সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

চতুর্দশ অধ্যায়



চতুর্দশ অধ্যায়
গুনত্রয় বিভাগ যোগ।
ভগবান উবাচ
                     পরম ভূয় প্রবক্ষামি জ্ঞানানাম ‌জ্ঞানম্ উত্তমম।
                     যত্ জ্ঞাত্বা মুনয়ঃ সর্বে পরাম সিদ্ধিম ইতঃ গতাঃ।।১
অর্থ-ভগবান বললেন-আমি পুনরায় তোমাকে সমস্ত জ্ঞানের মধ্যে সর্বতম জ্ঞান সম্বন্ধেই বলব, যা লাভ করে, মুনিগন পরা সিদ্ধিরূপা ভক্তি লাভ করে ছিলেন।

                    ইদম জ্ঞানম উপাশ্রিত্য মম সাধর্ম্যম আগতাঃ ।
                    সর্গে অপি ন উপজায়ন্তে প্রলয়ে ন ব্যথন্তি চ ।।২
অর্থ-সেই জ্ঞান আশ্রয় করলে আমার পরা প্রকৃতি, চিন্ময় জগত্ লাভকরে। তখন আর সৃষ্ঠির সময় জড়
জগতে জন্মগ্রহন করে না এবং প্রলয়ে আত্মবিনাশ রুপ ব্রাথা পায় না।
                                                                                                                                              
                    মম যোনিঃ মহত্ ব্রহ্ম তস্মিন গর্ভম দধামি অহম্‌।
                    সম্ভবঃ সর্বভূতানাম্‌ ততঃ ভবতি ভারত ।।৩
অর্থ-হে ভরত প্রকৃতি সংজ্ঞক ব্রহ্ম এই জড় জগতের উত্পত্তির কারন, এবং সেই ব্রহ্মে আমি গর্ভদান
করি ফলে সর্বভূতের সৃষ্ঠি হয়ে।
                    সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মুর্তয়  সম্ভবন্তি যাঃ ।
                    তাসাম্‌ ব্রহ্ম মহত্ যোনিঃ অহম জীবপ্রদ পিতা ।।৪
 অর্থ-হে কৌন্তেয়  সমস্ত যোনিতে যত মুর্তি প্রকাশিত হয় ব্রহ্মরুপ যোনিই তাদের জননী স্বরুপা এবং
আমি তাদের বীজ প্রদানকারি পিতা।
                    সত্তম রজ তমঃ ইতি গুনা প্রকৃতি সম্ভবাঃ ।
                    নিবধ্‌নন্তি মহাবাহো দেহে দেহিনম অব্যয়ম ।।৫
অর্থ-হে মহাবাহো জড় প্রকৃতি থেকে সতঃ, রজঃ ,তমঃ এই তিনটি গুনের প্রকাশ হয়। জীব যখন জড়া
প্রকৃতির সংর্স্পেশে আসে তখন সে তিনটি গুনের দ্বারা আবদ্ধ হয়।



                     তত্র সত্তম নির্ম্মলত্বাত্ প্রকাশকম অনাময়ম ।
                    সুখে সঙ্গেঁন বধ্‌নতি জ্ঞান সঙ্গেন চ অনঘ ।।৬ 
অর্থ-হে নিস্পাপ;এই তিনটি গুনের মধ্যে সত্ত্বগুন অপেক্ষাকৃত নির্ম্মল, প্রকাশক এবং পাপশুন্য। এই সত্ত্বগুন আমি সুখি এই প্রকার  সুখাশক্তি এবং আমি জ্ঞানি এই প্রকার জ্ঞানা শক্তি দ্বারা আমাকে আবদ্ধ করে।


                    
                    রজঃ রাগাত্মকম্‌ বিদ্ধি তৃষ্ণা সঙ্গ সমুদ্ভবম্‌ ।                                                                
                    তত্নিবধ্‌নাতি কৌন্তেয় কর্মসঙ্গেন দেহিনম ।।৭
অর্থ-হে কৌন্তেয়, অন্তহীন কামনা বাসনা থেকে রজগুণের উত্পত্তি হয় এবং রজগুনেই জীবকে সকাম
কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ করে।
্‌                    তমঃ তু অজ্ঞানজম্‌ বিদ্ধি মোহনম্‌ সর্বদেহীনম ।
                    প্রমাদ আলস্য নিদ্‌্রাভিঃ তত্ নিবধ্‌নাতি ভারত ।।৮
অর্থ-হে ভারত তমগুন জীবের ভ্রান্তি উত্পাদন করে। প্রমাদ, আলস্য ও নিদ্রার দ্বারা তমঃগুন জীবকে আবদ্ধ করে।
                     সত্তম সুখে সঞ্জয়তি রজঃ কর্মানি ভারত ।
                     জ্ঞানম আবৃত্য তু তমঃ প্রমাদে সঞ্জয়তি ।।৯
অর্থ-সত্ত্বগুন জীবকে সুখের বন্ধনে আবদ্ধ কওে,  রজগুন জীবকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ কওে, এবং
তমগুন প্রমাদের বন্ধনে আবদ্ব করে।
                                                                                                          
                     রজঃ তমঃ চ অভিভুয় সত্তম ভবতী ভারত ।
                     রজঃ সত্ত্বম তমঃ চ এব তমঃ সত্ত্বম রজঃ তথা ।।১০
 অর্থ-সত্ত্বগুন যখন প্রবল হয় তখন রজঃ ও তমঃগুন পরাজিত হয়। রজঃগুন যখন প্রবল হয় সত্ত্ব ও তমঃগুন পরাজিত হয়,এবং তমঃগুন যখন প্রবল হয় তখন সত্ত্ব ও রজঃগুন পরাজিত হয় এই ভাবে প্রকৃতির তিনটিগুনের মধ্যে সর্বদা আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা হয়।

                           সর্বদ্বারেষু দেহে অস্মিন প্রকাশঃ উপজায়তে ।
                     জ্ঞানম যদা তদা বিদ্যাত্ বিবৃদ্ধম্‌ সত্ত্ব্‌ ইতি উত  ।।১১
অর্থ-জ্ঞানের আলোকে জড়দেহের ইদ্রিয় রুপ দ্বারগুলিতে সত্ত্বঃ  গুনের প্রকাশ অনুভুতি হয়।

                     লাভঃ প্রবৃত্তিঃ আরম্ভঃ কর্মনাম অশমঃ স্পৃহা ।
                     রজসী এতানি জায়ন্তে বিবৃদ্ধে ভরতর্ষভ ।।১২
অর্থ-হে ভরত শ্‌্েরষ্ঠ রজঃগুনের প্রবল বর্ধিত হলে লোভ, কর্মে প্রবৃত্তি, উদ্যম, ও বিষয় ভোগের স্পৃহা বৃদ্ধি পায় ।
                     অপ্রকাশঃ অপ্রবৃত্তিঃ চ প্রমাদঃ মোহঃ এব চ ।
                     তমসি এতানি যায়ন্তে বিবৃদ্ধে কুরুনন্দন ।।১৩
অর্থ-তমঃ গুনের প্রভাব বর্ধিত হলে, অপ্সানান্ধকার, প্রমাদ, মোহ উত্পন্ন হয়।

                     যদা সত্তে প্রবৃদ্ধে তু প্রলয়ম্‌ যাতি দেহভূত্ ।
                     তদা উত্তমবিদাম্‌ লোকান অমলান প্রতিপদ্যতে ।।১৪
                           
অর্থ-সত্ত্বগুন সম্পন্ন ব্যাক্তির দেহ ত্যাগ হইলে নির্ম্মল উচ্চতর লোক প্রাপ্ত হয়।

                    রজসি প্রলয়ম গত্বা কর্মসঙ্গিষু জায়তে ।
                     তথা প্রলীনঃ তমসি মূঢ় যোনিষু জায়তে ।।১৫
অর্থ-রজোগুণসম্পন্ন ব্যাক্তির মৃত্যু হলে কর্মাসক্ত মনুষ্যকুলে জন্ম হয়; এবং তমোগুণে আবিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হলে পশুযোনিতে জন্ম হয়।

                   কর্মণঃ সুকৃতস্য  আহুঃ সাত্তিকম্‌ নির্মলম্‌ ফলম্‌ ।
                   রজসঃ তু ফলম্‌ দুঃখ্যম্‌  অজ্ঞানম্‌ তমসঃ ফল্‌ ।।১৬
  অর্থ-সার্থিক কর্মের ফলে জীব পবিত্র হয়। রাজসিক কর্মের ফলে দুঃখভোগ হয় এবং তামসিক কর্মের ফলে অজ্ঞান অচেতনত্ব লাভ হয়।

                 সত্ত্বাত্ সংজায়তে জ্ঞানম্‌ রজসঃ লোভঃ এব চ  ।
                 প্রমাদ মোহৌ তমসঃ ভবতঃ অপ্সানম এব চ ।।১৭
অর্খ-সত্ত্বগুন থেকে প্রকৃত জ্ঞান, রজগুন থেকে লোভ এবং তমগুন থেকে অজ্ঞান প্রমাদ ও মোহ উত্পন্ন হয়।
                  উর্ধ্বম গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ ।
                  জঘন্য গুণ বৃত্তিস্থা অধঃ গচ্ছন্তি তামসাঃ ।।১৮
অর্থ-সত্ত্বগুনস্থ ব্যক্তিগন উধ্বর্ গতী লাভ করেন অর্থাত্ উচ্চতর লোকে গমন করেন;রাজসিক ব্যক্তিগন নর লোকে অবস্থান করেন; এবং তামসিক ব্যক্তিগন অধঃ পাতিত হয়ে নর লোকে গমন করেন।

                       ন অন্যম গুনেভ্যঃ কর্তারম যদা দ্রষ্টা অনুপশ্যতি ।
                  গুনেভ্যঃ চ পরম বেত্তি মদ্ভাবম্‌ সঃ অধিগচ্ছতি ।।১৯

অর্থ-জীব যখন অনুভব করেন যে প্রকৃতির গুন ব্যথিত কর্মে অন্য কোন কর্তা নেই এবং পনমেশ্বর ভগবান
এই সমস্ত গুনের অতিত তখন  তিনি আমার পরা প্রকৃতি জানতে পারেন।

                 গুনান এতান অতীত্য ত্রীন দেহী  দেহ সমুদ্ভভবম ।
                 জন্ম মৃত্যু জরাঃ দুখৈঃ বিমুক্তঃ অমৃতম্‌ অশ্নুতে ।।২০
 অর্থ-দেহ ধারী জীব যখন প্রকৃতির তিন গুন অতিক্রম করে জন্ম,  জরারুপ দুঃখ বিমুক্ত হন, তখন তিনি
ইহ জীবনেই অমৃত তত্ত আস্বাদন করেন। 
                                  অর্জুন উবাচ
                 কৈঃ লিঙ্গৈঃ ত্রীগুনান এতান অতীতঃ ভবতী প্রভো ।
                 কিম্‌ আচার কথম চ এতান ত্রীন গুনান অতিবর্ততে ।।২১
অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করিলেন হে প্রভু যিনি প্রকৃতির তিনটি গুনের অতীত হন তার লক্ষন কি? আর আচারন  কিরকম  এবং তিনি কিভাবে প্রকৃতির গুনত্রয় অতিক্রম করে।
                                 ভগবান উবাচ
                 প্রকাশম চ প্রবৃত্তিম চ মোহম্‌ এব চ পান্ডব ।
                 ন দেষ্টি সংপ্রবৃত্তানি ন নিবৃত্তানি কাঙ্খতি ।।২২
     
                 উদাসীন বদ আসীনঃ গুনৈ যঃ ন বিচাল্যতে।
                 গুনা বর্তন্তে ইতি এবম যঃ অবতিষ্ঠতি ন ইঙ্গতে ।।২৩


                 সম দুঃখ সুখঃ স্বস্থঃ সম লোষ্ট্র অশ্ম কাষ্ণনঃ ।
                 তুল্য প্রিয়ঃ অপ্রিয় ধীর তুল্য নিন্দা আত্ম সংস্তুতিঃ ।।২৪

                 মান অপোমানয়ো তুল্যঃ তুল্যঃ মিত্র অরি পক্ষয়োঃ।
                 সর্ব আরম্ভ পরিত্যাগী গুনাতিতঃ সঃ উচ্যতে ।।২৫
অর্থ-ভগবান বলিলেন -প্রকাশ প্রবৃত্তি ও মোহ আবির্ভুত হলে যিনি দ্বেষ করেন ন,া এবং তাদের নিবৃত্তি  ও আকাঙ্খা করে না, তিনিই গুনাতিত, উদাসিনের মত অবসি'ত থেকে যিনি গুনের দ্বারা বিচলিত হন না,
যিনি সুখ, দুঃখ, মাটির ঢেলা,  পাথও, সোনা, প্রিয়, অপ্রিয়, নিন্দাস্তুতি ইত্যাদির প্রতি সমদৃষ্টিসম্পন্ন এবং আত্মস্বরুপে অবস্থিত হয়ে তাদের তুল্য জ্ঞান করেন,যিনি সন্মান এবং অপমানে নির্বিকার, শত্রু ও মিত্রের প্রতি পক্ষ্যপাত শুন্য,যিনি ফলভোগের উদ্দেশ্যে কর্ম না করেও , কেবল ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের জন্য কর্ম করেন তিনি গুনাতিত।     

                    মাম্‌ চ যঃ অভ্যভিচারেণ ভক্তি যোগেন সেবতে।
                    সঃ গুণান সমতিত্য এতান ব্রহ্মভুয়ায় কল্পতে ।।২৬
 অর্থ-যিনি ঐকান্তিক ভক্তিসহকারে আমার সেবা করেন, এবং যিনি কোন অবস'াতে অধঃপাতিত হন না,
তিনিই প্রকৃতির  সমস্ত গুন অতিক্রম করে ব্রহ্মভুত অবস্থায় উন্নিত হয়েছেন।
                                
                    ব্রহ্মণঃ হি প্রতিষ্ঠ অহম্‌ অমৃতস্য অব্যয়স্য চ ।
                    শাশ্বতস্য চ ধর্মস্য সুখস্য ঐকান্তিকস্য চ ।।২৭
অর্থ-অমিই নির্বিশেষ ব্যহ্মের প্রতিষ্ঠা বা আশ্রয়। অমৃতত্ত, অব্যয়ত্ব, নিতত্ত্ব্‌, নিত্য ধর্ম এবং ঐকান্তিক সুখের আশ্রয় আমিই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন