি লাভ করেন না।

        শক্নোতি ইহৈব যঃ সোঢুম্ প্রাক শরির বিমোক্ষণাত্ ।
        কাম ক্রোধ উদ্ভবম্ বেগম্ সঃ যুক্তঃ সঃ সুখী নরঃ ।।২৩
অর্থ-এই দেহ ত্যাগ করার পুর্বে যিনি কাম ক্রোধ ইত্যাতির বেগ সহ্য করতে সক্ষম হন, তিনিই যোগী এবং এই জগতে তিনিই সুখী হন।

        যঃ অন্তঃ-সুখঃ অন্তরারামঃ তথা অন্তর্জোতিঃ এব যঃ ।
        সঃযোগী ব্রহ্ম নির্বানম্ ব্রহ্মভূতঃ অধিগচ্ছতি ।।২৪
অর্থ-যিনি আত্মাতেই সুখ অনুভব করেন যিনি আত্মাতেই ক্রীড়াযুক্ত এবং আত্মজ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত তিনিই যোগী এবং তিনিই ব্রহ্ম নির্বান লাভ করেন।

        লভন্তে ব্রহ্মনির্বানম ঋষয় ক্ষীন কল্মষাঃ ।
        ছিন্ন দ্বৈধাঃ যতাত্মনঃ সর্বভূত হিতে রতাঃ ।।২৫
অর্থ-সংযত চিত্তে সমস্ত জীবের কল্যানেরত এবং সংশয় রহিত নিস্পাপ ঋষীগন ব্রহ্ম নির্বান লাভ করে।
        কাম ক্রোধ বিমুক্তানাম্ যতীনাম্ যতচেতসাম্ ।
        অভিতঃ ব্রহ্ম নির্বানম্ বর্ততে বিদিতাত্মনাম্ ।।২৬
অর্থ-কাম ক্রোধ শুন্য সংযত চিত্ত আত্মতত্ত্ব সন্নাসিরা অচিরেই ব্রহ্ম লাভ করেন।

        স্পর্শান কৃত্বা বহিঃ বাহ্যান চক্ষুঃ চ এব অন্তরে ভ্রুবোঃ ।
        প্রাণাপাণৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তর চারিনৌ ।।২৭

        যত ইন্দ্রিয় মনঃ বুদ্ধি মুনি মোক্ষ পরায়ণঃ ।
        বিগত ইচ্ছা ভয় ক্রোধঃ যঃ সদা মুক্তঃ এব সঃ ।।২৮
অর্থ-মন থেকে বাহ্যজ্ঞান প্রত্যাহার করে,ভ্রুযুগলের মধ্যে দৃষ্টি স্থির করে, নাসিকার মধ্যে বিচরনশীল প্রান ও অপান বায়ুর উর্দ্ধ ও অধোগতি রোধ করে, ইন্দ্রিয় মন ও বুদ্ধি সংযম করে ভয় ও ক্রোধ শুন্য হয়ে যে মুনি সর্বদা বিরাজ করেন,তিনিই নিশ্চিতভাবে জীবন্মুক্ত।


        ভোক্তারম যজ্ঞ তপষাম সর্বলোক মহেশ্বরম্ ।
        সুহৃদম্ সর্বভূতানাম্ জ্ঞাত্বা মাম্ শান্তিম্ ঋচ্ছতি ।।২৯
অর্থ-আমাকে সমস্ত যজ্ঞ এবং তপস্যার পরম উদ্দেশ্যরুপে জেনে সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সকলের উপকারি সুহৃদরুপে আমাকে জেনে যোগীরা জড়জগতের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করে।

                  
               

ষষ্ঠ অধ্যায়

ষষ্ঠ অধ্যায়
                  অভ্যাস যোগ
            ভগবান উবাচ
        অনাশ্রিতঃ কর্মফলম্ কার্যম্ করতি যঃ ॥
        সঃ সন্নাসী চ যোগী চ নিরগ্নি ন চ অক্রিয়ঃ ॥১॥
অর্থ-ভগবান বললেন-যিনি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন তিনি সন্নাসী বা যোগীনন,যিনি কোন রকম ফলের আশা না করে তার কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্নাসী বা যোগী।
        যম্ সন্নাসম্ ইতি প্রাহুঃ যোগম্ তম্ পান্ডব ॥
        ন হি অসংন্যস্ত সংকল্পঃ যোগী ভবতী কশ্চন ॥২॥
অর্থ-হে পান্ডব যাকে সন্নাস বলা যায় তাকেই যোগ বলা যায় কারন ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনো যোগী হওয়া যায় না।

        আরুরুক্ষোঃ মুনেঃ যোগম কর্ম কারনম্ উচ্যতে ॥
        যোগ আরুঢ়স্য তস্য এব শমঃ কারনম্ উচ্যতে ॥৩॥
অর্থ-অষ্টাংঙ্গ যোগ অনুষ্ঠানে যারা নবীন তাদের পক্ষে নিস্কাম কর্ম অনুষ্ঠান করাই উত্কৃষ্ট সাধন, আর যারা ইতিমধ্যে যোগরুঢ় হয়েছেন তাদেও পক্ষে সমস্ত কর্ম থেকে নিবৃত্তিই উত্কৃষ্ট সাধন।

        যদা হি ন ইন্দ্রিয়ার্থেষু ন কর্মসু অনুসজ্জতে ॥
        সর্ব সঙ্কল্প সন্নাসী যোগরুঢ় তদা উচ্যতে ॥৪॥
অর্থ-যখন যোগীর জড়সুখ ভোগের সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে ইন্দ্রিয় ভোগ্য বিষয়ের প্রতি আসক্ত রহিত হন তখন তারে যোগরুর বলা হয়।
                      আত্মনা আত্মনম্ ন আত্মনম অবসাদয়েত্ ॥
        আত্মা এব হি আত্মন বন্ধু আত্মা এব রিপুঃ আত্মনঃ ॥৫॥
অর্থ-মানুষের কর্তব্য তার মনের দ্বারা নিজেকে জড় জগতের বন্ধন থেকে উদ্ধার করা,মনের দ্বারা আত্মাকে অধোপাতিত করা কখনো উচিত্ নয়।মন জীবের অবস্থা ভেদে বন্ধু ও শত্রু হয়।
        বন্ধু আত্মা আত্মনঃ তস্য যেন আত্মা এব আত্মনা জিতঃ ॥
        অনাত্মনঃ তু শত্রুত্বে বর্তেত আত্বৈব শত্রুবত্ ॥৬॥
অর্থ-যিনি তার মনকে জয় করেছে তার মন তার পরম বন্ধু কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম তার মন তার পরম শত্রু।
        জিতাত্মনঃ প্রশান্তস্য পরমাত্মা সমাহিতঃ ॥
        শীত উষ্ণ সুখ-দুঃখেষু তথা মান অপোমানয়ো ॥৭॥
অর্থ- জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্ত যোগরুঢ় ব্যক্তি পরমার্থকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি শীত ও উষ্ণ সুখ দুঃখ্যে এবং সন্মান অপমানে অবিচালিত থাকেন।

        জ্ঞান বিজ্ঞান তৃপ্ত আত্মা কুটস্থঃ বিজিতেন্দ্রিয়ঃ ॥
        যুক্ত ইতি উচ্যতে যোগী  সমলোষ্ট্র  অশ্ম কাঞ্চনঃ ॥৮॥
অর্থ-যে যোগী শাস্ত্রজ্ঞান ও তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত,যিনি শীত উষ্ণ আদি দন্ধে নির্বিকার ও জিতেদ্রিয় এবং যিনি মৃতখন্ড প্রস্তর ও সুবর্ণে সর্বদর্শি তিনি যোগরুঢ় বলে কথিত হন।
       
        সুহৃত্ মিত্র অরি উদাসীন মধ্যস্ত দ্বেষ্য বন্ধুষু ॥
        সাধুষু অপি চ পাপেষু সমবুদ্ধিঃ বিশিষ্যতে ॥৯॥

অর্থ-যিনি সহৃত্ মিত্র শত্রু উদাসিন মধ্যস্ত মত্সর বন্ধু ধার্মিক ও পাপাচারি এবং সকলের প্রতি সমবুদ্ধি তিনিই শ্রেষ্ঠতা লাভ করেন।
       
        যোগী যুঞ্জিত সততম আত্মানাম রহসি স্থিতঃ ॥
        একাকী যতচিত্তাত্মা নিরাশীঃ অপরিগ্রাহঃ ॥১০॥

অর্থ-যোগরুঢ় ব্যক্তি সর্বদা একান্তে অবস্থিত হয়ে মনকে সমাধিযুক্ত করবেন।অসত্ পরিগ্রহ বর্জন করবেন এবং ফলাকাঙ্খা শূন্য হবেন।
       
                শুচৌ দেশে প্রতিষ্ঠপ্য স্থিরম আসনম্ আত্মনঃ ॥
                ন অতি উচ্ছ্রিতম্ ন অতি নীচম্ চেলাজিন কুশত্তরম ॥১১॥

                         অত্র একাগ্রম মনঃ কৃত্বা যতচিত্ত ইন্দ্রিয় ক্রিয়ঃ ॥
                উপবিশ্য আসনে যুঞ্জাত্ যোগম আত্ম বিশুদ্ধয়ে ॥১২॥
অর্থ-যোগ আসনের নিয়ম এই যে কুশাষনের উপর মৃগচর্মের আসন তার উপরে বস্ত্রাশন রেখে অত্যন্ত উচু বা অত্যন্ত নিচু না করে সেই আসন বিশুদ্ধ ভূমিতে স্থাপন করে তাতে আসিন হবেন।সেখানে উপবিষ্ট হয়ে চিত্ত ইন্দ্রিয় ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে চিত্ত শুদ্ধির জন্য মনকে একাগ্র করে যোগ অভ্যাষ করবেন।

        সমম্ কায়শির গ্রীবম্ ধারয়ন অচলম্ স্থির ॥
        সংপ্রেক্ষ্য নাসিকাগ্রম স্বম্ দিশঃ চ অনবলোকয়ন ॥১৩॥

        প্রশান্ত আত্মা বিগতভী ব্রহ্মচারিব্রতে স্থিতঃ ॥
        মনঃ সংযম্য মত্ চিত্তঃ যুক্তঃ আসিত মত্ পরঃ ॥১৪॥
অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

যুঞ্জন এবম সদা আত্মনাম্ যোগী নিয়ত মানসঃ
শান্তিম্ নির্বান পরমাম্ মত্সংস্থাম্ অধিগচ্ছতি।।১৫
অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।


        যুঞ্জন এবম সদা আত্মনাম্ যোগী নিয়ত মানসঃ
                         শান্তিম্ নির্বান পরমাম্ মত্সংস্থাম্ অধিগচ্ছতি।।১৫
অর্থ-শরির মস্তক গ্রীবাকে সরল রেখে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরুপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যনপুর্বক যোগ অভ্যাষ করবেন।

        যুক্ত আহার বিহারস্য যুক্ত চেষ্টস্য কর্মষু ॥
        যুক্ত স্বপ্নাববোধস্য যোগঃ ভবতী দুঃখহা ॥১৭॥
অর্থ-যিনি পরিমিত আহার বিহার করেন পরিমিত প্রয়াস করেন যার নিদ্রা জাগরন নিয়মিত তিনিই যোগ অভ্যাসের দ্বারা সমস্ত জড় জাগতিক দুঃখের নিবৃত্তি সাধন করতে পারেন।
        যদা বিনিয়তম্ চিত্তম আত্মনি এব অবতিষ্ঠতে ॥
        নিস্পৃহঃ সর্ব কামেভ্যঃ যুক্তঃ ইতি উচ্যতে তদা ॥১৮
অর্থ-যোগী যখন অনুশিলনের দ্বারা  চিত্তবৃত্তির নিরোধ করেন এবংসমস্ত জড় কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মাতে অবস্থান করে তখন তিনি যোগযুক্ত হয়েছে বলা হয়।

        যথা দীপঃ নিবাতস্থঃ ন ইঙ্গতে সেপমা স্মৃতা ॥
        যেগীনঃ যত চিত্তস্য যুঞ্জতঃ যোগম্ আত্মনঃ ॥১৯॥
অর্থ-বায়ু শুন্য স্থানে দীপ শিখা যেমন কম্পিত হয় না চিত্ত-বৃত্তির নিরোধ অভ্যাস কারি যোগীর চিত্তও তেমনই ভাবে অবিচালিত থাকে।

        যত্র উপর মতে চিত্তম্ নিরুদ্ধম্ যোগ সেবয়া ॥
        যত্র চ এব আত্মনা আত্মনম্ পশ্যন আত্মনি তুষ্যতি ॥২০॥


        সুখম্ আত্মন্তিকম্ যত্ তত্ বুদ্ধি গ্রাহ্যম্ অতিন্দ্রিয়ম ॥
        বেত্তি যত্র ন চ এব অয়ম্ স্থিতঃ চলতি তত্ত্বতঃ ॥২১॥

        যম লব্ধা চ অপরম্ লাভম্ মন্যতে ন অধিকম ততঃ ॥
        যস্মিন স্থিতঃ ন দুঃখেন গুরুনা অপি বিচাল্যতে ॥২২॥
        তম্ বিদ্যাত্ দুঃখ সংযোগ বিয়োগম্ যোগ-সংজ্ঞিতম্ ॥২৩॥
অর্থ-যোগ অভ্যাসের ফলে যে অবস্থায় চিত্ত সম্পুর্ন রুপে জড় বিষয় থেকে প্রত্যহৃত হয়,সেই অবস্থাকে যোগ সমাধি বলা হয়।এই অবস্থায় শুদ্ধ অন্তকরন দ্বারা আত্মাকে উপলব্ধি করে যোগী পরম আনন্দ আস্বাদন করে। সেই আনন্দ অবস্থায় অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অপ্রাকৃত সুখ অনুভব হয়। এই পরমার্থিক চেতনায় অবস্থিত বলে যেগী আর আত্মতত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হন না,এবং তখন আর অন্য কিছূ লাভই এর থেকে অধিক বলে মনে হয় না। এই অবস্থায় স্থিত হলে চরম বিপর্যয়েও চিত্ত বিচলিত হয় না।জড় জগতের সংযোগজনিত সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা থেকে এটিই হচ্ছে প্রকৃত মুক্তি।

        সঃ নিশ্চয়েন যোক্তব্যঃ যোগঃ অনির্বিন্ন চেতসা ॥
        সংকল্প প্রভবান কামান ত্যক্তা সর্বান অশেষতঃ ॥
        মনসা এব ইন্দ্রিয় গ্রামম্ বিনিয়ম্য সমন্ততঃ ॥২৪॥
অর্থ-অবিচালিত অধ্যবসায় এবং বিশ্বাষ সহকারে এই যোগ অনুশিলন করা উচিত সংকল্প জাত সমস্ত কামনা সম্পুর্ন রুপে ত্যাগ করে মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সর্বদিক থেকে নিবৃত্ত করা কর্তব্য।
        শনৈঃ শনৈঃ উপরমেত্ বুদ্ধ্যা ধৃতি গৃহীতয়া ॥
        আত্ম-সংস্থম্ মনঃ কৃত্বা ন কিঞ্চিদপি চিন্তয়েত্ ॥২৫॥
অর্থ-ধৈর্যযুক্ত বুদ্ধি দ্বারা মনকে ধীরে ধীরে নিবৃত্ত করে এবং কিছু চিন্তা না করে সমাধিস্থ হতে হয়।
        যতঃ যতঃ নিশ্চলতি মনঃ চঞ্চলম্ অস্থিরম্ ॥
        ততঃ ততঃ নিয়ম্য এতত্ আত্মনি এব বশম্ নয়েত্ ॥২৬॥
অর্থ-যোগী তার চঞ্চল ও অস্থির মন যে বিষয় ধাবিত হয় সেই সেই বিষয়ে থেকে নিবৃত্ত করে আত্মাতে স্থির করবেন।

        প্রশান্ত মনসম হি এনম্ যোগিনম্ সুখম্ উত্তমম্ ॥
        উপৈতি শান্ত রজসম্ ব্রহ্মভূতম্ অকল্মসম্ ॥২৭॥
অর্থ-ব্রহ্মভূত অবস্থায় প্রশান্ত চিত্ত,রজ বৃত্তি রহিত এবং নিস্পাপ হয়ে যার মন আমাতে নিবিষ্ট হয়েছে তিনিই পরম সুখ প্রাপ্ত হয়।

        যুঞ্জন এবম্ সদা আত্মানম্  যোগী বিগত কল্মষঃ ॥
        সুখেন ব্রহ্ম সংস্পর্শম অত্যন্তম সুখম অশ্নুতে ॥২৮॥
অর্থ-এইভাবে আত্মসংযমী যোগী জড় জগতে সমস্থ কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্ম সংস্পর্শরুপ পরম সুখ আস্বাদনকরেন।


        সর্ব ভূতস্থম্ আত্মানম সর্ব ভুতানি চ আত্মনি ॥
        ঈক্ষতে যোগ যুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥২৯॥
অর্থ-প্রকৃত যোগী সর্বভূতে আমাকে দর্শন করে এবং আমাতে সব কিছু দর্শন করেন।যোগযুক্ত আত্মা সর্বত্রই আমাকেই দর্শন করেন।

        যঃ মাম্ পশ্যতি সর্বত্র সর্বম্ চ ময়ি পশ্যতি ॥
        তস্য অহম্ ন প্রনশ্যামি সঃ ট মে ন প্রনশ্যতি ॥৩০॥
অর্থ-যিনি সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতেই সমস্ত কিছু বস্তু দর্শন করেন আমি কখনো তার দৃষ্টির অগোচর হই না এবং তিনি ও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না।

        সর্বভূত স্থীতম্ যঃ মাম ভজতী একত্তম্ আস্থিতঃ ॥
        সর্বথা বর্ত্তমানঃ অপি সঃ যোগী ময়ি বর্ততে ॥৩১॥
অর্থ-যে যোগী সর্বভূতে সংস্থাপিত পরমত্মারুপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন তিনি সর্ব অবস্থাতেই আমাতেই অবস্থান করেন।

        আত্ম ঔপম্যেন সর্বত্র সমম্ পশ্যতি যঃ অর্জুন ॥
        সুখম্ বা যদি বা দুঃখম্ সঃ যোগী পরমঃ মতঃ ॥৩২॥

অর্থ-হে অর্জুন যিনি সমস্থ জীবের সুখ ও দুঃখকে নিজের সুখ-দুঃখ বলে মনে করেন আমার মতে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী।
                         অর্জুন উবাচ
        যঃ অয়ম্ যোগঃ তয়া প্রোক্তঃ সাম্যেন মধুসুদন ॥
        এতস্য অহম্ ন পশ্যামি চঞ্চলত্বাত্ স্থিতিম্ স্থিরাম্ ॥৩৩॥
অর্থ-অর্জুন বললেন-হে মধুসুদন তুমি যে যোগ উপদেশ করলে, আমার মনের চঞ্চল স্বভাব বসত আমি তা সত্ত্বেও নিশ্চল স্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।


        চঞ্চলম হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবত্ দৃঢ়ম্ ॥
        তস্য অহম্ নিগ্রহম্ মন্যে বায়ো ইব সুদুস্করম ॥৩৪॥
অর্থ-হে কৃষ্ণ মন অত্যন্ত চঞ্চল প্রবল এবং শরির ও ইন্দ্রিয়াদি বিক্ষেপ উত্পাদক তাকে বিষয় বাসনা থেকে নিবৃত্ত করা অত্যন্ত কঠিন তাই এই মনকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভুত করার থেকেও কঠিন বলে আমি মনে করি

                   ভগবান উবাচ
        অসংশয়ম্ মহাবাহো মনঃ দুর্নিগ্রহম্ চলম্ ॥
        অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেন চ গৃহ্যতে ॥৩৫॥
অর্থ-ভগবান বললেন-হে মহাবাহো মন যে দুর্বার ও চঞ্চল ততে কোন সন্দেহ নাই।কিন্তু হে কৌন্তেয় ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভুত করা যায়।

        অসংযত আত্মনা যোগঃ দুসপ্রাপ্যঃ ইতি মে মতিঃ ॥
        বশ্য আত্মনা তু যততা শক্যঃ অবাপ্তুম্ উপায়ত ॥৩৬॥
অর্থ-অসংযত ব্যাক্তির পক্ষে আত্মোউপলব্ধি দুসপ্রাপ্যঃ কিন্তু যার মন সংযত এবং যিনি যথার্থ উপায় অবলম্বন করে মনকে বশ করতে চেষ্টা করেন তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করে।
                       অর্জন ঊবাচ
        অযতিঃ শ্রদ্ধয়া উপেতঃ যোগাত্ চলিত মনসঃ ॥
        অপ্রাপ্য যোগ সংসিদ্ধিম্ কাম্ গতিম্ কৃষ্ণ গচ্ছতি ॥৩৭॥
অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে কৃষ্ণ শ্রদ্ধাবান সম্যক যত্নহীন যোগচ্যুত যোগী যোগে সিদ্ধি লাভ না করলে কোন মার্গে গমন করেন।

        কচ্চিত্ ন উভয় বিভ্রষ্টঃ ছিন্ন অভ্রম্ ইব নশ্যতি ॥
        অপ্রতিষ্ঠঃ মহাবাহো বিমূঢ় ব্রাহ্মনঃ পথি ॥৩৮॥
অথর্- হে মহাবাহো কৃষ্ণ ব্রহ্ম লাভের পথ থেকে বিমূঢ় হয়ে অপ্রতিষ্ঠ হয়ে পড়ে যে ব্যক্তি, সে কি ছিন্ন মেঘের মত একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।


        এতত্ মে সংশয়ম্ কৃষ্ণ ছেত্তুম্ অর্হসি অশেষতঃ ॥
        ত্বত্ অন্যঃ সংসয়স্য তস্য ছেত্তা ন হি উপপদ্যতে ॥৩৯॥
অর্থ-হে কৃষ্ণ তুমিই কেবল আমার এই সংসয় দুর করতে সমর্থ। কারন তুমি ছারা আর কেউ এই সংসয় দুর করতে পারবে না।
                       ভগবান উবাচ
        পার্থ নৈব ইহ ন অমুত্র বিনাশ তস্য বিদ্যতে ॥
        ন হি কল্যান কৃত্ কশ্চিত্ দুর্গতিম্ তাত গচ্ছতি ॥৪০॥
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ শূভানুষ্ঠানকারি পরমার্থবিদের ইহলোক এবং পরলোকে কোন দুর্গতি হয় না,হে বৎস্য তার কারন কল্যান কারির কখনো অধঃগতী হয় না।

        প্রাপ্য পুন্যকৃতম্ লোকান উষিত্বা শাশ্বতীঃ সমাঃ ॥
        শুচিনাম্ শ্রীমতাম্ গেহে যোগভ্রষ্টঃ অভিজায়তে ॥৪১॥
অর্থ-যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুন্যবানদের প্রাপ্য সর্গাদি লোক সকলে বহুকাল বাস করে সদাচারি গৃহে অথবা ধনীলোকদের গৃহে জন্ম গ্রহন করেন।

        অথবা যোগীনাম্ এব কুলে ভবতী ধীমতাম্ ॥
        এতত্ হি দুর্লভতরম্ লোকে জন্ম যত্ ঈদৃশম্ ॥৪২॥
অর্থ-অথবা যোগভ্রষ্ট পুরুষ জ্ঞানবান যোগীগনের বংশে জন্মগ্রহন করেন।এই প্রকার  জন্ম এই জগতে অবশ্য অত্যন্তই দুর্লভ।

        অত্র তম বুদ্ধি সংযোগম লভতে পৌর্বদেহিকম্ ॥
        যততে চ ততঃ ভূয়  সংসিদ্ধৌ কুরুনন্দন ॥৪৩॥
অর্থ-হে কুরুনন্দন সেই প্রকার জন্মগ্রহন করার ফলে তিনি পুনরায় তার পুর্বজন্মকৃত পারমার্থিক চেতনায় বুদ্ধি সংযোগ লাভকরে সিদ্ধি লাভের জন্য পুনরায় যত্নবান হন।

        পুর্ব অভ্যাসেন তেন এব হ্রিয়তে হি অবশঃ অপি সঃ ॥
        জিজ্ঞাসুঃ অপি যোগস্য শব্দব্রহ্ম অতিবর্ততে ॥৪৪॥
অর্থ-তিনি পুর্ব জন্মের অভ্যাস বশে যেন অবশ হয়েও যোগ সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্র জিজ্ঞাসু পুরুষ যোগ অনুশিলন করার সময়ই বেদোক্ত সকাম কর্ম মার্গকে অতিক্রম করেন,অর্থাত্ সকাম কর্ম মার্গে যে ফল নিদৃষ্ট আছে, তার থেকে উত্কৃষ্ট লাভ করেন।

        প্রযত্নাত্ যতমানঃ তু যোগী সংশুদ্ধ কিল্বিষঃ ॥
        অনেক জন্ম সংসিদ্ধঃ ততঃ যাতি পরাম্ গতিম্ ॥৪৫॥
অর্থ-যোগী ইহ জন্মে পুর্বজন্মকৃত যত্ন অপেক্ষা অধিকতর যত্নকরে পাপ মুক্তহয়, পুর্ব জন্মের সাধন সঞ্চিত সংস্কার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করে পরম গতী লাভ করেন।

        তপস্বিভ্যঃ অধিকঃ যোগী জ্ঞানিভ্যঃ অপি মতঃ অধিকঃ ॥
        কর্মিভ্যঃ চ অধিকঃ যোগী তস্মাত্ যোগী  ভব অর্জুন ॥৪৬॥
      অর্থ-যোগী তপস্বীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং সকাম কর্মিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ অতএব হে অর্জুন সর্ব অবস্থাতেই তুমি যোগী হও।

        যোগীনাম অপি সর্বেষাম মদ্গতেন অন্তরাত্মনা ॥
         শ্রদ্ধাবান ভজতে যঃ মাম সঃ মে যুক্ততমঃ মতঃ ॥৪৭॥
অর্থ-যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন,তিনিই সব চেয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে আমার সঙ্গেযুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের খেকে শ্রেষ্ঠ।